মামলার রায় আইনমন্ত্রী স্থির করেন : ফখরুল
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন ও দুর্বল করার হাতিয়ার হিসেবে সরকার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়কে প্রভাবিত করতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিচার বিভাগের ওপর সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।
আজ সোমবার সকালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও সরকারি দলের নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্য নিয়ে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।
‘কোনো মামলার রায় এখন দেশের বিচার বিভাগ নয়, আইনমন্ত্রী স্থির করেন।’
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ‘কোন মামলার রায় কবে হবে, তা এখন আর বিচারকরা নয়, দেশের আইনমন্ত্রী স্থির করেন। বিচার বিভাগের ওপর কতটা নিয়ন্ত্রণ থাকলে এটা তিনি করতে পারেন, এটা সহজেই বোধগম্য।’
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী জনসভায় গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হয়ে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তিন দিন পর ২৪ আগস্ট আইভি রহমান মারা যান। এ হামলায় ২৪ জন নিহত হয়েছিলেন। আহত হয় অন্তত ৫০০ জন।
সম্প্রতি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় হত্যা মামলার বিচারিক আদালতের রায় দেওয়া সম্ভব হবে। রায়টি হলে দেশ আরো একটি দায় থেকে মুক্তি পাবে।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি ৫২ জন। এর মধ্যে ১৮ জন পলাতক। এ মামলায় আদালতে ২২৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। ৫২ আসামির মধ্যে তিনজনের অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাঁদের মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এই তিন আসামি হলেন জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান ও শরীফ সাহেদুল আলম বিপুল।
এখন ৪৯ আসামির বিচার চলছে। এর মধ্যে এখনো বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরীসহ ১৮ জন পলাতক। বাবর, আবদুস সালাম পিন্টু, সাবেক তিন আইজিপি ও পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিন নেতা আবদুল মাজেদ বাটসহ ২৩ আসামি কারাগারে এবং আটজন জামিনে রয়েছেন।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সম্পূরক অভিযোগপত্রে তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ষড়ন্ত্রকারী হিসেবে আরো অনেকের নাম আসে। মামলায় মোট আসামি হয় ৪৯ জন।
আজকের সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, ‘এই মামলায় তারেক রহমানের (বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) সম্পৃক্ততা না থাকলেও দলীয় লোক আবদুল কাহার আকন্দকে দিয়ে তদন্ত করিয়ে তাঁকে জড়ানো হয়েছে।’
‘রায় কী হবে, কাদের কীভাবে জানেন’
সেপ্টেম্বর মাসে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার রায় হতে পারে, যার মধ্য দিয়ে জাতির আরেকটি কলঙ্ক মোচন হবে—আইনমন্ত্রীর এ মন্তব্য করার পরপরই রাজনৈতিক মহলে এ নিয়ে কথা-পাল্টাকথা চলছে।
এরই মধ্যে গত শুক্রবার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভানেত্রী ও মরহুম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানের ১৪তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধা জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আগামী মাসে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় হলে বিএনপি আবারও রাজনৈতিক সংকটে পড়বে।’
পরদিন শনিবার চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহু লেনবিশিষ্ট সড়ক ট্যানেল নির্মাণকাজ পরিদর্শনে শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালেও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘এই ঘটনাটির নীলনকশাকারী বিএনপি। সে অবস্থায় আমরা বলতেই পারি, বিএনপির এর দায় এড়াতে পারে না। আমরা আশা করব, রায় বাস্তবতার নিরিখেই হবে। যা ঘটেছে সেই নিরিখেই বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে এই রায় দেবে। এবং সে জন্যই আমি বলেছি, বিএনপির অনেক নেতার জড়িত হওয়ার আশঙ্কা আছে।’
মামলার রায় নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এমন বক্তব্যের জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী মামলার রায় হওয়ার আগেই কী করে বলতে পারেন, এই মামলার রায় হওয়ার পর বিএনপি নেতৃত্ব সংকটে পড়বে। এর অর্থ হলো, তিনি জানেন যে কী রায় হতে যাচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বলা এসব বক্তব্যকে কোনো বিচারেই গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসনের পক্ষে বলা যাবে না। একমাত্র স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই এমন ঘটনা সম্ভব।’
আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে নতুন সংকট সৃষ্টির পরিবর্তে বিদ্যমান সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানেরও আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।