শিশু মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকদের জামিন বাড়ল
অবহেলায় শিশু নাফিদা খান রাইফার মৃত্যুর অভিযোগ এনে দায়ের করা মামলায় চট্টগ্রামের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ চার চিকিৎসকের জামিনের মেয়াদ বাড়িয়েছেন আদালত।
আজ সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য চার চিকিৎসকের পক্ষে অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত আবেদন করেন।
অন্যদিকে, বাদীর পক্ষে জামিন বাতিলের আবেদন করেন রেজাউল করিম চৌধুরী। দুই পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক আবু সালেহ মো. নোমান প্রত্যেক চিকিৎসককে ১০ হাজার টাকা বন্ডে এ মামলার পুলিশি প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত জামিনের আদেশ দেন।
মামলা দায়েরের পর চার চিকিৎসক হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়েছিলেন। সেই জামিনের মেয়াদ ছিল আজ সোমবার পর্যন্ত। মেয়াদ শেষে আজ চার চিকিৎসক নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
জামিন পাওয়া চার চিকিৎসক হলেন শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. বিধান রায়, ডা. দেবাশীষ সেনগুপ্ত, ডা. শুভ্র দেব, বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. লেয়াকত আলী।
শুনানি শেষে আদালত পর্যবেক্ষণ দিয়ে বলেন, ‘চিকিৎসকদের আরো বেশি সংবেদনশীল, কেয়ারফুল হওয়া উচিত। এ ধরনের ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক।’
গত ২৯ জুন দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর মেহেদীবাগের ম্যাক্স হাসপাতালে রাইফা খান মারা যায়। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গলার ব্যথার কারণে কিছু খাচ্ছিল না রাইফা। ওই কারণে বিকেলে তাকে ভর্তি করা হয় ম্যাক্স হাসপাতালে।
শিশুটির বাবা সাংবাদিক রুবেল খান জানান, হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই নানা অব্যবস্থাপনা দেখতে পাচ্ছিলেন তাঁরা। জরুরি বিভাগে বসিয়ে রাখা হয় দুই ঘণ্টা। এর মধ্যে রাইফাকে অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন দেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। দেখা যাচ্ছিল যে যখনই ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছিল, তখনই শিশুটি ছটফট করতে শুরু করে। পরে তিনি ইনজেকশনটি বদলে দিতে হাসপাতালটির চিকিৎসকদের অনুরোধ করেন।
তখন হাসপাতাল থেকে একজন নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডা. সুমন তালুকদারের পরামর্শ নেন। তিনি দুটি এক্স-রে পরীক্ষা দেন। সেই দুটিতে খারাপ কিছু ধরা পড়েনি বলেও দাবি করেন রুবেল খান। এরপর ডা. সুমন তালুকদার একজন শিশু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করতে বলেন।
এরপর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. বিধান রায় চৌধুরীকে ‘অনকলে’ আনে রাইফার পরিবার। রুবেল খানের দাবি, কেবিনে এসে শিশুটিকে পরীক্ষা না করেই কর্তব্যরত চিকিৎসকের দেওয়া ব্যবস্থাপত্র দেখেই তিনি ওষুধ লিখেন। আগের ব্যবস্থাপত্রের সঙ্গে কেবল একটি ইনজেকশন যোগ করেন।
রাতে রাইফার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। একপর্যায়ে প্রচণ্ড খিঁচুনি ওঠে শিশুটির। রাত সাড়ে ১২টার দিকে মারা যায় রাইফা।
এ ঘটনায় দুটি আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতালের দুই চিকিৎসক দেবাশীষ সেনগুপ্ত ও শুভ্র দেবের চিকিৎসায় অবহেলা প্রমাণিত হলে তাঁদের অব্যাহতি দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া আরেক চিকিৎসক ডা. বিধান রায় চৌধুরীকে হাসপাতালে আর না ডাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ ঘটনায় গত ১৮ জুলাই চট্টগ্রামের চকবাজার থানায় মামলা করেন নিহত সাংবাদিক রুবেল খান।