জিয়া চ্যারিটেবল মামলা

খালেদা জিয়াকে ছাড়া কারা অভ্যন্তরের আদালতে যা হলো

Looks like you've blocked notifications!

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা মামলা কারাগার চত্বরে স্থাপনের পর দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রমে উপস্থিত হননি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বিশেষ এই আদালতের বিচারককে চিঠিতে জানিয়েছেন, তিনি আদালতে আর আসবেন না।

আজ বুধবার দুপুরে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগার চত্বরে বসানো আদালতে মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম দিনের কার্যক্রমে বিএনপির চেয়ারপারসনের পক্ষের আইনজীবী আদালতে অনুপস্থিত থাকলেও আজ দুজন আইনজীবী মামলার কার্যক্রমে অংশ নেন এবং খালেদা জিয়ার জামিন বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেন।

আদালত খালেদা জিয়ার জামিন বৃদ্ধির ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য আগামীকাল বৃহস্পতিবার দিন রেখেছেন। এ দিন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে মামলার কার্যক্রম চলতে পারে কি না,সে বিষয়েও শুনানি হবে। আজ আদালত আরো জানিয়েছেন, এ মামলার আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান জামিনে থাকবেন।

আদালত দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে শুরু হয়ে সোয়া ১টা পর্যন্ত চলে। মুলতবি ঘোষণার আগে বিচারক ড. মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘আমার কাছে একটি চিঠি এসেছে। এতে খালেদা জিয়া বলেছেন, তিনি আর আদালতে আসবেন না।’ এ অবস্থায় প্রধান আসামির অনুপস্থিতিতে মামলার কার্যক্রম চলতে পারে কি না, সে ব্যাপারে আইনগত ব্যাখ্যা হাজির করার জন্য আসামিপক্ষের আইনজীবীদের নির্দেশ দেন আদালত।

সকাল সাড়ে ১০টায় কারাফটকে তিন দফা তল্লাশি করে মোবাইল ফোন জমা রাখা হয়। এরপর সাংবাদিক ও আইনজীবীরা আদালতে উপস্থিত হন। বিচারক আদালতের খাস কামরায় আসেন বেলা ১১টার দিকে। এরপর খালেদা জিয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। কিন্তু না আসায় এর মধ্যে দুপুর সোয়া ১২টায় বিচারক এজলাসে উঠে শুনানি শুরু করেন।   

দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে শুনানির শুরুতে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতকে বলেন, ‘বিজ্ঞ আদালত, মামলাটি যুক্তিতর্কের জন্য রয়েছে। প্রধান আসামি আদালতে উপস্থিত হননি। তিনি আসবেন না বলে আদালতকে জানিয়েছেন। উনি যদি না আসেন তাহলে আইনানুযায়ী মামলার অসমাপ্ত কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য আবেদন করছি।’

এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া আাদলতকে বলেন, ‘বিজ্ঞ আদালত, আমরা দুটি আবেদন দিয়েছি। একটিতে খালেদা জিয়ার জামিন বৃদ্ধির আবেদন করছি। 

‘অপরটিতে আমরা আপনার কাছে আবেদন করতে চাই, ঐতিহাসিক মাসদার হোসেন মামলার আলোকে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি ছাড়া ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষকে অস্থায়ী আদালত হিসেবে ঘোষণা করে সরকারের গেজেট প্রকাশ সংবিধানের পরিপন্থী এবং আইনবিরোধী। এ বিষয়টি এরই মধ্যে মাননীয় প্রধান বিচারপতিকে অবহিত করা হয়েছে।’

সানাউল্লাহ মিয়া আরো বলেন, এ ছাড়া দরখাস্তকারী খালেদা জিয়া গত ৫ সেপ্টেম্বর আদালতে উপস্থিত হয়ে বলেছেন, তিনি অসুস্থ। তাঁর শরীরের অবস্থা খুবই খারাপ। এ আদালতে ন্যায়বিচার হবে না, তাঁর বাম হাত ও পা প্যারালাইসড হয়ে যাচ্ছে। এতে পুরো জাতি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে। বিএনপির আইনজীবীরা এরই মধ্যে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেত্বত্বে জ্যেষ্ঠ নেতারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেখা করেছেন। তিনি তাঁর চিকিৎসার জন্য একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে দিয়েছেন। এ অবস্থায় এ আদালতে মামলা পরিচালনা ঠিক হবে না। কেননা, এ আদালত এতই ছোট যে এখানে মামলা পরিচালনার পরিবেশ নেই।

এরপর খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই বকসিবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে মামলা পরিচালনা হয়ে আসছে। একটি মামলার রায়ও সেখানে হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে কী হলো যে, এখানে মামলা পরিচালনা করতে হবে। গেজেট প্রকাশে নিরাপত্তার অজুহাত দেখানো হয়েছে। অথচ এখানে ছোট একটি কক্ষে আদালত পরিচালনা হচ্ছে। এখানে আইনজীবী, পুলিশ, সাংবাদিক কারো বসার জায়গা নেই। এটি একটি খেলনা কোর্ট বসানো হয়েছে। ১২ ফুট বাই ২৪ ফুটের একটি কক্ষে আদালত বসনো ইতিহাসে নজির হয়ে থাকবে। গুহার মতো এ কক্ষটির চেহারা স্যাঁতস্যাঁতে। এখানে কোনো পরিবেশ নেই। আপনাকেও অনেকটা বিব্রত অবস্থার মধ্যে প্রবেশ করতে হয়। যেহেতু এ আদালত নিয়ে এরই মধ্যে প্রধান বিচারপতিকে অবহিত করা হয়েছে; তাই মামলার কার্যক্রম মুলতবি করা হোক। তবে আমরা আসামির জামিন বৃদ্ধির আবেদন করছি।’

এ পর্যায়ে দুদকের আইনজীবী মোশররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘তাঁরা একদিকে বলছে আদালত সংবিধান পরিপন্থী। অপরদিকে জামিন আবেদন করছে। এতে করে দুই রকম আচরণ হয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞ আদালত, এটা হতে পারে না। আমি বলব, আদালত মামলার যুক্তিতর্ক যেন শুরু করেন।  

আদালত তখন খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারাই ঠিক করেন আদালতে মামলা পরিচালনা করবেন কি না? আর আসামি যদি আদালতে না আসেন তাহলে জামিন বৃদ্ধি করা ঠিক হবে কি না?

এ সময় আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘খালেদা জিয়া আদালতের প্রতি সব সময় শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু তিনি অসুস্থ। তিনি আসার মতো অবস্থায় নেই।’

এরপর আদালত জামিন প্রশ্নে শুনানির জন্য আগামীকাল বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেন।

আজ সকাল থেকেই মামলার কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে আদালতের বাইরে মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। এই কারাগারেই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বন্দি আছেন বিএনপির চেয়ারপারসন।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় মোট আসামি চারজন। খালেদা জিয়া ছাড়া অপর তিন আসামি হলেন— খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন মোট ৩২ জন। ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা করা হয়।

গত ৪ সেপ্টেম্বর আইন মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে মামলার কার্যক্রম খালেদা জিয়া যেখানে বন্দি আছেন, সেই কারাগার চত্বরে আদালত বসানোর তথ্য জানানো হয়। পরের দিন ৫ সেপ্টেম্বর মামলার কার্যক্রমে আইনজীবীরা না গেলেও খালেদা জিয়া হুইলচেয়ারে করে আদালতে আসেন।