‘সীমান্তে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে কাজ করছে বিজিবি’
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম বলেছেন, ‘মাদক, মানবপাচার এবং শিশু ও নারী পাচার নিয়ে সীমান্তে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে কাজ করছে বিজিবি।’ তিনি জানান, বিএসএফের সঙ্গে বিজিবির বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকায় এ বছর ভারতীয় সীমান্তে একটি মাত্র হত্যাকাণ্ড ছাড়া আর কোনো হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি।
আজ সোমবার রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের দুর্গম এলাকা সাহেবনগর বিওপি এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের দিয়ার মানিকচক বিওপি ক্যাম্প পরিদর্শন করে এসব কথা বলেন বিজিবির মহাপরিচালক। এ সময় তিনি সাহেব নগর বিওপিতে একটি আমগাছের চারা রোপণ করেন। পরে নিজে মোটরসাইকেল চালিয়ে সীমান্ত এলাকা ঘুরে দেখেন।
কোরবানির পশুর চামড়া যাতে ভারতে পাচার হতে না পারে, সেদিকে বিজিবি সতর্ক আছে উল্লেখ করে বিজিবিপ্রধান বলেন, ‘এ পর্যন্ত দেশের কোনো সীমান্ত দিয়ে ভারতে চামড়া পাচারের কোনো অভিযোগ আসেনি।’ তিনি জানান, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সীমান্ত সুরক্ষার লক্ষ্যে ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় ‘বর্ডার সার্ভেইল্যান্স অ্যান্ড রেসপন্স সিস্টেম’ স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিজিবি প্রধান বলেন, ‘বিএসএফের সঙ্গে বিজিবির সৌহার্দ্য ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কারণেই এখন সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা কমে এসেছে। গত এক বছরে সীমান্তে ভারতের অভ্যন্তরে মাত্র একজন হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেও সেটি কমিয়ে শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
সাফিনুল ইসলাম বলেন, ‘সীমান্তে নিরাপত্তায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দিনাজপুরের হিলি ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরাঞ্চলে সার্ভেইল্যান্স প্রযুক্তি স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সীমান্ত মনিটরিং করে দ্রুততম সময়ের মাধ্যমে রেসপন্স টিম পৌঁছাতে পারবে।’
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘চোরাচালান, মাদক, অস্ত্র, নারী ও শিশু পাচার রোধে বিজিবির জিরো টলারেন্স নীতির ফলে সীমান্তে সফলতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের পুরো সীমান্তে বিজিবির কঠোর নজরদারির ফলে চলতি বছর এ যাবৎ বিজিবির অভিযানে ৬০০ কোটি টাকার অধিক চোরাচালান ও মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া চোরাচালান ও অবৈধভাবে সীমান্তে অতিক্রমের দায়ে ৪ শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।’
রাজশাহী সীমান্ত ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘বিজিবির কঠোর নজদারির ফলে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে অবৈধভাবে গরু প্রবেশ রোধে আমরা অনেকাংশে সফল হয়েছি। একইভাবে আমাদের দেশ হতে যাতে গবাদি পশুর একটি চামড়াও অন্য দেশে পাচার না হয় সেজন্য সর্বাত্মক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টহল পরিচালনার পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।’
মহাপরিচালক বলেন, ‘রাজশাহীর এই দুর্গম সীমান্তে টহল পরিচালনা করা আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দুর্গম সীমান্তে সীমিত জনবল দিয়ে টহলের মাধ্যমে সীমান্ত পুরোপুরি সুরক্ষিত করা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার। এ জন্য টহলের পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সীমান্ত সুরক্ষার লক্ষ্যে ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় বর্ডার সার্ভেইল্যান্স অ্যান্ড রেসপন্স সিস্টেম স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। রাজশাহীর সীমান্ত এলাকায় এই প্রযুক্তির ব্যবহার করা যায় কি না এবং এখানে টহল পরিচালনার জন্য উপযুক্ত কী ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায়, আমরা সেটা নিয়ে কাজ করছি। আশা করা যায়, অচিরেই এগুলোর প্রয়োগ করা সম্ভব হবে এবং এই সীমান্ত আরো সুরক্ষিত হবে।’
এ সময় বিজিবির রংপুর রিজিয়নের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার কর্নেল আনোয়ার সাদত আবু ফুয়াদ, রাজশাহী ১ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল শামীম মাসুদ আল ইফতেখার এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৫৩ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল সাজ্জাদ সারওয়ার উপস্থিত ছিলেন।