পেট্রল ঢেলে আগুন : কলেজছাত্রীকে বাঁচানো গেল না
টানা নয় দিন যন্ত্রণা ভোগ করে অবশেষে মারা গেলেন পেট্রলের আগুনে দগ্ধ কলেজছাত্রী মুক্তি খাতুন (২২)। গতকাল সোমবার রাত ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান তিনি।
মুক্তির ভাই নাছির উদ্দিন আজ মঙ্গলবার সকালে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আজই ঢাকা মেডিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে মুক্তির লাশ পাবনায় আনা হবে।
এদিকে, দীর্ঘ নয় দিনেও প্রধান আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
পেট্রলের আগুনে নিহত মুক্তি খাতুনের বাবা মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক বলেন, তাঁর মেয়েকে হত্যার মামলা করায় বিভিন্নভাবে আসামিরা তাঁকে হুমকি দিচ্ছে। আসামিরা আদালত থেকে জামিন নিয়ে এসে দেখে নেবে বলেও প্রচার করে আসছে। তিনি বাড়ি থেকে সাঁথিয়া থানা পুলিশের পাহারায় পুলিশের ভ্যানে যাতায়াত করছেন। মামলার প্রধান আসামি নাগডেমরা গ্রামের শাহজাহানের ছেলে সালাম ও কেসমত আলীর ছেলে জাহিদ গ্রেপ্তার না হওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
মোজাম্মেল হক কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি এবং আমার পরিবার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। স্থানীয় এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা সালামের পক্ষে থানায় তদবির করছে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাঁথিয়া উপজেলার নাগডেমরা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতা মোজাম্মেল হক এবং আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা আবদুস সালামের সমর্থকদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলছিল। গত ১৯ আগস্ট দিনের বেলায় সালাম ও জাহিদের নেতৃত্বে ৩০/৪০ জনের একদল সন্ত্রাসী মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় মোজাম্মেল হক বাড়ি না থাকায় সন্ত্রাসীরা তাঁর মেয়ে পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের দর্শন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী মুক্তি খাতুনকে পেট্রল ঢেলে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।
নাগডেমরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন-উর রশিদ বলেন, ‘শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন জ্বালানো ঘটনাটি জঘন্য ও বর্বরতা।’ ন্যক্কারজনক এই ঘটনার তিনি তীব্র নিন্দা ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
সাঁথিয়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কয়েকজন সদস্য বলেন, সালামের সমর্থকদের সঙ্গে মোজাম্মেলের সমর্থকদের বিরোধ দীর্ঘদিনের। থানা পুলিশ শক্ত হাতে সঠিক দায়িত্ব পালন করলে এ ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটত না।
অন্যদিকে, এলাকায় আর কোনো সংঘর্ষ যাতে না হয়, সে জন্য মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেলের বাড়িতে অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করেছে থানা পুলিশ।
সাঁথিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল মজিদ জানান, মুক্তি মারা যাওয়ার খবর তিনি শুনেছেন। তবে নিশ্চিত নয়। তিনি বলেন, যদি মারা যায়, তবে আগে দায়ের করা মামলা এখন হত্যা মামলায় রূপ নেবে। ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মূল আসামি সালাম ও জাহিদ পালিয়ে থাকায় গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে শিগগির তারা গ্রেপ্তার হবে। তিনি আরো বলেন, এলাকায় কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা যেন না ঘটে, সে জন্য সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়েন আছে। বাদীপক্ষ সম্পূর্ণ নিরাপত্তায় রয়েছে।