‘সরকারের পদক্ষেপ আমরা পর্যবেক্ষণ করছি এবং সময় নিচ্ছি’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেশের বিশেষায়িত কোনো হাসপাতালে চিকিৎসার নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের ওপর দ্বিতীয়বারের মতো ‘নট টুডে’ (শুনানি আজ নয়) আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান।
গতকাল সোমবার খালেদা জিয়ার আবেদনটি হাইকোর্টের কার্যতালিকায় রাখা হয়েছিল। তবে শুনানির প্রস্তুতির জন্য আরো সময় প্রয়োজন উল্লেখ করে হাইকোর্টে সময় চেয়েছিলেন তাঁর আইনজীবীরা। এরপর মামলাটি মঙ্গলবারের কার্যতালিকায় এলে শুনানি না করে পুনরায় সময় নেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।
আজ শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, ‘আজকের জন্য আমরা আবেদনটি পরিচালনা করতে চাই না।’ আদালত এর কারণ জানতে চান।
এ পর্যায়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান আদালতকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে বেশ কিছু উন্নতি (আপডেট) হয়েছে। তাঁর চিকিৎসার জন্য এরই মধ্যে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।’
এ সময় আইনজীবী কায়সার কামাল বললেন, ‘বিএনপির প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। সেটার পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে পাঁচজন ডাক্তারের নাম চাওয়া হয়েছিল। সেই তালিকাও দেওয়া হয়েছে। যেহেতু সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে, তাই আমরা আশা করছি, অন্যান্য অধিকার ক্ষুণ্ণ হলেও উনাকে সরকার চিকিৎসা দেবে। সেই প্রত্যাশায় সরকারের পদক্ষেপ আমরা পর্যবেক্ষণ করছি এবং সময় নিচ্ছি। তবে আদালতকে জানিয়েছি, সরকার যদি খালেদা জিয়ার পর্যাপ্ত চিকিৎসা দেন, সে ক্ষেত্রে হয়তো আমাদের এ মামলা পরিচালনা না করাও হতে পারে।’
জবাবে আদালত বলেন, ‘আপনারা তো ইউনাইটেড হাসপাতালে তাঁর (খালেদা জিয়া) চিকিৎসা করতে চাইছেন বলে পত্র-পত্রিকায় দেখছি।’ এ সময় আইনজীবী কায়সার কামাল আদালতকে বলেন, ‘তাঁর উপযুক্ত চিকিৎসা যেখানে নিশ্চিত হবে, সেখানেই তাঁর চিকিৎসার দাবি করছি। তাঁর অসুস্থতা অনুযায়ী ট্রিটমেন্ট যেখানে হবে, সে ধরনের হাসপাতালেই তাঁর চিকিৎসা চাইছি।’
এ পর্যায়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের উদ্দেশে আদালত বলেন, “যেহেতু আপনারা বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপগুলো পর্যবেক্ষণ করছেন, সে ক্ষেত্রে ‘নট টুডে’ থাকল। তবে পরবর্তী সময়ে মামলাটি কার্যতালিকায় থাকবে।”
পরে সাংবাদিকদের আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, ‘সরকার বেআইনিভাবে খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটক করে রেখেছে। তিনি সেখানে বিনা চিকিৎসায় রয়েছেন। চিকিৎসা পাওয়া তাঁর সাংবিধানিক ও আইনগত অধিকার। সেই অধিকার থেকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সরকার তাঁকে বারবার বঞ্চিত করছে। এর প্রতিকার চেয়ে আমরা হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করি।’ তিনি বলেন, ‘সেই রিট আবেদনটি আজ হাইকোর্টের কার্যতালিকায় ছিল। আমরা আদালতকে জানিয়েছি, সরকার যেহেতু পদক্ষেপ নিচ্ছে, আমরা সে জন্য অপেক্ষা করে দেখি।’
এর আগে গত রোববার বিশেষায়িত বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তাঁর আইনজীবী কায়সার কামাল হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট দায়ের করেন।
গত ৫ সেপ্টেম্বর পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর হওয়া অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালতে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার শুনানি হয়। এ জন্য সেদিন দুপুর ১২টা ১২ মিনিটে খালেদা জিয়াকে একটি হুইলচেয়ারে করে আদালতে নেওয়া হয়। সেদিন শুনানিকালে বিচারক ড. আখতারুজ্জামানের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘জজ সাহেবের কাছে কোনো কথা বা নিবেদন করা যায় না। উনি তারিখ দিয়ে উঠে চলে যান। আমাদের কারো কথা শোনেন না। সরকারের হুকুমে এবং নির্দেশে তিনি সবকিছু পরিচালনা করছেন। আমার পায়ে ব্যথা। ডাক্তার আমাকে পা সব সময় উঁচু করে রাখতে বলেছেন। হাতেও প্রচণ্ড ব্যথা। আমাকে জোর করে এখানে আনা হয়েছে। আমি খুবই অসুস্থ। আমি ঘন ঘন কোনো হাজিরা দিতে পারব না। রায় তো লেখাই আছে। আমার হাত-পা প্যারালাইজড হয়ে যাচ্ছে। আপনাদের যা ইচ্ছা রায় দেন, যত খুশি সাজা দিয়ে দেন।’
আদালতে খালেদা জিয়া আরো বলেন, ‘এখানে যে আদালত বসানো হয়েছে এবং প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, তা আমার আইনজীবীরা জানেন না। এটা জানলে আমি আসতাম না। আদালত পরিবর্তন হলে কমপক্ষে সাত দিন আগে নোটিশ দিতে হয়। তা জানানো হয়নি। তড়িঘড়ি করে বিচারের জন্য এ কারাগারের ভেতরে আদালত বসানোর এ আয়োজন। মাননীয় আদালত, আমি জানি এ আদালতে আমি ন্যায়বিচার পাব না। সরকারের নির্দেশে এ কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। আমি আর এই আদালতে আসব না।’
এরপর আদালত মামলার পরবর্তী কার্যক্রম ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন। এ সময় পর্যন্ত এ মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন বহাল রাখেন আদালত।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক ড. আখতারুজ্জামান। এ মামলায় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ অন্য আসামিদের ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া অর্থদণ্ডও করা হয়। রায়ের পর পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়া বন্দি রয়েছেন।