প্রবীণ দিবসে শৈশবের স্মৃতিচারণ, সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি
বৃদ্ধ বয়সে পরনির্ভরতা আর একাকিত্বে মানুষ হয়ে পড়ে অসহায়। অসহায়ত্বের কথা বলার মতো কেউও থাকে না এ সময়টাতে। চারদিকের সবাই প্রচণ্ড রকম ব্যস্ত, কেবল তাদের হাতেই অজস্র সময়।
আজ সোমবার বিশ্ব প্রবীণ দিবস। দিনটিকে একটু ব্যতিক্রমী উপায়ে পালন করেছেন পাবনার বেড়া উপজেলার প্রবীণরা। আজ এমন সব কাজ তাঁরা করলেন, যেনো সারা বিশ্বের মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছে দিতে চাচ্ছেন যে, ‘আমাদের কথা শোনো, সময় দাও’।
‘প্রবীণের অধিকার টেকসই উন্নয়ন’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে প্রবীণ নারী-পুরুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আজ বেড়ায় বিশ্ব প্রবীণ দিবস উদযাপিত হয়েছে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্যোগে বেড়া উপজেলার কাশীনাথপুরে দিনব্যাপী ব্যতিক্রমী নানা আয়োজনে প্রবীণ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
বেড়া উপজেলার শিবপুর গ্রামের গোলাম রব্বানী (৮৫), দাঁতিয়া গ্রামের আবুল কাশেম (৬৫), নয়াবাড়ি গ্রামের আবদুস শুকুর (৬৯), শিবপুর গ্রামের মনোয়ারা (৬৭) ও বুলি খাতুন (৭২), নাটিয়াবাড়ি গ্রামের রোমেলা বেগমের (৬০) মতো পাঁচ শতাধিক প্রবীণ সোমবার সকাল থেকেই এসে মিলিত হন পাবনার কাশীনাথপুরে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে।
স্মৃতিচারণ, গল্প, গান, আড্ডায়, হাসি-ঠাট্টায়, খেলায় মেতে ওঠেন তাঁরা। তাঁদের আটপৌঁড়ে জীবনে যা কখনো হয়ে ওঠে না। এ আনন্দে যেন বয়সই কমে যায় তাঁদের। বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা ফিরে যান তাঁদের যৌবনে, কৈশোরে। এ বয়সে ঘর থেকে বেরই হন না অনেকে। তাঁরা পরিচিতজনকে কাছে পেয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন। কেউ কেউ আবেগাপ্লুত হয়ে যান।
দৈনন্দিন জীবন সম্পর্কে কেউ কেউ হতাশার কথা জানান। যারা স্বামী বা স্ত্রী হারিয়েছেন। অনেকে বলেন, দুঃখ লুকিয়ে হলেও নিজে এবং সবাইকে হাসি খুশি রাখতে চাই।
বিশ্ব প্রবীণ দিবস উপলক্ষে আজ সোমবার সকালে প্রবীণদের একটি বর্ণাঢ্য র্যালি পাবনার কাশীনাথপুরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। ছবি : এনটিভি
সকালে প্রবীণদের একটি বর্ণাঢ্য র্যালি কাশীনাথপুরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এরপর আলোচনা সভা, প্রবীণদের খেলাধুলা, পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র কাশীনাথপুর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজু।
শিবপুর প্রবীণ উন্নয়ন ক্লাবের সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক গোলাম মোস্তফা দুলাল, পাবনা জেলা পরিষদের সদস্য আমজাদ হোসেন, জাতসাখিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল হক বাবু, ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হেলাল উদ্দীন, আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ওবায়েদ প্রমুখ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রোগ্রাম অফিসার নজরুল ইসলাম।
সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজু প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, প্রবীণজনেরা বোঝা নয়, দেশের সম্পদ। তাদের যত্ন দিয়ে, আদর দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখতে হবে। সরকার প্রবীণদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা খাতের আওতায় নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এতে অসহায় প্রবীণদের দুঃখ বহুলাংশে দুর হয়েছে।
মেলায় এসে শিবপুর গ্রামের গোলাম রব্বানী (৮৫) বলেন, এই বয়সে আবার বন্ধুদের সঙ্গে মিলে যেন আবার শিশুকাল ফিরে পেলাম। গল্প-আড্ডা সবই করলাম। আবার খেলায়ও অংশ নিলাম।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রোগ্রাম অফিসার নজরুল ইসলাম জানান, প্রবীণদের সুরক্ষা এবং অধিকার নিশ্চিতের পাশাপাশি বার্ধক্যের বিষয়ে বিশ্বব্যাপী গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৯১ সাল থেকে এ দিবসটি পালন করা শুরু হয়। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতি বছরই দিবসটি পালন করে থাকে। এ বছরও বেড়া ও সুজানগর উপজেলার পাঁচ শতধিক প্রবীণ মিলন মেলায় হাজির হন। তাঁরা জীবনের সুখ-দুঃখের গল্প নিয়ে মেতে ওঠেন।