শ্রদ্ধায় ও ভালোবাসায় সমাহিত রমা চৌধুরী
শ্রদ্ধায় ও ভালোবাসায় সমাহিত হলেন একাত্তরের বীরাঙ্গনা রমা চৌধুরী। আজ সোমবার বিকেলে বোয়ালখালী পোপাদিয়া গ্রামে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
এর আগে সকাল ১০টায় রমা চৌধুরীর মরদেহ চট্টগ্রামে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হয়। সেখানে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) উপকমিশনার এস এম মোস্তাইন হোসাইনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল রমা চৌধুরীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে।
রমা চৌধুরীকে শেষ শ্রদ্ধা জানায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বিভাগীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, সাংবাদিক ইউনিয়ন, রাজনীতিবিদ, সংস্কৃতিকর্মীসহ বিভিন্ন সংগঠন।
এ সময় জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
এরপর রমা চৌধুরীকে তাঁর দীর্ঘদিনের বাসস্থান চট্টগ্রাম নগরীর চেরাগী পাহাড় এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও বিভিন্ন সংস্কৃতিকর্মীরা তাঁকে শ্রদ্ধা জানান। পরে বোয়ালখালী পোপাদিয়া গ্রামে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
রমা চৌধুরীর ছেলে জহর লাল চৌধুরী বলেন,‘একাত্তরের জননী একটা বই আছে আমার মায়ের। ওইখানে অনেক কিছু বলে গেছে আমার মা। দশ খণ্ডের একটা বই বের করার কথা ছিল একাত্তরের জননী। প্রথম খণ্ড বের করে আমার মা চলে গেলেন পৃথিবী ছেড়ে। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। যদি পারি,আমার মনে হয় আমার মা আমাকে অনেক কিছু বলে গেছে অনেক অসমাপ্ত পাণ্ডুলিপি আছে, যদি পারি আরো কিছু বই বের হবে। আমার মা কিছুই পাননি। দিয়েই গেছেন। মায়ের কোনো চাহিদা ছিল না। এমনকি তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কিছু নেননি। তাঁর ভিতরে চাপা অভিমান ছিল।’
চট্টগ্রামের থিয়েটার ইনস্টিটিউটের পরিচালক আহমেদ ইকবাল হায়দার বলেন,‘কয়জন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রেখে দিয়েছে? ইতিহাস তো বিকৃত হতে পারে। কিন্তু এটা তো অনুভব করা যায়। উনাদের নিভৃতে শ্রদ্ধা জানানো ছাড়া আর কিছু নাই। উনি নিজেকেও ফোকাস করতে চান নাই।’
রমা চৌধুরীর একাধিক গ্রন্থ প্রকাশক আলা উদ্দিন খোকন বলেন, ‘উনাকে দেখেছি আজকে ২৪টা বছর উনি খালি পায়ে হেঁটেছেন। তাঁকে নিয়ে বই বিক্রি করেছি, ঘুরেছি। এই জায়গায় আজকে পৌঁছেছিলেন উনি। ১৮টা বই উনি নিজেই প্রকাশ করেছেন, নিজেই বিক্রি করেছেন। কোনো লাইব্রেরিতে কোনোদিন দেননি। সবকিছু মিলিয়ে উনি আরো যে সম্মানটা পাওয়া উচিত ছিল পাননি।’