ইভিএম কেনার প্রকল্প আগামী একনেক সভায় উঠবে

Looks like you've blocked notifications!
রাজধানীর শেরে বাংলানগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে আজ মঙ্গলবার একনেক বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : ফোকাস বাংলা

ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কিনতে একটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় প্রস্তাব করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল।

আজ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

আ হ ম মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘ইভিএম কেনার প্রকল্প আগামী মিটিংয়ে নিয়ে আসব আমরা। তো আমরা ফেইসওয়াইজ দেব। আস্তে আস্তে আমরা শিখব। শিখাবে আমাদের। এজন্য আমরা এটা নিয়ে খুব তাড়াহুড়া করছি না। আগামী নির্বাচনে এটা থাকবে কি না, এটা নির্বাচন কমিশনই ঠিক করবে। আর আরপিও পরিবর্তন হবে। যদি আরপিও পরিবর্তন হয়, পরীক্ষামূলকভাবেই ব্যবহার করা হবে। সুতরাং সীমিত আকারেই ব্যবহার করা হবে।’

আজ একনেকের এই সভায় সারা দেশে মাদ্রাসার উন্নয়নে পাঁচ হাজার ৯১৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকার একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। মাদ্রাসার উন্নয়ন প্রকল্পসহ ১৭ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকার মোট ১৮টি প্রকল্প অনুমোদিত হয়।

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, মাদ্রাসা ভবন নির্মাণের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সংশ্লিষ্ট এলাকার মাদ্রাসার দৈন্যদশা উল্লেখ করে জরুরি ভিত্তিতে মাদ্রাসায় নতুন ভবন নির্মাণের আবেদন করেন। এরই ভিত্তিতে প্রায় দুই হাজার মাদ্রাসা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

এর আওতায় প্রতি সংসদ সদস্য সর্বোচ্চ ২০ কোটি টাকার মাদ্রাসা ভবন নির্মাণ করতে পারবেন। আর প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত।

এ সময় মাদ্রাসার পাঠ্যক্রমে কিছু পরিবর্তন আনা হবে জানিয়ে মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘আপনারা জানেন, মাদ্রাসাগুলোতে এখন লেখাপড়ার কিন্তু কারিকুলাম কিছুটা পরিবর্তন হচ্ছে। যা বর্তমানে শিখানো হচ্ছে, সেগুলো আমরা বাদ দিব না। পাশাপাশি আমরা আরো জীবনের সাথে সম্পৃক্ত করে, উপজীব্য করে, আমরা আরো কিছু বিষয় সম্পৃক্ত করব। এটা আমরা বেশি সময় নিব না। শিগগির আরম্ভ করব। এর জন্য আমাদের সবকিছু করা আছে।’

আজকে অনুমোদিত ১৮ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রকল্প (নগর জীবনে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্প)। এই প্রকল্পে ব্যয় হবে এক হাজার ১৩৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া গ্রামীণ পরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে চার হাজার ৮১৯ কোটি  টাকা করে দ্বিতীয় সংশোধিত প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয় এই সভায়।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রকল্পের আওতাভুক্ত এলাকায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে আর্থিক ও ভৌত অভিগম্যতার উন্নয়ন করা হবে। যাতে নগরবাসীদের জন্য মানসম্মত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য সম্পর্কিত অপরিহার্য সেবা প্যাকেজের মাধ্যমে দরিদ্রদের সেবা নিশ্চিত করা যায়। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহীতার সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য দরিদ্র নারী, নবজাতক ও শিশুদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান এবং প্রকল্প এলাকায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা শক্তিশালী করা হবে।

একনেকের বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল প্রকল্প সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। ছবি : এনটিভি

মুস্তাফা কামাল বলেন, চীনের হোয়াংহো নদীর মতো বিপজ্জনক নদী যদি শাসন করা যায়। তাহলে আমরা কেন আমাদের নদীগুলোকে শাসন করতে পারব না। আমাদের দেশের প্রত্যেকটা নদী পর্যায়ক্রমে শাসন করা হবে। এ জন্য অনেক প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী মনে করেন, বন্যা না হলে দেশে যে খাদ্যশস্য আছে, তা দিয়েই জনগণের খাদ্য চাহিদা পুরোটা মিটবে।

মন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়ে বলেছেন, নতুনভাবে নির্মাণ হতে যাওয়া বধ্যভূমিগুলোর গায়ে লেখা থাকবে চিরঞ্জীব মুক্তিযোদ্ধারা, যাঁরা এখানে শুয়ে আছেন।

এক প্রশ্নের উত্তরে মুস্তাফা কামাল বলেন, দেশের পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। ফলে পণ্য সরবরাহে কোনো সমস্যা নেই। তাই আগামী মাসগুলোতেও মূল্যস্ফীতি বাড়বে না।

একনেকে অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে-রুরাল ট্রান্সপোর্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট-২, এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন খরচ ধরা হয়েছে চার হাজার ৮১৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। পটুয়াখালী জেলার লোহালিয়া নদীর ওপর নির্মাণাধীন পিসি গার্ডার ব্রিজের অসমাপ্ত নির্মাণকাজ সমাপ্তকরণ প্রকল্পে ব্যয় হবে ১০২ কোটি টাকা। ফরিদপুর জেলার আড়িয়াল খাঁ নদ তীর সংরক্ষণ ও ড্রেজিং প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২৯১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় হবে ৬৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প, চট্টগ্রাম জোনের জন্য খরচ ধরা হয়েছে এক হাজার ৪২১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৫১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় হবে ৪৮০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ঢাকার সাভারে পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ৩ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন গবেষণা রিঅ্যাক্টর ফ্যাসিলিটির সেফটি সিস্টেমের সমন্বয় সাধন, আধুনিকীকরণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও বর্ধিতকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৭৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। জামালপুর জেলার আটটি পৌরসভার ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৬১২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। রাজশাহী ওয়াসার ভূ-উপরিস্থিত পানি শোধনাগারের জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৭৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।

এ ছাড়া পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের ইতিহাস, ঐতিহাসিক ভবন সংরক্ষণ ও পারিপার্শ্বিক উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৬০৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক গণহত্যার জন্য ব্যবহৃত বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৪৪২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। পাঁচুরিয়া-ফরিদপুর-ভাঙ্গা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩৪৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা। জামালপুর-ধানুয়া-কামালপুর-রৌমারী-দাঁতভাঙ্গা জেলা মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩৩২ কোটি ১০ লাখ টাকা। বাংলাদেশের ১৩টি নদীবন্দরের প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৮০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের নির্বাচিত মাদ্রাসাগুলোর উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় হবে পাঁচ হাজার ৯১৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। বরিশাল বিভাগ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৯২০ কোটি টাকা।