সরকার ধর্মীয় উসকানি দিয়ে বিশৃঙ্খলা করতে চাইছে : রিজভী
সরকার ধর্মীয় উসকানি দিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব অভিযোগ করেন।
সম্প্রতি এক সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, জাতীয় ঐক্যের নামে সাম্প্রদায়িক চক্রান্ত হচ্ছে, বিএনপি ক্ষমতায় এলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।
আজকের সংবাদ সম্মেলনে মূলত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সমালোচনা করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব। এ সময় তিনি আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমেদের দেওয়া বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন।
আবহমান বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বিনষ্ট করে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে নেমে পড়েছেন ওবায়দুল কাদেররা—এমন মন্তব্য করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, এটা ‘অশুভ চক্রান্তের ইঙ্গিতবাহী’।
‘শান্তি ও সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে ধর্ম, বর্ণ, ভাষা নির্বিশেষে জনগণের নির্বিঘ্নে বসবাসের ওপর আওয়ামী নেতাদের বক্তব্য মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করার শামিল। তারা ক্ষমতায় থাকার জন্য রাষ্ট্রসমাজের স্থিতিকে ভেঙে ফেলতে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। ব্যর্থতার অন্ধগলিতে পথ হারিয়ে তারা এখন চক্রান্তের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। সেই জন্য তারা সাম্প্রদায়িকতার ধ্বজা তুলে কোনো খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাইছে।’
রিজভী বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের সাম্প্রদায়িক হামলার আশঙ্কা করছেন কেন? তাহলে কি তারাই সাম্প্রদায়িক হামলা করে কোনো রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করবেন কি না, এ প্রশ্ন জনগণের মধ্যে দীর্ঘতর হচ্ছে। এখনো বর্তমান সংবিধানে যতটুকু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের অধিকার আছে, তাঁর বক্তব্য সেই অধিকারকেও বিপন্ন করার উসকানি। জনবিচ্ছিন্ন সরকার ধর্মীয় উসকানি দিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইছে। আমরা তাদের পরিষ্কার বলতে চাই, কোনো প্রকার উসকানি দিয়ে লাভ হবে না। এ দেশের সব ধর্মীয় সম্প্রদায় অটুট ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে ঐক্যবদ্ধ। বরং আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডায় সবচেয়ে বেশি আক্রমণ হয়েছে। এই আমলেই সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত ও নিরাপত্তাহীন।’
এ সময় ব্লগার অভিজিৎ রায়, পুরোহিত, যাজকসহ ধর্মগুরুদের হত্যার দায় সরকার এড়াতে পারে না বলেও অভিযোগ করেন রিজভী।
‘বিএনপির আমলে রক্তক্ষরণের দৃষ্টান্ত নেই’
গত ১৯ আগস্ট ভোলা সরকারি কলেজ আয়োজিত ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে এক লাখ মানুষকে হত্যা করা হবে।
আজকের সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রীর এ বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘এ তথ্য কোন পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে সংগ্রহ করেছেন? কোন অপকর্মের কারণে আপনাদের এ আশঙ্কা? বিএনপি তো এর আগে অনেকবার ক্ষমতায় এসেছেন; কিন্তু কোথাও তো রক্তক্ষরণের কোনো দৃষ্টান্ত নেই। কোন অন্যায় অপরাধের কারণে এত ভয় পাচ্ছেন?’
উপরন্তু রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ‘বিরোধী দল ও মতের কোনো ব্যক্তিই ভোলা এলাকায় বসবাস করতে পারছেন না। আসলে ভবিষ্যতে ব্যাপক হত্যার ভীতি ছড়িয়ে জনসমাজে আতঙ্কজনক পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে। বিরোধী দল দমনে আওয়ামী নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করছেন? বিএনপি প্রতিহিংসা-প্রতিশোধের রাজনীতি করে না। বিএনপির সময়ই মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পেরেছে। এ ধরনের গুজবের বিষয়ে বাংলাদেশের জনগণ সতর্ক ও সজাগ।’
বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, ‘সরকার আতঙ্কে ভুগছে। গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, দুর্নীতি দুঃশাসনের কাদায় আটকে পড়ে এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও গ্রেপ্তারের মাধ্যমে মরণকামড় দিচ্ছে। পুরোনো মামলা চালু করা এবং নাশকতার অভিযোগ এনে দেশব্যাপী মামলায় জড়ানো হয়েছে নেতাকর্মীদের। অভিযোগের ধরন একই রকম। সুতরাং মামলাগুলো যে পরিকল্পিত, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।’