খালেদা জিয়ার সঙ্গে আইনজীবীর সাক্ষাতের অনুমতি
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা মামলার আদালত কারাগার চত্বরে স্থাপনের পর প্রধান আসামি খালেদা জিয়া কেন শুনানিতে অংশ নিতে চাইছেন না, সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য তাঁর দুই আইনজীবীকে কারাগারে সাক্ষাৎ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে বন্দি খালেদা জিয়া শারীরিক অসুস্থতার কারণে, নাকি অন্য কোনো কারণে মামলার যুক্তিতর্কে অংশ নিতে চাইছেন না—সাক্ষাৎ করে দুই আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও সানাউল্লাহ মিয়া সেটি জেনে আসবেন। একটি আবেদনের শুনানি শেষে আদালত বলেছেন, তাঁরা জেল কোড অনুযায়ী সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পাবেন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কারাগার চত্বরে আদালত স্থাপনের পর তৃতীয় দিনের মতো শুনানি হয়। শুনানির শুরুতেই খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালতে এই আবেদন দাখিল করেন। পরে তার ওপর শুনানি হয়। আদালত আগামী ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করেন বিচারক ড. মো. আক্তারুজ্জামান।
আদালতের কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে বরাবরের মতো আজও সকাল থেকেই ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ওই এলাকার বাসিন্দাদের কড়া তল্লাশির মধ্য দিয়ে যাতায়াত করতে দেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
সকাল পৌনে ১১টার দিকে ৫ নম্বর বিশেষ আদালতের বিচারক ড. আক্তারুজ্জামান এজলাসে প্রবেশ করেন। এর কিছু আগেপরে সেখানে আসেন খালেদা জিয়া, দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। সাংবাদিকরাও মোবাইল রেখে আদালতে প্রবেশ করেন।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় মোট আসামি চারজন। খালেদা জিয়া ছাড়া অপর তিন আসামি হলেন—খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন মোট ৩২ জন। ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা করা হয়।
গত ৪ সেপ্টেম্বর আইন মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে মামলার কার্যক্রম খালেদা জিয়া যেখানে বন্দি আছেন, সেই কারাগার চত্বরে আদালত বসানোর তথ্য জানানো হয়। পরদিন ৫ সেপ্টেম্বর মামলার কার্যক্রমে আইনজীবীরা না গেলেও খালেদা জিয়া হুইলচেয়ারে করে আদালতে আসেন।
সেদিন খালেদা জিয়া আদালতে ৩০ মিনিটের মতো ছিলেন। বিচারকের সামনে একটি হুইলচেয়ারে তিনি বসে থাকেন। এ সময় তাঁকে বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। তাঁর হাত-পা এবং মাথা কাঁপছিল। তাঁর সঙ্গে এ সময় তাঁর গৃহকর্মী ফাতেমা ছিলেন। ফাতেমার হাতে ছিল একটি ছোট ব্যাগ।
এ সময় খালেদা জিয়া আদালতকে বলেন, ‘জজ সাহেবের কাছে কোনো কথা বা নিবেদন করা যায় না। উনি তারিখ দিয়ে উঠে চলে যান। আমাদের কারো কথা শুনেন না। সরকারের হুকুমে এবং নির্দেশে তিনি সব কিছু পরিচালনা করছেন। আমার পায়ে ব্যথা। ডাক্তার আমাকে পা সব সময় উঁচু করে রাখতে বলেছেন। হাতেও প্রচণ্ড ব্যথা। আমাকে জোর করে এখানে আনা হয়েছে। আমি খুবই অসুস্থ। আমি ঘন ঘন কোনো হাজিরা দিতে পারব না। রায় তো লেখাই আছে। আমার হাত-পা প্যারালাইজড হয়ে যাচ্ছে। আপনাদের যা ইচ্ছা রায় দেন, যত খুশি সাজা দিয়ে দেন।’
গতকাল ছিল কারাগার চত্বরে বসানো আদালতে মামলার কার্যক্রমের দ্বিতীয় দিন। দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রমে উপস্থিত হননি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ দিন আদালত মুলতবির আগে বিচারক ড. মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘আমার কাছে একটি চিঠি এসেছে। এতে খালেদা জিয়া বলেছেন, তিনি আর আদালতে আসবেন না।’ এ অবস্থায় প্রধান আসামির অনুপস্থিতিতে জামিনের শুনানি কীভাবে হবে এবং মামলার কার্যক্রম চলতে পারে কি না, সে ব্যাপারে আইনগত ব্যাখ্যা হাজির করার জন্য আসামিপক্ষের আইনজীবীদের নির্দেশ দেন আদালত।
জবাবে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘খালেদা জিয়া যেহেতু কারাগারে আছেন আর আদালত কারাগারের ভেতরে, তাহলে দুটোই থাকছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে। সে কারণে উনি কেন আসতে পারেননি, কী বলেছেন সেটা আমরা এখনো নিশ্চিত না। আবার উনি যেহেতু আগের দিন বলেছেন, অনেক বেশি অসুস্থ, উনার শারীরিক অবস্থা এখন কী, সেটাও তাঁর সঙ্গে দেখা করা ছাড়া বলা সম্ভব না।’
এই পরিপ্রেক্ষিতেই আজ তৃতীয় দিনে মামলার শুনানির শুরুতেই খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন তাঁর দুই আইনজীবী।
আজকের শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী আদালতকে বলেন, ‘খালেদা জিয়া শারীরিক অসুস্থতার কারণে আদালতে আসতে চাইছেন না, নাকি অন্য কোনো কারণে তিনি আর এই মামলার যুক্তিতর্কে অংশ নিতে চাইছেন না—সেটি আমাদের জানা প্রয়োজন। উনার সঙ্গে সাক্ষাৎ না করে সেটি বলা সম্ভব না। তাই তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছি। সেই সময় পর্যন্ত আদালতে মামলার যুক্তিতর্ক মুলতবি করা হোক।’
জবাবে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘মামলার যুক্তিতর্ক শুরু করুন। প্রয়োজনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার উপস্থিতি নির্ধারণ করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে তিনি কারাগারে নিজের কক্ষে বসেই আদালতে সাক্ষ্য দিতে পারবেন এবং বিচারকাজ পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।’
তবে আজ গতকালের নির্ধারিত কারাগারে আটক খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে মামলা চলতে পারে কি না, সে বিষয়ের ব্যাখ্যা প্রদান এবং খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধির ব্যাপারে আগামী ২০ সেপ্টেম্বরের ধার্য তারিখে শুনানি হবে।