যুক্তিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী

‘সভ্যদেশ হলে আসামিদের ফায়ারিং স্কোয়াডে নেওয়া হতো’

Looks like you've blocked notifications!

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতে বলা হয়, ‘যদি কোনো সভ্য দেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটতো তাহলে আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হতো এবং আসামিদের ফায়ারিং স্কোয়াডে নেওয়া হতো। কিন্তু এখানে দুর্ভাগ্য এ দেশে এতবড় ঘটনার পর আসামিদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং হত্যা চেষ্টা মামলা করা হয়েছে।’ 

আজ মঙ্গলবার পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ‌১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক শাহেদ নুর উদ্দীনের আদালতে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল তৃতীয়দিনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন।  

মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘পৃথিবীর কোন সভ্যদেশে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মতো ঘটনা ঘটলে তাহলে আসামিদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহী মামলা দায়ের করা হতো এবং আসামিদের ফায়ারিং স্কোয়াডে নিয়ে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতো। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখানে তা না করে চারদলীয় জোট সরকার জজ মিয়া নাটক সাজিয়েছে। একইসঙ্গে  আসামিদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করেছে। তাদের একটাই লক্ষ্য ছিল সেটা হলো বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা করা। কিন্তু তাদের সে চেষ্টা ব্যর্থ হলেও আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়। চিরতরে পঙ্গু হয়ে যায় শত শত নেতাকর্মী। এসব হিংস্রদের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড কামনা করে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক শেষ করছি।’

এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে জানান আগামীকাল তাঁরা কিছু আইনি পয়েন্টে যুক্তি উপস্থাপন করবেন। এরপর আদালত আগামীকাল পর্যন্ত আদালতের কার্যক্রম মুলতবি ঘোষণা করেন।

আসামিপক্ষে আইনজীবী এস এম শাহজাহান, নজরুল ইসলাম এবং রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান, মোশাররফ হোসেন কাজল উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গতকাল যুক্তিতে রাষ্ট্রপক্ষ জানান,ওই হামলা ঘটানোর জন্য মুফতি হান্নান দার্শনিক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি আফগানিস্তান পদ্ধতিতে এ দেশে ইসলামিক রাষ্ট্র কায়েম করতে চেয়েছিলেন। কারণ মুফতি হান্নানসহ এসব জঙ্গিরা আফগান যুদ্ধে অংশ নিয়ে অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান ও আইনজীবী ফারহানা রেজা উপস্থিত ছিলেন। মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধু কন্যা  শেখ হাসিনাকে হত্যা করে এ দেশকে পাকিস্তান বানানো।’

এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর বিচারক আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন সমাপ্ত করে আগামী ১০, ১১ ও ১২ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের আইনি যুক্তি উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য করেন আদালত।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। হামলায় আওয়ামী মহিলা লীগের সভানেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ নেতাকর্মী মারা যান।

এছাড়া আহত হন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফ, আমির হোসেন আমু, প্রয়াত আবদুর রাজ্জাক, প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, সাহারা খাতুন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, নজরুল ইসলাম বাবু, আওলাদ হোসেন, সাঈদ খোকন, মাহবুবা পারভীন, নাসিমা ফেরদৌস, রুমা ইসলামসহ শতাধিক নেতাকর্মী।

এই গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মতিঝিল থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়। পরে মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তর হয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবদুর রশিদ হয়ে মুন্সি আতিকুর রহমানের কাছে যায়।

অভিযোগ ওঠে, মুন্সি আতিক ও আবদুর রশিদ মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য জজ মিয়া নাটক সাজান। তাঁর কাছ থেকে মিথ্যা জবানবন্দি আদায় করা হয়। পরিবারকে প্রতি মাসে টাকা দেওয়ার কথাও বলা হয়। মাঝে এফবিআই ও ইন্টারপোল মামলার তদন্ত করে। ২০০৮ সালের ১১ জুন এ মামলার প্রথম অভিযোগপত্র দেন সিআইডির এএসপি ফজলুল কবীর। এতে বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টু, মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজি নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, মুফতি হান্নান ছিলেন ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী। তাঁদের লক্ষ্য ছিল শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যা করা। এ ছাড়া ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নিতে সে সময়ের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের ভূমিকা ছিল বলেও বলা হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে ৩ আগস্ট মামলাটির অধিকতর তদন্তের জন্য দায়িত্ব পান পুলিশের বিশেষ সুপার আবদুল কাহার আকন্দ। পুনঃতদন্ত শেষে ২০১০ সালের ৩ জুলাই তিনি আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

ওই অভিযোগপত্রে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব হারিছ চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদসহ ৩০ জনকে আসামি করা হয়। মোট ৫২ আসামির মধ্যে অন্য মামলায় মুফতি হান্নান ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় মামলা থেকে তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে আসামির সংখ্যা ৫০ জন।

গ্রেনেড হামলার দায় স্বীকার করে ঢাকার সিএমএম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আটজন আসামি। তাঁরা হলেন—হুজি নেতা প্রয়াত মুফতি হান্নান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি, শরীফ শাহেদুল আলম বিপুল, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, জাহাঙ্গীর আলম, আরিফ হাসান সুমন ও রফিকুল ইসলাম সবুজ।