হাটহাজারীতে হচ্ছে ইকোপার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেন
চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় ৪৬৮ একর বনভূমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে ইকোপার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেন। ইকোট্যুরিজম সেবা নিশ্চিত করতে লেক সম্প্রসারণ করা হবে। বিনোদনের জন্য থাকবে ওয়াটার ইভেন্টস, সুইমিংপুল, শিশু পার্ক, অ্যাকুরিয়াম ও ক্যাবল কার। নির্মাণ করা হবে মিনি চিড়িয়াখানা ও পক্ষীশালা।
পর্যটনকেন্দ্রের পাশাপাশি নির্মাণাধীন এ গার্ডেনে প্রায় ২০০ প্রজাতির ৫০ হাজার বিরল ও বিপন্ন উদ্ভিদ সংরক্ষণ করা হবে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বৃহৎ এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ শনিবার বিকেলে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের ছোটকাঞ্চনপুর এলাকায় ইকোপার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে কাজের উদ্বোধন করেন। ছবি : এনটিভি
গতকাল শনিবার বিকেলে হাটহাজারীর ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের ছোটকাঞ্চনপুর এলাকায় ইকোপার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে কাজের উদ্বোধন করা হয়।
স্থানীয় লোকজন জানায়, হাটহাজারীর অধিকাংশ পাহাড়ি এলাকায় ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। এসব ভাটায় যেমন অবৈধভাবে কাঠ পোড়ানো হয়, তেমনি দিনদুপুরে পাহাড় কেটে চলে মাটি টানার কাজ। আর গাছ কেটে বন উজার করার ঘটনাও ঘটে প্রায় সময়। পাহাড় দখল ঠেকাতে বনকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনাও নিত্যনৈমিত্তিক। অপরিকল্পিত বনভূমি ব্যবহারের কারণে এরই মধ্যে কমে গেছে বন, বিলুপ্ত হয়ে গেছে প্রাকৃতিক অনেক মূল্যবান সম্পদ। এসব বন ও পরিবেশ রক্ষায় সরকার উত্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে প্রথমে ৩৩৮ দশমিক ৫১ একর বনভূমিতে গড়ে তুলছে ইকো পার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেন। ভবিষ্যতে আরো ১২৯ দশমিক ৩৫ একর জমিতে এই পার্ক সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। পর্যটন শিল্প বিকাশের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষা, বিনোদন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অবহেলিত একটি অঞ্চলে পরিবর্তনের হাওয়া লাগায় খুশি এলাকাবাসী।
ইকোপার্কের ব্যাপারে স্থানীয় সমাজসেবক মাহাবুব আলম চৌধুরী জানান, অবহেলিত ছোট কাঞ্চনপুর এলাকায় ইকোপার্কের কাজ শুরু হওয়ায় তাঁরা আনন্দিত। এলাকার মানুষ আজীবন এর সুফল পাবে। এখানে ৩৩৮ একর জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারি ডরমেটরি, শিশুদের বিনোদনের জন্য সব সুযোগ-সুবিধা এখানে থাকবে। এ এলাকার কৃতী সন্তান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রধান বন সংরক্ষকও এ এলাকার কৃতী সন্তান। তাই অবহেলিত এ অঞ্চলটি বিনোদনের পরিপূর্ণতা পাবে। এখানে বেকার তরুণদের কর্মসংস্থান হবে। এলাকার উন্নয়ন হবে। বিশেষ করে তিনটি সড়কের মাধ্যমে ইকোপার্কে প্রবেশ করা যাবে। এসব সড়কগুলোর উন্নয়নের কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।
হাটহাজারীর ধলই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান এজাহার মিয়া চৌধুরী জানান, এ ইকোপার্কটি পুরো এলাকার চিত্রটা বদলে দেবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাবে। মানুষের সচ্ছলতা ফিরে আসবে। সাধারণ মানুষের বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
রাজনীতিবিদ মঈন উদ্দন আহমদ জানান, এটি পুরো দেশের সম্পদ হবে। সরকার পরিবর্তন হলেও যেন কাজ অব্যাহত থাকে সেটি আমাদের প্রত্যাশা।
প্রধান বন সংরক্ষক মো. শফিউল আলম চৌধুরী জানান, এটিকে দেশের মধ্যে বড় ও আধুনিক ইকোপার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেনে রূপান্তর করা হবে। এ এলাকায় বনভূমির বিশাল জায়গা আছে। এখানে সব কিছুর সম্মীলন করা আমাদের জন্য সহজ হবে বেশি।
এদিকে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম শহরের কাছে হাটহাজারীর পাহাড় ও লেকবেষ্টিত বনভূমিতে মনোরম পরিবেশে গড়ে তোলা হচ্ছে এই ইকোপার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেন। সমৃদ্ধ এ স্থানটি দেশ ও বিদেশের সবার দৃষ্টি কাড়বে বলে মনে করছেন তিনি।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এরই মধ্যে এ প্রকল্পের জন্য ১৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এই টাকার মধ্যে কিছু টাকা রাখা হবে মহাপরিকল্পনার জন্য। মহাপরিকল্পনার পর ডিপিপি মূলে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। এটি একটি আধুনিক ও সমৃদ্ধ পর্যটনকেন্দ্র হবে।