আওয়ামী লীগ সরকার ভীরু : রিজভী

Looks like you've blocked notifications!
বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী। ছবি : এনটিভি

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ভীরু ও কাপুরুষ। তাদের কোনো সাহস নেই। আছে শুধু ভয় ও আশঙ্কা।’ আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ‘বর্তমান সরকারের যদি সাহস থাকত, তবে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ সুগম করার জন্য নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতেন। কিন্তু জনবিচ্ছিন্ন হওয়ায় অপরিণামদর্শী স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকার এখন হিতাহিত জ্ঞানশূন্য। যেকোনো মুহূর্তে পিছলে যাওয়ার ভয়ে তারা পুলিশের ওপর নির্ভর করে মামলা হামলা ও গ্রেপ্তারের শৃঙ্খলে জনগণকে বন্দি করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে।’

বিএনপি নেতা আরো বলেন, ‘সরকারের বিরুদ্ধে জনগণ মনের ক্ষোভ চেপে রাখতে অধৈর্য হয়ে উঠেছে, তাই সর্বত্র প্রতিবাদের সোচ্চার ধনি উচ্চারিত হচ্ছে। যেকোনো মুহূর্তে ধেয়ে আসা জনগণের ঘূর্ণিঝড় রুদ্ররূপ ধারণ করবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে জনবিস্ফোরণ ঠেকানো যাবে না।’ তিনি আরো বলেন, “অসাংবিধানিকভাবে কারাগারে আদালত বসিয়ে খালেদা জিয়ার মামলার রায় চায় রাষ্ট্রপক্ষ। গতকাল রাষ্ট্রপক্ষ আদালতকে বলেছে, ‘যেহেতু খালেদা জিয়া আদালতে আসতে চাইছেন না, তাই মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রায় ঘোষণার দিন ধার্য করুন।’ আদালতের কার্যক্রম শেষ করতে লিখিত আবেদনও দিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। অবৈধ আওয়ামী সরকার চক্রান্তমূলকভাবেই দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাঁকে সাজা দিয়েছে, সেটি আবারও প্রমাণ করলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।”

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন বলেন, ‘খালেদা জিয়া কারাগারে গুরুতর অসুস্থ। তিনি হাত-পা নাড়াতে পারেন না, হাঁটাচলা করতে তাঁর মারাত্মক অসুবিধা হয়। চিকিৎসকরা বলেছেন, তাঁর বাঁ হাত ও পা প্রায় অবশ হয়ে পড়েছে। গুরুতর অসুস্থতার কারণে আদালতে যেতে পারবেন না, খালেদা জিয়া সে কথাটিই বলেছেন। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ জোর করে আদালতকে ব্যবহার করে বিচারকার্য ছাড়াই রায় দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। এটি সম্পূর্ণরূপে ন্যায়বিচারের পরিপন্থী, অমানবিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘন। প্রতিহিংসার বিচার চরিতার্থ করতেই তাড়াহুড়ো করার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রপক্ষের এই চাপ সরকারের নির্দেশেই হচ্ছে।’ তিনি  বলেন, ‘আদালত সরকারের হুকুমের বাইরে যেতে পারবেন কি না, সেটি নিয়ে জনগণ সন্দেহ পোষণ করে। যেখানে দেশের প্রধান বিচারপতিকে বন্দুকের নলের মুখে দেশ ছাড়তে হয়, সেখানে নিম্ন আদালত সরকারের চাপ প্রতিহত করে ন্যায়বিচার করতে পারবেন কি? এখন পর্যন্ত সেই দৃষ্টান্ত আমরা দেখিনি।’

সারা দেশে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় সরকারের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, “পোলিও টিকা খাওয়ানোর একটি স্লোগান আমরা অনেকদিন যাবৎ শুনে এসেছি, ‘বাদ যাবে না একটি শিশু’। এখন সরকার এই স্লোগানটি ভিন্ন অর্থে প্রয়োগ করছে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর : মামলা-হামলায় বাদ যাবে না বিএনপি নেতাকর্মী।” তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘দেশে এখন মানুষ নিজের ছায়াকেও ভয় পাচ্ছে। মনে হয়, দেশের প্রতিটি মানুষকে কেউ না কেউ অনুসরণ করছে, গতিবিধি লক্ষ করা হচ্ছে। এমনিতে গুম, খুন ও ক্রসফায়ারের ক্রমাগত বিস্তৃতি ঘটছে, তার ওপর রাজধানীসহ দেশের আনাচে-কানাচে বিএনপির এমন কোনো মানুষ বা সমর্থক নেই, যাদের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়নি। পাশাপাশি বিরোধী দলের নেতাকর্মী সমর্থকদের ছাঁকনি দিয়ে ধরা হচ্ছে।’

বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, ‘জনগণকে পুলিশের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা, অথচ নিত্যদিনের পুলিশের আগ্রাসী অভিযানে দেশের মানুষের জানমাল নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ছে। এ দেশে বিদেশি মিশনের কূটনীতিকদেরও নিরাপত্তা নেই। বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ওপরও হামলা হয়েছে। কোথাও আওয়াজ শুনলেই সেখানে সরকারি হামলা ধেয়ে আসছে।’ তিনি বলেন, ‘শুধু বিরোধী দল নয়, গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষকে এই সরকার অপরাধী বানাচ্ছে। সরকারের এই অপরাধের তালিকায় আছেন কোমলমতি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, অধ্যাপক, শিল্পী, আলোকচিত্রী, সাংবাদিক, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, যাত্রী কল্যাণের মহাসচিব মোজাম্মেল হকের মতো নিরীহ নাগরিক, শিশু, অশীতিপর বৃদ্ধসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। এমনকি বাদ যায়নি কবরে শায়িত লাশ, প্যারালাইজড রোগী, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি, পবিত্র হজব্রত পালনরত ব্যক্তিও।’