নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত হলেই ফিরবেন রোহিঙ্গারা
গণহত্যা বন্ধ, নিরাপদ প্রত্যাবাসনসহ অন্যান্য বিষয়ে নিশ্চিত হলেই নিজ মাতৃভূমি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ফিরে যাবেন সেখান থেকে সেনাবাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরাণার্থীরা।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞের’ মুখে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা নাগরিকদের পালিয়ে আসার আজ এক বছর পূর্ণ হলো। আজ শনিবার দিনটিকে ‘কালো দিবস’ বলে পালন করলেন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা।
কক্সবাজারের উখিয়া ও বালুখালীর বিভিন্ন ক্যাম্পে আজ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করে এই শরণার্থীরা।
নিজেদের কর্মসূচির মাধ্যমে রোহিঙ্গারা পাঁচটি দাবি তুলে ধরে। দাবিগুলো হলো- রাখাইনে গণহত্যা বন্ধ করা, আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিচার, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়া, নিরাপদ প্রত্যাবাসন, প্রত্যাবাসনের পর নিরাপদে চলাফেরার অধিকার।
দাবিগুলো মেনে নিলেই মিয়ানমারে ফিরে যাবেন বলে জানান কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো, আমরা এখানে আসছি এক বছর হইছে। আমরা বহুত জায়গা বদল করছি। আমরা এখনো বিচারের ফলাফল পাই নাই। আমরা নির্যাতনের শিকার হইছিলাম এইদিন। এই কারণে, সেই অশান্তির দিনটি আজকে পালন করছি।’
প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে মুহিবুল্লাহ বলেন, ‘এখানে আমরা পাঁচটা ডিমান্ড লিখি দিছি। ওই পাঁচটা ডিমান্ড যদি ওরা মাইনা নেয়, তাইলে আমাদের ফিরিয়ে নিতে চাইলে আমরা ফিরে যাব।’
বিক্ষোভ মিছিলে রোহিঙ্গারা নিরাপদ প্রত্যাবাসনের দাবি সংবলিত বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুন প্রদর্শন করে।
এ সময় ক্যাম্প থেকে কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কে নামার চেষ্টা করলে পুলিশ মিছিলকারীদের বাধা দেয়। পরে পুলিশ তাদের ক্যাম্পের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। এরপর রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের ভেতরেই মানববন্ধন এবং বিক্ষোভ সমাবেশ করে।
রোহিঙ্গা শরণার্থীরা জানায়, তারা রাখাইনে নিজ গ্রামে ফিরে যেতে চায়। তবে, অবশ্যই মিয়ানমারের নাগরিকত্ব নিয়ে, রোহিঙ্গা পরিচয়ে। এমনভাবে ফিরে যেতে চায় যাতে আবারও শরণার্থী হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে না হয়।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল খায়ের বলেন, ‘আজ সকাল থেকেই হঠাৎ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গারা রাস্তায় নামার চেষ্টা করে। এতে পুলিশ বাধা প্রদান করে এবং ক্যাম্পের ভিতরে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের বিক্ষোভ সমাবেশ করার অনুরোধ জানানো হয়। পরে উখিয়া ও বালুখালীর বিভিন্ন ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা তাদের কর্মসূচি পালন করে। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে রোহিঙ্গারা প্রতিবাদস্বরূপ তাদের কর্মসূচি পালন করে। তবে এতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’
গত বছর ২৫ আগস্ট উখিয়া-টেকনাফ ও নাইক্যংছড়ির বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে থাকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। গত এক বছরে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে সাত লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা। এদিকে,আগে থেকেই আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাসহ বর্তমানে উখিয়া-টেকনাফে ৩০টি ক্যাম্পে রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ১১ লাখ ২০ হাজার।
এর আগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনার মুখে মিয়ানমার সরকার নতুন আসা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে গত নভেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও তাতে কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।