অনশনে বিএনপির নেতারা

মুক্ত খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচন হবে না

Looks like you've blocked notifications!
রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের সামনে আজ বুধবার খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে আয়োজিত প্রতীকী অনশনে বিএনপির নেতারা। ছবি : এনটিভি

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সরকার ‘মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে আটকে রেখেছে’, আন্দোলনের মাধ্যমেই তাঁকে মুক্ত করতে হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির নেতারা।

আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের সামনে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে আয়োজিত প্রতীকী অনশনে বিএনপির নেতারা এসব কথা বলেন। এতে বিএনপি ছাড়াও ২০ দলীয় জোটের নেতারা সংহতি প্রকাশ করেন।

সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে দুই ঘণ্টার পূর্বঘোষিত এই অনশন কর্মসূচি শেষ হয় দুপুর ১২টার কিছু পরে। রাজধানী ছাড়াও সারা দেশে একই ধরনের কর্মসূচি পালিত হয়েছে দলটির উদ্যোগে। কোথাও কোথাও পুলিশি বাধার খবর পাওয়া গেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। তিনি কারাগারে অসুস্থ, তাঁকে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি যেহেতু কারাগারে আছেন, তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু চিকিৎসক দল বারবার পরামর্শ দেওয়ার পরও সরকার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

‘সরকার অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রেখেছে। আমরা তাঁর নিঃশর্ত মুক্তি চাই। খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া দেশের গণতন্ত্র মুক্ত হবে না। তাই তাঁকে আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করতে হবে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সরকার আবার ষড়যন্ত্র করছে ৫ জানুয়ারি মার্কা নির্বাচন করতে। কিন্তু আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশে আর ৫ জানুয়ারি মার্কা কোনো ভোটারবিহীন নির্বাচন হতে দেবো না। তাই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে, সেনা মোতায়েন করতে হবে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।’

খন্দকার মোশাররফ হোসেন আরো বলেন, সরকার আতঙ্কিত হয়ে এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দিচ্ছে। লাখ লাখ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করছে। কয়েক দিন আগে প্রেসক্লাবের সামনে আমাদের মানববন্ধন শেষে বিনা কারণে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে। এসব করছে সরকার ক্ষমতা হারানোর ভয়ে।

প্রশাসনের উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এ সরকারের সময় শেষ। এখনই নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখুন, আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তাই আপনাদের জনগণের সেবা করতে হবে। আপনারা আওয়ামী লীগের কর্মচারী নন। তাই সরকারের কথায় জনগণের ওপর নির্যাতন করবেন না, গ্রেপ্তার করবেন না। আপনারা জনগণের সেবক, জনগণের পক্ষে অবস্থান নিন।’

খন্দকার মোশাররফ বলেন, আজকে সব দল ঐক্যবদ্ধ। তাঁরা সবাই গণতন্ত্রের মা খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি চায়। গোটা দেশ সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ। তফসিলের আগেই সংসদ ভেঙে দিয়ে, সেনা মোতায়েন করে ইসি পুনর্গঠন করে এবং সরকারের পদত্যাগ করেই আগামী নির্বাচন হতে হবে।

‘খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলনের বিকল্প নেই’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘সরকার চায় না খালেদা জিয়া জামিনে মুক্তি পাক। তাই আইনি মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। সবাই প্রস্তুতি নেন, আমাদের হাতে মাসখানেক সময় আছে। এবার যেন আন্দোলনে কর্মসূচি সফল না করে কেউ ঘরে ফিরে না যায়।’

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সাবেক এই আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সময় বেশি নেই, সময় আসতেছে। এমন কর্মসূচি দেওয়া হবে আন্দোলনের মুখে সরকারের নৌকা ভেসে যাবে। তাই আন্দোলনের প্রস্তুতি নেন। ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে আন্দোলন করতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এর কোনো বিকল্প নেই।’

