আমরা চাইলে জামিনের পর পালিয়ে যেতে পারতাম
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আট আসামির জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন এ আদেশ দেন। একইসঙ্গে ১০ অক্টোবর এ মামলার রায়ের দিন ধার্য করেছেন আদালত।
এ সময় আসামিরা আদালতের সামনে সারিবদ্ধভাবে কয়েকটি চেয়ারে বসা ছিলেন। আদালতের আদেশের আগে আসামিদের অনেকটা বিমর্ষ অবস্থায় দেখা যায়।
জামিন বাতিল হওয়া আট আসামি হলেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আশরাফুল হুদা, শহিদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডির সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমীন, সাবেক সহকারী পুলিশ সুপার আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমান, সাইফুল ইসলাম ডিউক ও আরিফ কমিশনার।
এর আগে গতকাল সোমবার আসামিদের জামিন বাতিল চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। একই সঙ্গে জামিন বহাল চেয়ে আবেদন করে আসামিপক্ষ। দুটি আবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান আদালতে বলেন, বিজ্ঞ আদালত আসামিরা দীর্ঘদিন জামিনে রয়েছেন। মামলার বিচারকর্ম শেষ হয়েছে। রায় ঘোষণার আগ মুহূর্তে জামিনে থাকা বিচার ব্যবস্থার জন্য হুমকিস্বরুপ। আসামিদের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানো হোক।
অপরদিকে আসামিপক্ষে আইনজীবী নজরুল ইসলাম আদালতকে বলেন, ‘আমরা জামিনের শর্ত ভঙ্গ করিনি। জামিন নেওয়ার পর থেকে মামলার প্রত্যেক ধার্য তারিখে হাজির হয়েছি। আমরা চাইলে উচ্চ আদালত জামিন দেওয়ার পরই পালিয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু কোনো প্রকার জামিনের শর্ত ভঙ্গ করিনি। ন্যায়বিচারের আশায় আদালতকে আজও আমরা নিশ্চিত করছি, জামিনে থাকলে আমরা জামিনের কোনো শর্ত ভঙ্গ করব না। আসামিরা আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিয়েছেন এবং জামিনের কোনো শর্ত ভঙ্গ করেন নাই। রায়ের দিন যথারীতি উপস্থিত থাকবেন। ন্যায়বিচারের স্বার্থে উপরোক্ত মামলার রায় পর্যন্ত আসামিদের জামিন বহাল রাখার আবেদন করছি।
এরপর আদালত বলেন, ন্যায়বিচারের স্বার্থে এবং বিচারের সুবিধার্থে আসামিদের জামিন বাতিল করে কারাগারে প্রেরণ করা হলো।
এর পরই জামিনে থাকা আট আসামিকের একে একে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় আসামি সাইফুল ইসলাম ডিউক ও কয়েকজন আসামির পক্ষ থেকে স্বজনরা নিয়ে আসা প্রয়োজনীয় কাপড় এবং জিনিসপত্রসহ কয়েকটি ব্যাগ কারাগারে তাদের সঙ্গে গাড়িতে দিয়ে দেন।
এর আগে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী এস এম শাহজাহান, খন্দকার মাহবুব হোসেন ও আব্দুর রেজাক খান শুনানি করেন। দুপুর দেড়টার দিকে যুক্তিতর্কের শুনানি শেষ হলে বিচারক রায় ঘোষণার তারিখ জানান।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পৃথক মামলায় মোট আসামি ৫২ জন। এর মধ্যে তিন আসামির অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাঁদের মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, মুফতি আবদুল হান্নান ও শরীফ শাহেদুল আলম বিপুল।
এখন ৪৯ আসামির বিচার চলছে। এর মধ্যে এখনো ১৮ জন পলাতক। মামলার আসামি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, সেনা কর্মকর্তা রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীসহ ২৩ জন আগে থেকেই কারাগারে। আজ আটজনসহ মোট ৩১ জন কারাবন্দি হলেন।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ২২৫ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন। আসামিপক্ষ সাক্ষীদের জেরা করেছে। গত বছরের ৩০ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দের জেরা শেষের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই নৃশংস হামলায় ২৪ জন নিহত ও নেতাকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নেতা এই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তাঁর শ্রবণেন্দ্রিয় আঘাতপ্রাপ্ত হয়।