ডেঙ্গুতে ১১ জনের মৃত্যু, লক্ষণগুলোও আলাদা
দেশে আবারও বেড়েছে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কমপক্ষে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসা নিয়েছেন তিন হাজার ৩৭৪ জন।
আজ শুক্রবার এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানান, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের মৌসুম। এ সময়ে জ্বরের প্রকোপ বাড়াটা অনুমিত। তবে চিকিৎসকরা বাড়তি যে দিকটা নজরে এনেছেন তা হলো, অন্য বছরের চাইতে এই বছরের ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো আলাদা। তাই একে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই।
প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, ‘চিকুনগুনিয়াতে কিন্তু রোগীর মৃত্যুর হার কম, ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে কিন্তু সেটি না। যদি ঠিকমতো চিকিৎসা করা না হয় অথবা সাবধানতা অবলম্বন করা না হয়, তাহলে দ্রুত হেমোরেজিক ডেঙ্গুতে রক্তক্ষরণটা শুরু হয়। জ্বরটা যদি একটু সর্দি-জ্বরের বাইরে কিছু মনে হয়, তাহলে আমরা বলব রোগী যেন দ্রুত চিকিৎসকের কাছে আসে।’
রাজধানীর একটি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বিছানায় শুয়ে আছেন হোসনে আরা বেগম নামের ষাটোর্ধ্ব এক নারী। কিডনি সমস্যা থাকায় প্রতি সপ্তাহে কয়েকবার ডায়ালাইসিস করতে হয়। এ ছাড়া আছে নানা শারীরিক সমস্যা। এরই মধ্যে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে ডেঙ্গু জ্বর।
হোসনে আরা বেগমের মেয়ে বলেন, ‘ডেঙ্গু হওয়ার পরে আপনার রক্তবমিটাই বেশিরভাগ হইছে। তাঁর আরো ছিল বুকে ব্যথা, কথা বলতে পারত না। খাবার খেতে পারত না। বুকে অনেক পেইন ছিল। ডাক্তাররা বলতেছে বয়স হয়ে গেছে, তার পরে ডেঙ্গুতে রক্তের প্লাটিলেট ভেঙে যাচ্ছে। এই কারণে বিভিন্ন ওষুধ দেওয়া যাচ্ছে না তাঁকে।’
অন্যদিকে, রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন তৌফিক হোসেন। জানালেন, আশঙ্কাজনক অবস্থা থেকে ফিরে এসেছেন তিনি।
তৌফিক হোসেন বলেন, ‘যেহেতু ভাইরাল ফিবার হলে তিন দিন ওয়েট করতে হয়, তিন দিন ওয়েট করলাম। এর ভেতরে জ্বর একশ দুই, তিন, চার এ রকম যাচ্ছে। চেক করতে গেলাম হসপিটালে, মানে ট্রিটমেন্ট করার উদ্দেশ্যে। তো ওই সময় ব্লাড টেস্ট করার পরে ডেঙ্গু ধরা পড়ল।’
হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বরত কর্মকর্তা আয়েশা আখতার বলেন, ‘গত ১০ বছরের যে জরিপ সেই রিপোর্টটা বলে যে, এক বছর গ্যাপে গ্যাপে বাড়ে। এক বছর কম থাকলে পরের বছর বাড়ে। নরমালি বলা হচ্ছে যে, এটা আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু নাই। কিংবা আমরা তো এটা চেষ্টা করছি, পেপারে পত্রিকায় দিচ্ছি, টিভিতে আমাদের নিউজ যাচ্ছে। এবং এটার জন্যে আমাদের উইকলি মিটিংও হচ্ছে, সিটি করপোরেশনসহ। ডেঙ্গু প্রতিরোধ করার জন্যে আমাদের পানিটা ঢেকে রাখতে হবে। বাসাবাড়িতে টবের পানিটা ফেলে দিতে হবে, ডেইলি বেসিসে। প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের নিজেদের চেষ্টা করতে হবে, সচেতন হতে হবে, অ্যাওয়ারনেসটা ডেভেলপ করতে হবে।’
এদিকে, ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশা নিধনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সম্প্রতি ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করেছে। যেহেতু ছোট পাত্রে জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়ে, তাই ব্যক্তি পর্যায়ের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বেশি জরুরি বলে জানালেন চিকিৎসকরা।
এ ছাড়া সব সময় মশারির ব্যবহার ও জ্বরে আক্রান্ত হলে নিজে অ্যান্টিবায়োটিক না নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণের তাগিদ দিলেন তাঁরা।