স্মরণসভায় আবেদ খান

যত দিন সাংবাদিকতা থাকবে, তত দিন গোলাম সারওয়ার থাকবেন

Looks like you've blocked notifications!
সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার স্মরণে গত সোমবার রাজধানীর উত্তরা মিডিয়া ক্লাব আয়োজিত সভায় বক্তব্য দেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবেদ খান। ছবি : সং গৃহীত

বাংলাদেশে যত দিন সাংবাদিকতা থাকবে তত দিন গোলাম সারওয়ার থাকবেন, যত দিন বার্তা সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠান থাকবে তত দিন তাঁর নামটি শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবেদ খান।

গত সোমবার রাজধানীর উত্তরা মিডিয়া ক্লাব আয়োজিত এক স্মরণসভায় এসব কথা বলেন প্রকাশিতব্য জাগরণ পত্রিকার সম্পাদক আবেদ খান। স্মরণসভায় যোগ দেন প্রয়াত সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ারের দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

স্মরণসভায় আবেদ খান বলেন, ‘গোলাম সারওয়ারকে জানাটা বড় প্রয়োজন। সত্যি বলতে কী, আমার চোখের সামনে গোলাম সারওয়ার তৈরি হয়েছেন। আমি বিভিন্ন দিকে নিজেকে যুক্ত করেছিলাম। কিন্তু গোলাম সারওয়ার একদিকে নিবদ্ধ ছিলেন, সেটা তাঁর পেশাগত জীবন।’

‘এত অসাধারণ তাঁর গদ্য, এত অসাধারণ কাব্যিক তাঁর রচনা। সিদ্ধান্ত গ্রহণের অতুলনীয় ক্ষমতা ছিল গোলাম সারওয়ারের। অনেক বার্তা সম্পাদকের সঙ্গে আমি কাজ করেছি। তোয়াব খানের সঙ্গে কাজ করেছি, সন্তোষ গুপ্তের সঙ্গে কাজ করেছি, আরো অনেক বার্তা সম্পাদকের সঙ্গে কাজ করেছি। কিন্তু পরিপূর্ণ বার্তা সম্পাদক হয়ে পরিপূর্ণ সম্পাদকে পরিণত হওয়া এবং কেবল সম্পাদকে পরিণত হওয়া শুধু নয়, সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠান সৃষ্টির মধ্যে নিবেদিত প্রাণ হওয়া একমাত্র গোলাম সারওয়ারের পক্ষেই সম্ভব হয়েছে’, বলেন আবেদ খান।

গোলাম সারওয়ারের মতো মানুষদের প্রয়াণ সাংবাদিকতার জগতে বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি করছে উল্লেখ করে আবেদ খান বলেন, ‘আমরা দিনের পর দিন ভালো মানুষগুলোকে হারিয়ে ফেলছি, শক্তিগুলোকে হারিয়ে ফেলছি। যিনি চলে যান তিনি সব নিয়ে চলে যান, যিনি চলে যান তিনি তাঁর সব অঙ্গীকার নিয়ে চলে যান, রেখে যান শুধু কর্ম। আজ গোলাম সারওয়ার যে জিনিসটি রেখে গেছেন সেটি হচ্ছে কর্ম। যত দিন যুগান্তর থাকবে, সমকাল থাকবে, সাংবাদিকতা থাকবে, বার্তা সম্পাদকের প্রতিষ্ঠান থাকবে; সম্পাদকীয় কার্যক্রম থাকবে, তত দিন গোলাম সারওয়ার থাকবেন।’

স্মরণসভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও সাংবাদিকতার শিক্ষক অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘আমার অনেক শিক্ষার্থীই বিভিন্ন গণমাধ্যমে কাজ করেন। তাঁরা একটি কথা বলেন, গণমাধ্যমে হাতে-কলমে কাজ শেখানোর মানুষ খুব কম। গোলাম সারওয়ার ছিলেন সেই সাংবাদিক-শিক্ষক যিনি সংবাদকর্মীদের হাতে-কলমে শেখাতেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বার্তা সম্পাদক।’

‘কিছু মানুষ আছেন তাঁরা যত বয়সেই মারা যান না কেন, সেটি অকালমৃত্যু মনে হবে; গোলাম সারওয়ার তেমনি একজন মানুষ ছিলেন। তিনি পঁচাত্তর বছর বয়সে মারা গেলেও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে তাঁর প্রয়োজন শেষ হয়নি’- সশ্রদ্ধচিত্তে গোলাম সারওয়ারকে স্মরণ করে বলেন আরেফিন সিদ্দিক।

সমকালের পক্ষ থেকে প্রয়াত সম্পাদকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বক্তব্য দেন বিশেষ প্রতিনিধি রাশেদ মেহেদী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার প্রধান গুরু ছিলেন গোলাম সারওয়ার; এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। আমরা এখনো শোক কাটিয়ে উঠতে পারিনি। সমকালে যদি যান দেখবেন, আমাদের বোর্ড রুম থেকে সর্বত্র একটি মানুষের ছবি, একটি মানুষের ছায়া- তিনি গোলাম সারওয়ার।’

রাশেদ মেহেদী আরো বলেন, ‘সারওয়ার ভাই অনেক কিছুর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি উত্তরা মিডিয়া ক্লাবের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন- এটি আমাদের জানা ছিল না।’ গোলাম সারওয়ারের স্মরণসভা আয়োজনের জন্য মিডিয়া ক্লাবকে সমকাল পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

ক্লাবের আহ্বায়ক, প্রবীণ সাংবাদিক ও রবীন্দ্র গবেষক আমিনুল ইসলাম বেদুর সভাপতিত্বে এবং মেজর (অব.) আমিন আহমেদ আনসারীর সঞ্চালনায় স্মরণ অনুষ্ঠানের শুরুতে গোলাম সারওয়ারকে নিয়ে শোকগাঁথা পাঠ করেন বহুমাত্রিক ডটকমের প্রধান সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম।

সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন দৈনিক মানবকণ্ঠের প্রকাশক জাকারিয়া চৌধুরী, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম, প্রয়াত গোলাম সারওয়ারের ছেলে গোলাম শাহরিয়ার রঞ্জু, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর আফসার উদ্দিন, উত্তরা মিডিয়া ক্লাবের সদস্য সচিব ও নিউজ২১বিডি ডটকমের সম্পাদক শরিফুল ইসলাম খান প্রমুখ।