ভৈরবে বৃষ্টির অভাবে রোপা আমনের আবাদ ব্যাহত
বৃষ্টির অভাবে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে চলতি মৌসুমের রোপা আমনের আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। সম্প্রতি ভরা মৌসুমে ধানের বাজার দর কম থাকায়, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার ভয়ে সেচযন্ত্রে জমিতে পানি দিয়ে চাষাবাদে অনীহা কৃষকদের। তাই অনাবাদি পড়ে আছে ভৈরবের আমন চাষের বিস্তীর্ণ জমি।
এদিকে, বৃষ্টির অপেক্ষায় থেকে সময় পার করে শেষমুহূর্তে জমি রোপণ করার উদ্যোগী কৃষকরা বীজতলা নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। বীজতলার চারার বয়সের মেয়াদ বেশি হয়ে যাওয়ায়, সেগুলো জমিতে রোপণের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে নতুন বীজতলা তৈরি করে ধান রোপণেরও সময় আর হাতে না থাকায় সেচযন্ত্র বসিয়েও জমি আবাদ করা যাচ্ছে না বলে জানায় কৃষকরা।
রোপা আপন ধান অগ্রাহায়ণী বা আগুনিধান নামে পরিচিত। এটি সাধারণত বর্ষার ধান আউশ কাটার পর ভাদ্র মাসের শুরুতে রোপণ করা হয়। এই ধান ঘরে তোলা হয় অগ্রহায়ণ মাসে। শ্রাবণের শেষে এবং ভাদ্রের শুরুতে জমিতে যখন অল্প-বিস্তর পানি জমে থাকে, তখন সেই জমি প্রস্তুত করে রোপা আমনের আবাদ করা হয়।
রোপা আমনের জমিগুলো এই সময়ের বৃষ্টিপাতের পানি পেয়ে বাড়ন্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু চলতি মৌসুমে ভর বর্ষাকালসহ শরতের শুরুতেও বৃষ্টির দেখা তেমনভাবে না পাওয়ায়, জমিগুলো খাঁ খাঁ করছে পানির অভাবে। এর মধ্যে কিছু কিছু জমিতে অল্প-বিস্তর বৃষ্টির ওপর ভর করে ধান রোপণ করা হলেও বৃষ্টিপাতের অভাবে সেগুলোও এখন ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। শুকিয়ে গেছে রোপণ করা ধানের চারা।
যেসব জমিতে রোপা আমনের চারা লাগানো হয়েছে সেসব ধানের ক্ষেতগুলো পানির অভাবে ফেটে চৌচির হয়ে আছে। ছবি : এনটিভি
স্থানীয় কৃষক মুতি মিয়া, বাদল মিয়া ও জিল্লুর রহমান জানান, মৌসুমের এই সময়ে রোপা আমনের সব জমি লাগানো শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। অথচ বৃষ্টির অভাবে অধিকাংশ জমি এখনো অনাবাদি পড়ে আছে। কৃষকরা আরো জানায়, প্রতি বিঘা জমি সেচযন্ত্রের সাহয্যে পানি দিয়ে চাষাবাদ করলে দুই হাজার ৫০০- দুই হাজার ৬০০ টাকা বাড়তি খরচ গুনতে হয়। মোট উৎপাদন খরচের সঙ্গে এই টাকা বাড়তি যোগ করে ফলন ফলিয়ে লোকসানের অঙ্কটা বড় করা ছাড়া আর কোনো ফায়দা হবে না তাদের। তাই তারা জমি আবাদের চেয়ে অনাবাদি রাখার পক্ষেই যুক্তি খুঁজে পায় বলে জানায়।
এদিকে, বৃষ্টির অপেক্ষায় না থেকে শেষ পর্যন্ত সেচযন্ত্রের আওতায় নিজেদের জমি আবাদের সিদ্ধান্ত নেওয়া কৃষক বাদল মিয়া, মজনু মিয়া, ধন মিয়া ও আবু তাহের মিয়া জানান, জমি রোপণ করতে গিয়ে তাঁরা পড়েছেন নতুন সমস্যায়। কারণ বৃষ্টির অপেক্ষায় সময় নষ্ট হওয়ায় চাষ করা বীজতলার চারার মেয়াদ এরই মধ্যে উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এই মেয়াদ পার হয়ে যাওয়া বীজতলার চারা রোপণ করে ফলন হবে না বলে তাঁদের অভিমত। আর এই মুহূর্তে নতুন করে বীজতলা তৈরি করাও সম্ভব নয় বলে জানান তাঁরা।
কৃষকদের এসব অভাব-অভিযোগের সঙ্গে সহমত পোষণ করে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আলফাতুল হেকিম জানান, শত বিড়ম্বনা আর বাড়তি খরচের বোঝা কাঁধে নিয়ে চলতি মৌসুমের রোপা আমন চাষ করা কৃষকদের ভর্তূকি মূল্যে সারসহ অন্যান্য সুবিধা প্রদান এবং ধানের বাজার দর উৎপাদন খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারণ করতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বৃষ্টির অভাবে চলতি মৌসুমের আমন আবাদ ব্যাহত হওয়াসহ বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং রোপণ করা জমি পানির অভাবে ফেটে চৌচির হওয়ার কথা স্বীকার করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জালাল উদ্দিন। তিনি জানান, তাঁরা কৃষকদের সেচের মাধ্যমে ধানের আবাদ করার জন্য মাঠ পর্যায়ে বলে যাচ্ছেন। আর যেসব জমিতে এখনো ধান রোপণ করা সম্ভব নয়, সে সব জমিতে সবজি আবাদের পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।
তবে যেসব কৃষক বাড়তি খরচের ঝুঁকি নিয়ে ধানের আবাদ করেছে, তারা চিন্তিত আছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেই দিকটি বিবেচনায় নিয়ে সরকার ধানের বাজার মূল্য নির্ধারণ করলে কৃষক হয়তো তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে।