‘আর ছবি তুলব না’, সবচেয়ে লম্বা মানুষের আক্ষেপ
‘ভাই এখন আর আমি কোনো ছবি তুলব না। আমি দাঁড়াব না, কোনো ছবি তুলব না। আমাকে অনুরোধ করলেও ছবি তুলব না। জীবনে অনেক ছবি তুলেছি, আর না।’ এভাবেই আক্ষেপ ঝরে পড়েছে বর্তমানে বিশ্বের সম্ভাব্য সবচেয়ে লম্বা মানুষটির কণ্ঠে।
আজ শনিবার কথা হয় কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়ার বড়বিল গ্রামের আমির হামজা ও শাহপুরি বেগমের সন্তান জিন্নাত আলীর সঙ্গে।
এখন জিন্নাত আলীর বয়স ২২ বছর। উচ্চতা ৮ ফুট ৫ ইঞ্চি। গিনেস বুক ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা জীবিত মানুষ তুরস্কের সুলতান কোসেন। তাঁর উচ্চতা ৮ ফুট ২ দশমিক ৮ ইঞ্চি। কিন্তু উচ্চতা অনুযায়ী সবচেয়ে লম্বা মানুষ হওয়ার কথা জিন্নাত আলীরই।
জানা যায়, ১১ বছর আগে হঠাৎ করে জিন্নাতের শরীরে অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া শুরু হয়। অতিরিক্ত লম্বা হওয়ার কারণে তেমন কোনো কাজ করতে পারেন না তিনি। অনেকে তাঁকে কাজে নিতে চান না। আর নানা জায়গায় পড়তে হয় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে।
জিন্নাত আক্ষেপ করে জানান, তাঁকে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে অনেকে বহুবার ছবি তুলেছেন। ছবি তোলার সময় তাঁকে বলা হয়েছিল , তাঁর দায়িত্ব যেন সরকার নেয় সেই ব্যবস্থা করা হবে। তাঁকে প্রতিমাসে আর্থিক সাহায্য করা হবে, তাঁর চিকিৎসা করা হবে, সমাজসেবার মাধ্যমে নিয়মিত প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। এভাবে অনেকে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছবি তুললেও আজ পর্যন্ত কেউ কথা রাখেননি। ফলে এখন কারো প্রতিশ্রুতির প্রতিই বিশ্বাস নেই তাঁর। তাই ছবি তুলতে চান না তিনি।
জিন্নাত আলীর বাবা আমির হামজা পাহাড় থেকে বাঁশ কেটে সংসার চালাতেন। এখন তিনি অক্ষম হয়ে পড়েছেন। সংসার চালানোর ভার পড়েছে তাঁর বড় ভাই দিনমজুর ইলিয়াছের ওপর। কিন্তু ইলিয়াছের স্ত্রী সন্তান রয়েছে। তাঁর পক্ষে মা, বাবা, ভাই ও নিজের পরিবারের সংসার চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
এদিকে, জিন্নাত আলীর প্রতিবেলায় খাবার লাগে এক কেজির ওপর। তাঁর মাপ অনুযায়ী বাজারে পোশাক না থাকায়, অতিরিক্ত খরচ দিয়ে তৈরি করতে হয় পোশাক। এই অবস্থায় দিনমজুর ভাই ইলিয়াছ আলীও অসহায় হয়ে পড়েছেন। তাই, তিনি সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও হৃদয়বান ব্যক্তিদের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
বর্তমানে জিন্নাত আলী অসুস্থ হয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাঁর পায়ের গোড়ালিতে সমস্যা রয়েছে। চিকিৎসার খরচ মেটাতে ঘরে থাকা ছাগলটি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এখন ছাগল বিক্রির সেই টাকাও খরচ হয়ে গেছে। চিকিৎসাসহ অন্য খরচ বহন করতে পারছেন না তাঁর ভাই।
জিন্নাত আলী চান স্বাভাবিক মানুষের মতো কাজ করতে। তাঁর সুচিকিৎসা হলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে-এমন আশার কথা তিনি জানান। জিন্নাত আলী সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।