অ্যাপস ছাড়াই চলছে ঝুঁকিপূর্ণ রাইড শেয়ার
‘সাইনবোর্ড একজন, ভাড়া ১০০।’
‘৫০ টাকা যাবেন? আমাকে মাতুয়াইল মেডিকেল নামিয়ে দিয়েন। সাইনবোর্ড যাওয়া লাগবে না।’
এভাবেই আজ শনিবার রাজধানীর টিকাটুলি হানিফ ফ্লাইওভারের সামনে একজন মোটরসাইকেল চালক যাত্রী খুঁজছিলেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মোটরসাইকেল চালক রাইড শেয়ারিং অ্যাপস পাঠাওয়ের মাধ্যমে সেবা দিয়ে থাকেন। কিন্তু তিনি আজ অ্যাপস না ব্যবহার করেই যাত্রী মোটরসাইকেলে তুলেন। এ বিষয়ে চালককে নাম জিজ্ঞাসা করতে গেলে তিনি নিজের পরিচয় না দিয়ে যাত্রী খুঁজতে থাকেন।
পরে তাঁকে গণমাধ্যম কর্মী পরিচয় দেওয়ার পরে জানান, তিনি থাকেন নারায়ণগঞ্জের সানারপাড়। প্রতিদিন সকাল থেকে রাজধানীতে রাইড শেয়ারিং করেন। কিন্তু ব্রিজের ভাড়া পরিশোধের জন্য অ্যাপসের বাইরেও লোক নেন।
এ বিষয়টি যাত্রীর জন্য অনিরাপদ জানালে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় অনেক পাঠাও, উবারের ড্রাইভাররা আর অ্যাপস ব্যবহার করেন না। কিছু কিছু স্পটে গেলে এখন যাত্রী এমনিতে পাওয়া যায়।’ এতে চালকের লাভ বেশি বলে জানান তিনি।
অনুপম নামের এক ব্যক্তি বলেন, তিনি প্রতিদিন টিকাটুলি থেকে গুলশান অফিস করেন। সঠিক সময়ে পৌছানোর জন্য পাঠাও খুঁজে নেন। মাঝে মধ্যে পাঠাও পেলেও অনেক চালক বলেন, আমার মোবাইলে সমস্যা আছে। আপনি রাইডিংয়ে ইন্টারেস্ট না বলে লগআউট করেন। যে পরিমাণ টাকা দেওয়া আছে তা পে করলেই হবে।
অনুপম বলেন, অনেক সময় আবার পাঠাওয়ের চালক ডেকে যাত্রী নেন। অ্যাপস ছাড়াই সে যাত্রী যাচ্ছে গন্তব্যে। তবে সেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ ও অনিরাপদ বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এদিকে আজ রাজধানীর কারওয়ানবাজারের সোনারগাঁও হোটেলের বিপরীতে ধানমণ্ডির ঝিগাতলাতে পাঠাও, উবার, ও ভাই-এর মোটরচালকদের দেখা যায় যাত্রী খুঁজতে। সবাই অ্যাপস বন্ধ রেখে গন্তব্যে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে ফৌজদারী অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাফফার হোসেন জানান, অ্যাপসের বাইরে যাত্রীদের পাঠাওসহ যে কোনো রাইডে যাওয়া চরম অনিরাপদ। কেননা কোনো ধরনের ছিনতাই বা সমস্যা হলে সে চালককে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। এতে করে রাজধানীতে অপরাধের মাত্রা বেড়ে যাবে।
গাফফার হোসেন বলেন, পাঠাও বা উবারের মতো প্রতিষ্ঠনের এ বিষয়ে আরো কঠোর মনিটরিং আবশ্যক। এছাড়া কিছুদিন আগে মাদক বহন করার অভিযোগে এক পাঠাও চালককে আটক করা হয়েছে। এভাবে যদি অ্যাপস ছাড়া কোনো যাত্রী উঠে তাহলে যে কোনো ধরনের বিপদে পড়তে পারে।
আইনজীবী বলেন, ধরুন কোনো চালক মাদকব্যবসায়ী। সে পাঠাওয়ের আড়ালে মাদক বহন করেন। কিন্তু কোনো অ্যাপস ছাড়া যদি যাত্রী তুলেন এবং সে মোটরসাইকেলটি পুলিশ তল্লাশি করলে যদি চালকের কাছ থেকে মাদক উদ্ধার হয়। সে ক্ষেত্রে রাইডারও ফাঁসতে পারেন। কারণ রাইডারের কাছে প্রমাণ হিসেবে কিছু নেই যে তিনি পাঠাওয়ের মাধ্যমে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন। আবার এর উল্টোও হতে পারে। যাত্রী মাদক বহন করছিলেন আর পাঠাও চালক তা জানতেন না। সে ক্ষেত্র যদি অ্যাপস থাকে তাহলে পুলিশকে দেখাতে পারবে যে সে নির্দোষ, আর যদি অ্যপস ব্যবহার না করে তাহলে চালক ফেঁসে যাবে। এ ক্ষেত্রে সবাইকে অ্যাপসের মাধ্যমে রাইডিং শেয়ার নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।