বার্ন ইউনিটের কর্মীদের হৃদয়ে ক্ষত!
আগুনে পোড়া রোগীদের ক্ষত সারাতে যারা দিন রাত কাজ করেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সেই কর্মীরা হৃদয়ে ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন বছরের পর বছর। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করছেন তাঁরা। এখন স্থায়ী করার পরিবর্তে বয়সের দোহাই দিয়ে তাঁদের বাদ দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে দাবি করেছেন ৬৮ জন কর্মচারী।
বার্ন ইউনিট সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৭ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০৩ সালে ১০ জন চিকিৎসক নিয়ে ৫০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ ইউনিট যাত্রা শুরু করে। ২০০৯ সালে তা ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এরপর দিন দিন এই ইউনিটের কার্যক্রম বৃদ্ধি পাওয়ায় ও বিভিন্ন অসুবিধা কাটিয়ে উঠতে ২০১৩ সালে বার্ন ইউনিটকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্লাস্টিক সার্জারি নামে রূপান্তরিত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি আদেশ জারি করে।
এদিকে প্রতিদিনই বাড়ছে এই ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম। পোড়া রোগীর চিকিৎসার পাশাপাশি বাড়ছে কর্মচারীদের কাজের পরিধিও।
কর্মচারীরা বলছেন, প্রতিটি কাজেই তাঁদের সরকারি কর্মচারীদের মতোই আদেশ দেওয়া হয়। সেই আদেশে তাঁরা শিফট ভাগ করে রুটিন কাজ, প্রশিক্ষণ এমনকি কোনো বিশেষ ক্যাম্পেইনেও কাজ করে থাকেন। অথচ এই কাজের জন্য তাদের কোনো ধরনের পারিশ্রমিক দেওয়া হয় না। বাধ্য হয়ে রোগীদের কাছ থেকে চেয়ে-বকশিস নিয়ে কোনো রকমে সংসার চালাতে হয়। এতে অনেক সময় রোগীরাও বিরক্ত বোধ করেন। তারপরও বাঁচার তাগিদেই এমনটি করতে হয় তাঁদের।
কর্মচারী নাসির, সিরাজ, সাইফুল, দিপু, জীবন মিয়া ও হাবিল মিয়া জানান, বার্ন ইউনিটে ৬৮ জন কর্মচারীর মধ্যে কেউ কেউ হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিছন্ন থেকে শুরু করে ওটি কমপ্লেক্স, এইচডিইউ, আইসিইউ, অফিস, চিকিৎসকদের রুমে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। আবার কিছু কর্মচারী ওয়ার্ড বয়, এমএলএসএস, ইলেকট্রিশিয়ান, ড্রেসার, কেউ অটোকেভ অপারেটর হিসেবেও কাজ করছেন। এদের মধ্যে কেউ ১৫ বছর, কেউ ১০ বছর ধরে বিনা বেতনে কাজ করছেন এমনও আছে। তবে ২০১৫ সালে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে কয়েকজন কর্মকর্তার চাকরি স্থায়ী করা হয়। ওই সময় মাস্টাররোল দেখিয়ে চতুর্থ শ্রেণির এই কর্মচারীদেরও প্রকল্পের আওতায় এনে তিন মাসের বেতন দেওয়া হয়েছিল। তিন মাস বেতন পাওয়ার পর চতুর্থ শ্রেণির এই কর্মচারীদের আর কোনো বেতন দেওয়া হয়নি। এই ঘটনার আগে ও পরে এখন পর্যন্ত কেউ হাসপাতালের পক্ষ থেকে একটি পয়সাও পাননি। যার কারণে প্রতিটি কর্মচারীকে চরম মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। তারা ইউনিটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে গেলে আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই পান না।
কর্মচারীরা বলেন, সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে বার্ন ইউনিটে সরকারিভাবে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ করা হবে। এ ক্ষেত্রে ১৫ বছর ধরে সেবা দিয়ে আসছে, তাদের অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা। কিন্তু একটি স্বার্থান্বেষী মহল বয়সের দোহাই দিয়ে এই কর্মচারীদের বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে অন্যদের নিয়োগ দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। কর্মচারীরা মানবিক দিক বিবেচনা করে চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে বার্ন ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সাজ্জাদ খন্দকারও বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘এই কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে রোগীদের সেবা দিয়ে আসছেন। তাঁরা কাজ না করলে রোগীদের সেবা দেওয়া যেত না। তাই আমি সব চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের নিয়ে তাঁদের জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানাব, যেন একটা সুব্যবস্থা করা হয়।’