‘সরকার ভয়ে গায়েবি মামলা দিচ্ছে’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘সরকার বিএনপির জনসমর্থন দেখে ভীত হয়ে পড়েছে। তাই সারা দেশে এখন গায়েবি মামলা দিচ্ছে, গুম-খুন করছে। আমি সরকারকে বলব, যতই অত্যচার-নির্যাতন করেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা ঘরে বসে থাকবে না। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে তাঁকে নিয়ে নির্বাচনে যাব এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব। বিএনপি ও খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচন হবে না।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘সরকার আইনের দোহাই দিয়ে খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে মারার ষড়যন্ত্র করছে। আমরা এই আদালতের রায় মানি না, তাঁকে মুক্তি দিতে হবে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পরও তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। উল্টো কারাগারে আদালত স্থাপন করে তাঁকে সাজা দেওয়ার চক্রান্ত করছে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এখন সরকার আদালতকে কারাগারে নিয়ে গেছে। খালেদা জিয়াকে আটকে রাখতে সরকার আদালতকে ব্যবহার করছে, এই আদালতের রায় দেশের জনগণ মানে না। খালেদা জিয়াকে অবশ্যই মুক্তি দিতে হবে। আমরা তাঁর নেতৃত্বে নির্বাচন করে দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনব। এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই নির্বাচনের আগে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। এ ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ব্যর্থ হয়ে এখন পুলিশকে ব্যবহার করছে। তারা ভাবছে, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে বিএনপিকে শেষ করতে পারবে। কিন্তু তাদের সে চক্রান্ত সফল হয়নি। আমরা খালেদা জিয়াকে আন্দোলনের মাধ্যমে কারামুক্ত করে আবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করব।’ তিনি আরো বলেন, সরকার বারবার চেয়েছে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে। কিন্তু তাদের সে ষড়যন্ত্র সফল হয়নি।

‘সারা দেশ কারাগারে পরিণত হয়েছে’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে গণতন্ত্র অর্জন করেছিলাম, বাকশাল কায়েম করে সেটি ধ্বংস করেছে আওয়ামী লীগ। আজ আবার তারা ক্ষমতা দখল করে দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করে সারা দেশকে কারাগারে পরিণত করেছে।’

বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, দেশের গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হলে আগে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। তাঁর নেতৃত্বে নির্বাচন করে তাঁকে আবার প্রধানমন্ত্রী করা হবে। এ জন্য দরকার ঐক্যবদ্ধ নির্বাচন। এর কোনো বিকল্প নেই।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান বলেন, বর্তমান সরকারের অপশাসন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে কোনো নাগরিক আর নিরাপদ নয়। তাই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে এ সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করে তাঁকে মুক্ত করতে হবে।

ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, যে দেশে আইন তার নিজ গতিতে চলতে পারে না, সে দেশে আইনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব না। তাই দাবি আদায় ও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে নিরপেক্ষ সরকারের দাবিসহ সব দাবি আদায় করতে হবে।

ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, আজ দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ বর্তমান অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে। তাই সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমদ আজম খান বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি মানে গণতন্ত্রের মুক্তি। খালেদা জিয়ার মুক্তি না হলে দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে না, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। সরকার চায় তাঁকে আটকে রেখে একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল করতে। তাই আমাদের জাতীয় ঐক্য গঠন করতে হবে।’

এই অনশনে আরো উপস্থিত ছিলেন—বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, আমান উল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, নিজানুর রহমান মিনু, আতাউর রহমান ঢালী, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, ইমরান সালেহ প্রিন্স, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদিকা শিরিন সুলতানা, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমদ খান, যুবদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি রফিকুল আলম মজনু প্রমুখ।

এ ছাড়া ২০ দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার, কার্যনির্বাহী পরিষদ সদস্য আবদুল হালিম, লেবার পার্টির একাংশের সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, কল্যাণ পার্টির সহসভাপতি শহীদুর রহমান তামান্না, ন্যাপের চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম, জাগপার সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান। এ ছাড়া প্রতীকী অনশনে একাত্মতা প্রকাশ করেন ঢাবির সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ।