ঘুরতে বেরিয়েছিল চারজন, অন্যজন বুদ্ধিতে পেল রক্ষা
কক্সবাজার শহর থেকে নিখোঁজ হওয়া পাঁচ স্কুলছাত্রকে ফিরে পেয়েছে তাদের পরিবার। পাঁচ ছাত্রের মধ্যে চারজন রাঙামাটি বেড়াতে যায় আর একজন অপহরণের শিকার হয়েছিল।
আজ সোমবার রাঙামাটি সদরের রিজার্ভ বাজার এলাকার হোটেল রাজু নামের এক আবাসিক হোটেলে চার ছাত্রকে পাওয়া যায়।
এ সময় উদ্ধার হওয়া নকীব, সাকিব, শাফিন ও গালিব সাংবাদিকদের বলে, বাড়িতে বললে বেড়াতে যেতে দেবে না। তাই না বলেই, তারা রাঙামাটিতে বেড়াতে চলে যায়। শুধু তারা চারজনই রাঙামাটিতে বেড়াতে আসে। আর কেউ ছিল না।
এরা সবাই কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
গতকাল রোববার সকালে প্রাইভেট পড়া ও স্কুলের কথা বলে বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর আজ বিকেল পর্যন্ত তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
কক্সবাজার সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামরুল আজম বলেন, ‘রোববার সকালে ওই চার শিক্ষার্থী প্রাইভেট পড়া ও স্কুলে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। আর বাড়ি ফিরে না আসায় রাতে শহরে মাইকিং করা হয়। পরে পরিবার ও স্কুল কর্তৃপক্ষ চার শিক্ষার্থী নিখোঁজের কথা উল্লেখ করে আজ সকালে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে।
কামরুল আজম আরো বলেন, ‘এরপর বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে ওই চার শিক্ষার্থী হোটেল রাজুতে আছে বলে নিশ্চিত হই। সংখ্যায় তারা চারজন হলেও সাকিব নামের এক শিক্ষার্থীর নামে রুম বুকিং করা হয়। রাঙামাটি সদর থানা পুলিশের সহযোগিতায় তাদের উদ্ধার করে স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।’
‘শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে তারা স্বেচ্ছায় চট্টগ্রাম ও রাঙামাটি এলাকায় বেড়াতে গেছে। তাদের সঙ্গে ফুটবলসহ খেলার নানা সরঞ্জাম রয়েছে’ যোগ করেন কামরুল।
নকীবের বাবা জহির আহমদ বলেন, ‘নকীবের সঙ্গে সর্বশেষ রোববার বেলা ১১টায় মোবাইল ফোনে কথা হয়। প্রাইভেটের টাকা দেওয়ার জন্য ৬০০ টাকাও নিয়েছিল সে। দুপুর ১২টায় স্কুল থাকলেও সে স্কুলে যায়নি বলে জানায় স্কুল কর্তৃপক্ষ। খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, তার মতো আরো তিন শিক্ষার্থী স্কুলে যায়নি এবং রহস্যজনকভাবে তারাও নিখোঁজ থাকে।’
গালিবের বাবা অ্যাডভোকেট আব্দুল আমিন বলেন, ‘বড় ভয়ে ছিলাম। কারণ চারপাশে প্রতিদিন অপহরণসহ নানা ভয়ানক খবরের জন্ম হচ্ছে। এ রকম কোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছি কি না, এ নিয়ে চরম উদ্বিগ্নতায় সময় পার করেছি। সবাইকে অক্ষত অবস্থায় এক সঙ্গে রাঙামাটিতে পাওয়া গেছে এটাই শুকরিয়া। এমন ঘটনার মুখোমুখি যেন অন্য অভিভাবককে না হতে হয়, সেজন্য সন্তানদের প্রতি আরো নজর দিতে সব বাবা-মাকে অনুরোধ করছি।’
এ বিষয়ে কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইব্রাহিম বলেন, ‘রোববার নকীব, সাকিব, শাফিন ও গালিব কেউ স্কুলে আসেনি। বিকেলে তাদের পরিবার থেকে যোগাযোগ করা হলে নিখোঁজের বিষয়টি আমাদের নজরে আসে। রাত অবধি বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করেও না পেয়ে সোমবার সকালে সবাই মিলে প্রশাসনের দ্বারস্থ হই।’
এদিকে কক্সবাজার শহরের বাহারছড়ার কবরস্থানপাড়ার বাসিন্দা ইমাদুল হকের ছেলে পৌর প্রিপারেটরি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র শিহাব উদ্দিনকে আজ বেলা ৩টার দিকে টেকনাফের হ্নীলা এলাকায় পাওয়া যায়।
নিখোঁজ শিহাবের মামা জালাল হোসেন জানান, শিহাব অপহরণের শিকার হয়েছিল। শিহাব তাদের জানিয়েছে, ৯ সেপ্টেম্বর স্কুলে যাওয়ার জন্য শহরের জাম্বুর মোড়ে টমটমের জন্য অপেক্ষা করে। এই সময় একটি মাইক্রোবাস তার সামনে এসে দাঁড়ায়। মাইক্রোবাসে থাকা তিনজন ব্যক্তি তাকে নাম ধরে ডাকে। কাছে গেলে তাকে টেনে গাড়ি তুলে নেয়। গাড়িতে তুলে তার মুখ চেপে ধরে। এরপর অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরে জ্ঞান ফিরলেও সে অজ্ঞানের মতো গাড়িতে পড়ে থাকে। আজ দুপুরে অপহরণকারীরা শিহাবকে অজ্ঞান মনে করে খাবার খেতে হ্নীলা বাজারে গাড়ি থেকে নামে। তখন শিহাব সঙ্গে সঙ্গে দৌড় দিয়ে একটি দোকানে গিয়ে আশ্রয় নেয়। অপহরণকারীরা প্রথমে তার পিছু নেওয়ার চেষ্টা করলেও পরে নিজেরা গাড়ি নিয়ে সটকে পড়ে। শিহাব পুরো ঘটনা খুলে বললে স্থানীয়রা তার পরিবারকে খবর দেয়।
পরে পরিবারের লোকজন তাকে হ্নীলা থেকে কক্সবাজারে নিজ বাড়িতে ফিরিয়ে আনে। স্কুলের ব্যাগ অপহরণকারীদের গাড়িতে রয়ে গেছে।
শিহাব অক্ষত অবস্থায় ফিরে আসায় আল্লাহর কাছে শুকরিয়া প্রকাশ করেন তার মা-বাবাসহ স্বজনরা।