ইভিএম ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং রচনার পটভূমি : রিজভী

Looks like you've blocked notifications!
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এনটিভির পুরোনো ছবি

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষ থেকে এক-তৃতীয়াংশ আসনে ইলেকট্রিনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের যে পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে, তা ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং রচনার পটভূমি’ বলে উল্লেখ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

বিএনপির এই নেতা এ ধরনের ‘তোড়জোড়কে দূরভিসন্ধিমূলক ও হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ উল্লেখ করে বলেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন কাজ করছে। নির্বাচন কমিশন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম নামে এক বিতর্কিত মাধ্যম ব্যবহারের চিন্তা করছে যা জনগণের ইচ্ছের বিরুদ্ধে। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের দূরভিসন্ধিমূলক পরিকল্পনা মূলত ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং রচনার পটভূমি। ইভিএম নিয়ে বিশ্বজুড়ে যখন হতাশা ও সমালোচনার ঝড় বইছে তখন এই ধরনের উদ্যোগ কার ইশারায় এবং কিসের ইঙ্গিতবাহী তা জাতির কাছে সুস্পস্ট।’

গতকাল মঙ্গলবার কমিশন সচিবালয়ে কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে। সে লক্ষ্যে ইসি দেড় লাখ ইভিএম কেনার জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে। নির্বাচনের আগে আইন পাস, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতসহ সবকিছু ঠিক থাকলে একাদশ সংসদ নির্বাচনে এক-তৃতীয়াংশ আসনে ইভিএম ব্যবহার করার মতো কমিশনের সক্ষমতা থাকবে।’

এরপর আজ বুধবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব ইভিএমের বিরোধিতা করে এসব কথা বলেন। অবশ্য বিএনপি এর আগেও বিভিন্ন সময়ে ইভিএমের বিরোধিতা করেছে।

রিজভী আরো বলেন, ‘একমাত্র সরকারি দল ছাড়া নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুধীজন, পেশাজীবী সংগঠনগুলোর অধিকাংশই আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার জন্য মতামত পেশ করেছিল। ইসিও দীর্ঘদিন ধরে বলে এসেছে, সব দল না চাইলে ইভিএম ব্যবহার করা হবে না। কিন্তু বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ও শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামতকে উপেক্ষা করে তড়ি-ঘড়ি করে আরপিও সংশোধনের মাধ্যমে ইভিএম ব্যবহারের উদ্যোগ ও নানা ষড়যন্ত্রের কথা শুনা যাচ্ছে।’

‘ইভিএমে ভোট জালিয়াতি ও ভোট চুরির অফুরন্ত সুযোগ থাকবে বলেই বাংলাদেশের অবৈধ সরকার নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে ইভিএম ব্যবহারে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভোটারবিহীন সরকারের দিক থেকে ভোটাররা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বলেই এখন ডিজিটাল মেশিন কারচুপির ওপর নির্ভর করছে অবৈধ শাসকগোষ্ঠী’, যোগ করেন বিএনপির এই নেতা।

‘মাত্র চারটি দেশে ইভিএম ব্যবহার হয়’

রুহুল কবির রিজভী তাঁর আজকের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ভারতের প্রভাশালী ‘ইকোনোমিক টাইমস’ পত্রিকার প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে দাবি করেন, ‘বিশ্বের ২০০টি দেশের মধ্যে মাত্র চারটি দেশে ইভিএম ব্যবহার করা হয়। সেসব দেশেও ইভিএম ব্যবহার নিয়ে তুমুল সমালোচনা চলছে। উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলো আজ পর্যন্ত ইভিএমের গ্রহণযোগ্য ব্যবহার ঘটেনি। যেসব অল্প সংখ্যক দেশে ইভিএম আংশিকভাবে ব্যবহার করা হয় সেখানেও ভোট প্রক্রিয়ায় ও ফল নির্ধারণে ভয়াবহ কারচুপির প্রমাণ মিলেছে।’

বিএনপির এই নেতা আরো দাবি করেন, ‘বিভিন্ন গবেষণা ও অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থেকে এটি সুস্পষ্ট যে, ইভিএম সহজে হ্যাক করা যায়। চাইলে এক মুহূর্তের মধ্যে ইভিএমের সব ফলাফল পরিবর্তন করা সম্ভব। ভোটারের সংখ্যা বাড়ানো-কমানো থেকে শুরু করে যেকোনো প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটকেও পাল্টে দেওয়া যায়।’

‘ইভিএম দূর থেকেও ম্যানিপুলেট করা যায়’ বলেও দাবি রিজভীর। তিনি বলেন, ‘ইভিএম দিয়ে ভোটারের নাম, বয়স, ঠিকানা, মোবাইল ফোন, পরিবার ইত্যাদিসহ যাবতীয় তথ্য একেবারেই পাওয়া যায়। এর অপব্যবহারের মাধ্যমে হুমকি-ভীতি প্রদান থেকে শুরু করে ভোটারের অনুপস্থিতিতে তাঁর নামেও জালভোট দেওয়া সম্ভব।’

‘নেতাকর্মীদের বাড়িতে পুলিশ হানা দিচ্ছে’

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, ‘রাজধানীসহ সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে পুলিশ হানা দিচ্ছে। এমনকি পরিবারের লোকজনের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছে।’

রিজভী আরো বলেন, ‘গণতন্ত্রের অবশিষ্ট ক্ষীণ দিগন্ত রেখাকে অন্ধকারে ঢেকে দেওয়ার জন্যই রাষ্ট্রযন্ত্রের জান্তব অত্যাচার নামিয়ে আনা হয়েছে বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর। সরকার নিজেদের পতন ঠেকাতে আতঙ্ক তৈরি করতেই দেশব্যাপী ধরপাকড় শুরু করেছে।’