সিরাজগঞ্জে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা
বছর ঘুরে আবার আসছে দুর্গতিনাশিনী দুর্গা! চলতি মাসেই উদযাপিত হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মানুষ্ঠান দুর্গাপূজা। দেবীর আগমন উপলক্ষে প্রতিমায় তুলির শেষ আঁচড় দিতে ব্যস্ত সিরাজগঞ্জের প্রতিমাশিল্পীরা।
সময় যত ঘনিয়ে আসছে, শিল্পীদের ব্যস্ততা ততই বাড়ছে। প্রতিমা ছাড়াও মন্দির সাজসজ্জার কাজেও এ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁরা। সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট পালবাড়িগুলো ঘুরে দেখা যায়, কাদামাটি আর রংতুলি নিয়ে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততায় ডুবে আছে সবাই। জোরেশোরে চলছে দুর্গার প্রতিমা তৈরির কাজ।
সিরাজগঞ্জের বেশিরভাগ এলাকার পূজামণ্ডপই সেজে ওঠে ভদ্রঘাটের পালবাড়ির বানানো প্রতিমায়। সে জন্য নরম কাদামাটির শৈল্পিক ছোঁয়ায় তিলে তিলে গড়ে তোলা দুর্গার প্রতিমায় ভরে উঠেছে পালপাড়ার প্রায় প্রতিটি বাড়ি।
প্রতিমাশিল্পী রতন পাল জানান, বংশপরম্পরায় এ পেশায় এসেছেন তিনি। তাঁর বাবা প্রতিমা বানাতেন, ফলে ছোটবেলা থেকেই এসব দেখে তাঁর বেড়ে ওঠা। প্রতিমা বানাবার নেশায় পড়াশোনায় মন বসাতে পারেননি তিনি। ১০ বছর বয়সেই বাবার কাছে দীক্ষা নেন প্রতিমা বানানোর এ কাজে।
রতন জানান, তাঁর কাছে বিভিন্ন রকমের প্রতিমার ক্যাটালগ আছে। সে অনুসারেই পূজার অন্তত দুমাস আগে থেকে প্রতিমা তৈরি শুরু করেন তিনি। পূজায় তাঁর তৈরি একেকটি প্রতিমা ১৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা দামে বিক্রি হবে বলে জানান তিনি।
প্রতিমা কারিগর বাদল পাল জানান, বর্তমানে প্রতিমা তৈরির উপকরণগুলোর দাম বেশি হওয়ায় খুব একটা লাভ হয় না। তারপরও পূর্বপুরুষের পেশা হিসেবে তাঁরা প্রতিমা তৈরি করেন।
আরেক কারিগর গণেশ পাল জানান, তিন মাস আগে থেকে অর্ডার অনুযায়ী প্রতিমা বানানো শুরু করেছেন তিনি। এখনো অনেকেই আসছেন, কিন্তু নতুন করে আর অর্ডার নেওয়া হচ্ছে না। প্রতিমা গড়ার কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। খুব শিগগির শুরু হবে প্রতিমায় রং লাগানোর কাজ।
এদিকে এর মাঝেই সিরাজগঞ্জ শহরের মহাপ্রভুর আখড়া, কালীবাড়ী গোবিন্দ মন্দির, স্টেশনরোড কালীমাতা মন্দির, মাড়োয়ারীপট্টি মন্দির, বানিয়াপট্টি কালীমাতা মন্দির, ফড়িয়াপট্টি কালীমাতা মন্দির, গোশালা কালীমাতা মন্দির, বাহিরগোলা কালীমাতা মন্দির প্রাঙ্গণসহ সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার প্রায় শতাধিক পূজামণ্ডপ দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, মহিষাসুর আর দুর্গার বাহন সিংহের প্রতিমায় সজ্জিত হতে শুরু করেছে।
এ বছর জেলার সদর উপজেলা, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, কাজীপুর, চৌহালী-এনায়েতপুর, কামারখন্দ, বেলকুচি, রায়গঞ্জ, তাড়াশ উপজেলা মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক পূজামণ্ডপ তৈরি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুকান্ত সেন জানান, সুন্দর ও উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা আয়োজনের জন্য এরই মধ্যে পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এ উৎসব উদযাপনকে কেন্দ্র করে মণ্ডপগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা ও অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় মতবিনিময় চলছে বলেও জানান সুকান্ত।
কারিগরদের পাশাপাশি দুর্গাপূজার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দাউদ বলেন, ‘আশা করছি, প্রতিবছরের মতো এবারও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে সিরাজগঞ্জে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গোৎসব উদযাপিত হবে।’
চলতি মাসের ১৪ অক্টোবর দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব। ১৫ অক্টোবর আমন্ত্রণ ও অধিবাস, ১৬ অক্টোবর দেবীর সপ্তমীবিহিত, ১৭ অক্টোবর দেবীর মহাঅষ্টমীবিহিত, কুমারী পূজা, সন্ধি পূজা, ১৮ অক্টোবর দেবীর নবমীবিহিত ও ১৯ অক্টোবর মহাদশমীতে বিহিত পূজা, সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন এবং সন্ধ্যা আরত্রিকের পর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুর্গোৎসব।