দেড় লাখ ইভিএম কিনতে ৩৮২৫ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিন মাস আগে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন পেল দেড় লাখ ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএম কেনার প্রকল্প। তবে আগামী নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার, আইনের সংশোধন ও নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল।
আজ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী ও একনেক সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। আজ একনেকের বৈঠকে আনুমানিক ১২ হাজার ৫৪৪ দশমিক ৯৪ কোটি টাকার মোট ১৪টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তর্ক-বিতর্ক রয়েছে। স্থানীয় নির্বাচনে স্বল্প পরিসরে ইভিএম ব্যবহার হলেও এখনো জাতীয় নির্বাচনে এর ব্যবহারের আইন তৈরি হয়নি। সম্প্রতি জাতীয় নির্বাচনেও যেনো ইভিএম ব্যবহার করা যায়, সেজন্য নির্বাচন কমিশন আইন সংশোধনের প্রস্তাব করেছে। সেই প্রস্তাব পাস হওয়ার আগেই একনেকে অনুমোদন পেল তিন হাজার ৮২৫ কোটি টাকায় দেড় লাখ ইভিএম কেনার প্রকল্প।
‘নির্বাচনী ব্যবস্থায় আরো স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ক্রয়, সংরক্ষণ ও ব্যবহার’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন পরিকল্পনামন্ত্রী মুস্তাফা কামাল। ইভিএম প্রকল্প সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, গৃহীত প্রকল্পটি তিনটি পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হবে। ইভিএমগুলো (এক লাখ ৫০ হাজার ইভিএম) তিনটি পর্যায়ে ক্রয় করা হবে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শহর এলাকায় প্রাথমিকভাবে ইভিএম ব্যবহার করা উচিত। কারণ সেখানে শিক্ষিত ব্যক্তিদের সংখ্যা বেশি। ক্রমান্বয়ে দেশের সর্বত্র ইভিএম ব্যবহার করা উচিত।
মন্ত্রী জানান, গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
পরিকল্পনামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ১৪টি প্রকল্পের অনুমিত ব্যয় ১২ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকার মধ্যে সরকার জাতীয় কোষাগার থেকে দেবে আট হাজার ৮৪২ কোটি টাকা, সংশ্লিষ্ট সংস্থা তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে ২৫৭ কোটি এবং প্রকল্প সহায়তা হিসেবে তিন হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা পাওয়া যাবে। তিনি জানান, অনুমোদিত ১৪টি প্রকল্পের মধ্যে ১১টি নতুন এবং বাকি তিনটি সংশোধিত প্রকল্প।
একনেকে আজ ৭৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামের মিরসরাইতে ‘বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল, মিরসরাই-১ প্রথম পর্যায়’ প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে।
এ প্রকল্পটি সম্পর্কে আ হ ম মুস্তাফা কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন, এই অর্থনৈতিক অঞ্চলটির ড্রেনেজ ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধন প্লান্টসহ (সিইটিপি) বিজ্ঞান সম্মতভাবে নির্মাণ করতে হবে।
একনেকে অনুমোদিত অপর ১১টি প্রকল্প হচ্ছে- ২৫৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে শেখ হাসিনা তাঁতপল্লী স্থাপন; ৫২৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি জাতীয় মহাসড়কের হাটহাজারী থেকে রাউজান পর্যন্ত সড়ক চারলেনে উন্নীত করা; ১২৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে জামালপুর-মাদারগঞ্জ সড়ক প্রশস্ত ও মজবুত করা (তৃতীয় সংশোধিত); ৪৬১ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন; ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ভারতের সঙ্গে রেলসংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে চিলাহাটি এবং চিলাহাটি সীমান্তের মধ্যে রেলপথ নির্মাণ; ১৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে গোপালগঞ্জ জেলায় বিএআরআইয়ের কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন এবং দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পরিবেশ-প্রতিবেশ উপযোগী গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করার মাধ্যমে কৃষি উন্নয়ন; ১১১ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয়ে বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠি, বরগুনা, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প; ৮২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে গোপালগঞ্জ-খুলনা-বাগেরহাট- সাতক্ষীরা-পিরোজপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প; ২৫৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যয়ে বিসিএস ইকোনমিক একাডেমি প্রকল্প (দ্বিতীয় সংশোধিত); ১১৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে শাহবাগে অবস্থিত বাংলাদেশ বেতার কমপ্লেক্স আগারগাঁওয়ে স্থানান্তর, নির্মাণ ও আধুনিকায়ন (প্রথম পর্যায়); ৮২৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ে খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা দূর করতে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং চার হাজার ৯৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে গ্রামীণ সেতু উন্নয়ন প্রকল্প।