কুলিয়ারচরের কচু-লতি যাচ্ছে ইউরোপ-মধ্যপ্রাচ্যে
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলায় উৎপাদিত কচু ও কচুর লতা (লতি) রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপের যুক্তরাজ্য ও ইতালি এবং সৌদি আরব, কুয়েত, কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। এখানকার কচু ও লতি সুস্বাদু হওয়ায় দেশ-বিদেশে কদর বাড়ছে দিনকে দিন। অপরদিকে কম খরচ আর পরিশ্রমে বেশি লাভ হওয়ায়, এখানকার কৃষকদের মাঝেও আগ্রহ বাড়ছে কচু ও লতি চাষে।
দেশের মানুষের কাছে কচু ও লতি একটি সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর সবজি হিসেবে বিবেচিত। দেশের এমন কোনো অঞ্চল নেই, যেখানকার মানুষের কাছে এটি প্রিয় নয়। মেঘনা- ব্রহ্মপুত্রসহ অসংখ্য নদ-নদী আর খাল-বিলে বিধৌত অঞ্চল হিসেবে কুলিয়ারচরের বেলে-দোআঁশ মাটি কচু চাষের জন্য খুবই উপযোগী হওয়ায় এখানে কচুর ফলন বেশ ভালো হয়।
এদিকে অল্প খরচ আর পরিশ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকরা বেশ আগ্রহী হয়ে ওঠায় এখানে কচু ও লতির আবাদ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষকরা জানান, এক বিঘা কচু চাষে তাঁদের খরচ হয় হাজার বিশেক টাকার মতো। যা কচুর লতি বিক্রি করেই ওঠে আসে সেই খরচ। লাভের অংশ হিসেবে প্রতি বিঘা জমির কচু বিক্রি করা যায় ন্যূনতম ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা।
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার আগরপুর গ্রামের দুলু মিয়ার নারিকেলী জাতের কচুর প্রদর্শনী ক্ষেত। ছবি : এনটিভি
অন্যদিকে সবজিটির প্রচুর চাহিদা থাকায়, জমি থেকে তুলে স্থানীয় বিভিন্ন বাজারে নেওয়ামাত্রই তা বিক্রি হয়ে যায় বলেও জানিয়েছেন কৃষকেরা। দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা এখানকার বাজারগুলো থেকে প্রতিদিন এসে কচু ও লতি কিনে নিয়ে যান।
কুলিয়ারচরের রামদি ইউনিয়নের আগরপুর এলাকার কৃষক দুলু মিয়া জানান, তিনি প্রায় ২০ বছর ধরে এই কচুর আবাদ করছেন। এই ফসল আবাদ করে কখনও তাঁর লোকসান হয়নি। বর্তমানে তাঁর দেখাদেখি অন্যও কৃষকরাও আগ্রহী হয়ে এই কচু চাষ করায় পুরো এলাকায় এখন কচুর গ্রামে পরিণত হয়েছে বলেও তিনি জানান। তাঁর সঙ্গে একমত পোষণ করেন এলাকার অপর কচুচাষি জিন্নাত মিয়া।
অপরদিকে বাজরা তারাকান্দি এলাকার কৃষক জালাল উদ্দিন ও কাসেম মিয়া জানান, এই একটি ফসলই তাঁদের হাতে আছে, যেটি আবাদে তাঁদের কখনও লোকসান গুণতে হয়নি। অন্যদিকে বাজারে চাহিদা থাকায় বিভিন্ন এলাকার ব্যাপারিরা তাঁদের জমি থেকেই কচু ও কচুর লতি কিনে নিয়ে যান অনেক সময়।
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার আগরপুর বাজারে তোলা হয়েছে কচু ও লতি। ছবি : এনটিভি
ব্যবসায়ীরা জানান, এখানকার কচু ও কচুর লতার ব্যাপক চাহিদা থাকায় তাঁরা এখান থেকে কিনে নিয়ে বিক্রি করে নিজেরাও লাভবান হচ্ছেন।
সিলেট সদর উপজেলা সবজি ব্যবসায়ী কোরবান আলী জানান, তিনি সপ্তাহের তিনদিন এখানকার হাট ও কৃষকদের কাছ থেকে কচু ও কচুর লতা কিনে নিয়ে যান। পরে সেগুলো সিলেট থেকে যুক্তরাজ্য, ইতালি এবং সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্যাকেটজাত করে বিক্রি করেন।
ঢাকার কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি দীর্ঘ ২০ থেকে ২৫ বছর যাবত এখানকার কচু ও কচুর লতা কিনে কারওয়ান বাজারসহ ঢাকার বিভিন্ন বাজারে পাইকারি বিক্রি করছেন। ঢাকাসহ দেশের নগরগুলোতেও সবজিটির প্রচুর চাহিদা থাকায় শহিদুলসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ব্যবসায়ী খলিল মিয়া, ভৈরবের নিয়ামত উল্লাহ এ ব্যবসা করে বেশ ভালো আছেন বলে জানান।
কুলিয়ারচর কৃষি বিভাগ জানায়, এখানকার মাটি কচু চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই কচুর আবাদ হচ্ছে। এখানে সাদা ও নারকেলি-এই দুই জাতের কচুর আবাদ হয়ে থাকে। চলতি বছর উপজেলায় ৩০৫ হেক্টর জমিতে কচুর আবাদ হয়েছে। কচু চার মাস মেয়াদি সময়ের ফসল হওয়ায়, কচুর ফলন তুলে খুব সহজেই রোপা আমন ধানের চাষাবাদ করতে পারেন স্থানীয় কৃষকরা।
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার আগরপুর বাজারে তোলা হয়েছে কচুর লতি। ছবি : এনটিভি
কৃষি বিভাগ এখানকার কৃষকদের কচু চাষে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণসহ নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। ন্যাশনাল একগ্রিচালচার টেকনোলজি প্রজেক্টের আওতায় তাদেরকে বিষমুক্ত কচু আবাদে সেক্স ফেরোমেন ফাঁদ সরবরাহসহ মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা হাতে-কলমে শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান কুলিয়ারচর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রুনা আক্তার।