রোহিঙ্গা সংকটের বছর পার, সমাধান হয়নি
রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞ ও নিপীড়নের এক বছর পার হলো আজ শনিবার (২৫ আগস্ট)। গত বছরের এই দিনে শুরু হওয়া মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযান জন্ম দেয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এই মানবিক সংকটের।
রাখাইনে নিপীড়নের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশের সীমান্তে ঢল নামে মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর। কক্সবাজারে পালিয়ে এসে নিজে বাঁচলেও স্বজনদের হারিয়েছেন অনেকে। নিরাপত্তা পেলে ফিরতে চান নিজ জন্মভূমিতে। তবে নিপীড়নের দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে বসবাস করা অনেকেই মনে করে, রাখাইনে ফিরে যাওয়া তাদের জন্য নিরাপদ নয়। বাংলাদেশ-মিয়ানমার যৌথ চুক্তি স্বাক্ষরের পর গত ২৩ জানুয়ারি থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা ছিল।
কয়েক শতক ধরে মিয়ানমারে বসবাস করলেও নাগরিকত্ব পায়নি রোহিঙ্গারা। এমনকি শিক্ষা, ধর্ম চর্চার মতো বিভিন্ন অধিকার থেকেও রোহিঙ্গাদের বঞ্চিত রাখা হয়েছে। চলমান সংকটের মধ্যেও মিয়ানমারের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করবে না। তাদের সঙ্গে আছে বৌদ্ধভিক্ষুরা।
গত বছর ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশটির বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বৌদ্ধ-প্রধান রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর দমন অভিযান শুরু করলে সাত লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এর আগে থেকেই বিভিন্ন সময় পালিয়ে আসা তিন লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছিল। সব মিলিয়ে বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের আশ্রয়ে রয়েছে।
সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশ আহ্বান জানিয়েছে। হামলার জন্য মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনীকে দায়ী করেছে আন্তর্জাতিক মহল। জাতিসংঘ বিভিন্ন সময় বলেছে, রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নিধনের কাজে মেতেছে মিয়ানমার।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ এরই মধ্যে নির্যাতন, হত্যায় জড়িত মিয়ানমারের কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, সম্পদ জব্দ করাসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে তারা। দেশটির নেত্রী ও শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চি আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র সমালোচিত হয়েছেন, তা এখনো চলছে। তাঁকে দেওয়া বিভিন্ন সম্মাননা ফিরিয়ে নিয়েছে অনেক সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয়। এরই মধ্যে সু চি বলেছেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টি বাংলাদেশের বিষয়।
এর আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মিয়ানমার সরকার কেবল কথা বলছে, কোনো কাজ করছে না। তারা প্রত্যাবাসন বিষয়ে সমঝোতায় সই করলেও তা মানছে না।
এরই মধ্যে জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক, রেডক্রসসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন। কক্সবাজারে স্থাপিত রোহিঙ্গা শিবিরেও তাঁরা গেছেন। বিভিন্ন দেশের রাজনীতিক ও কূটনীতিকরা ঘুরে প্রত্যক্ষ করেছেন রোহিঙ্গা সংকট। কিন্তু এক বছরের ব্যবধানেও কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি।
অভিনয় জগতের প্রিয়াংকা চোপড়া, কেট ব্লানশেটসহ বড় তারকারা কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প দেখে গেছেন। তাঁরা রোহিঙ্গা সংকটে বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সর্বশেষ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ১৩২ জন আইনপ্রণেতা (এমপি) মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতার বিচারের দাবি জানিয়েছেন। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, পূর্ব তিমুর। এমপিরা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে বিচারের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান।