রোকসানা নির্যাতন : নড়াইলে মানববন্ধন, নেওয়া হচ্ছে ঢাকায়
ঢাকার ওয়ারীতে বাসাবাড়িতে কাজ করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার শিশু রোকসানার (১০) সুচিকিৎসা ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে নড়াইলে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় লোকজন। গুরুতর অবস্থায় শিশুটিকে আবারও ঢাকায় নেওয়া হচ্ছে।
আজ রোববার সকাল ১০টায় নড়াইল আদালত চত্বরে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে বক্তারা নির্যাতনকারীদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন জেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান সালমা রহমান কবিতা, নড়াইল প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট আলমগীর সিদ্দিকী, অ্যাডভোকেট এস এ মতিন, জেলা পরিষদ সদস্য রওশন আরা কবীর, নারীনেত্রী আঞ্জুমান আরা, কাজী হাফিজুর রহমান। পরে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
ঢাকার ওয়ারীতে একটি বাড়িতে কাজ করতে গিয়ে আট মাস ধরে নির্যাতনের শিকার হয়েছে শিশু রোকসানা। এখন সে নড়াইল সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার সারা শরীরে আঘাতের কালো দাগ, দীর্ঘদিনের লাগাতার নির্যাতনের চিহ্ন, দগদগে ক্ষতও রয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। কৃত্রিম উপায়ে চলছে শ্বাস-প্রশ্বাস।
এ ঘটনায় ওয়ারীর টিপু সুলতান রোডের আসাদুল্লাহ, তাঁর স্ত্রী সোনিয়া ও শ্যালক ইব্রাহিমের নামে একটি মামলা হয়েছে।
দীর্ঘ নির্যাতনের একপর্যায়ে রোকসানা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেললে তাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করে পরিবারটি। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে স্বজনদের খবর দিয়ে ঢাকায় নিয়ে ১৭ আগস্ট রাতে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় রোকসানাকে। তাকে ১৯ আগস্ট নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনরা। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রবীর কুমার বিশ্বাস জানান, শিশু রোকসানাকে নির্যাতনের ঘটনায় তার বাবা রাসেল শেখ বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। মামলায় চারজনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
রোকসানার বাবা রাসেল শেখের পাঁচ সদস্যের সংসার। পরের জমির ওপর ঘর বেঁধে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান তিনি। থাকেন লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের বাহিরপাড়া গ্রামে। বড় মেয়ে রোকসানা। ঢাকার ওয়ারী এলাকার ব্যবসায়ী আসাদুল্লাহর বাসার গৃহকর্মীর কাজ করত সে। এ বছরের জানুয়ারি মাসে প্রতিবেশী চান্দু মোল্লার স্ত্রী সালেহার সঙ্গে ঢাকায় যায় রোকসানা। সালেহা বেগম এক বছর ধরে রোকসানাকে ঢাকায় নেওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালান।
রোকসানার বাবার অভিযোগ, তার মেয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তাকে নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন। খুন্তির ছ্যাঁকার দাগও রয়েছে।
রোকসানার মা রত্না বেগম বলেন, মোবাইলে মেয়ের সঙ্গে কথা হতো। কথা শুনে মনে হতো সে ভালো নেই। ১৭ আগস্ট তার অসুস্থতার খবর জানতে পারেন। তাকে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অজ্ঞান অবস্থায় ছিল রোকসানা। পরে নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
রত্না বেগমের দাবি, প্রতিবেশী সালেহা, বাড়ির মালিক আসাদুল্লাহ ও তাঁর স্ত্রী সোনিয়া বেগম রোকসানার ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন। তিনি নির্যাতনকারীদের বিচার চান এবং মেয়ের উন্নত চিকিৎার জন্য সকলের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
নড়াইল জেলার সিভিল সার্জন ডা. আসাদ উজ জামান মুন্সি জানান, শিশুটি ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি ছিল। সেখান থেকে নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতসহ পোড়ার চিহ্ন রয়েছে, বর্তমানে শিশুটির অবস্থা খুবই খারাপ। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। শিশুটি যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা হবে।
নড়াইল জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত নির্দয়-নির্মম। এর সঙ্গে যারা জড়িত, অতিদ্রুত তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।