রাজধানীতে কোথায় কখন ঈদ জামাত
ঈদুল আজহা উপলক্ষে এবার রাজধানীতে ৪০৯টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে এসব ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়েছে। সিটির কর্মকর্তারা জানান, দুই সিটিতেই প্রতিটি ওয়ার্ডের মসজিদ, মাঠ ও ঈদগাহে চার বা পাঁচটি করে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র কার্যালয়ের কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় জানান, ডিএসসিসির ৫৭টি ওয়ার্ডের প্রত্যেকটিতে চারটি করে এবং জাতীয় ঈদগাহ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাঠসহ মোট ২৩০টি স্থানে ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়েছে।
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা এস এম মামুন জানান, এই সিটি করপোরেশনের ৩৬টি ওয়ার্ডের মোট ১৭৯টি ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়েছে।
জাতীয় ঈদগাহে রাজধানীর প্রধান ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন গতকাল সোমবার জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের সার্বিক প্রস্তুতি পরিদর্শন শেষে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘ঈদ-উল-আযহার প্রধান জামাত সকাল ৮টায় জাতীয় ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হবে। প্রায় এক লাখ মুসল্লির একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করতে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ওই সময় আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকলে জাতীয় ঈদগাহের এর পরিবর্তে সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে।’
নারীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে নারী মুসল্লিদের জন্য ঈদের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এখানে পাঁচ হাজার নারী মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।
মেয়র আরও জানান, ‘ঈদগাহ মাঠে অজুর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে। নামাজ আদায়ের আগে একসঙ্গে দেড়শ জন পুরুষ মুসল্লি এবং ৫০ জন নারী মুসল্লি অজু করতে পারবেন। পানযোগ্য পানি এবং পর্যাপ্ত টয়লেট থাকবে। এবারই প্রথমবারের মতো ঈদগাহ ময়দানের বাইরেও বোতলজাত পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ঈদগাহে মুসল্লিদের জরুরি স্বাস্থ্য সেবাদানে মেডিকেল টিম প্রস্তুত থাকবে। সার্বক্ষণিক নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং জেনারেটর স্ট্যান্ডবাই থাকবে।’
বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও ঈদ জামাত চলাকালীন আবহাওয়াজনিত কারণে বজ্রপাত ঠেকাতে ঈদগাহে বজ্র প্রতিরোধক দণ্ড স্থাপন করা হয়েছে এবং জরুরি টেলিফোন বুথ ও পর্যাপ্ত গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলেও জানান মেয়র।
ইসলামিক ফাউন্ডেশরে পরিচালক ড. মোহাম্মদ হারুনূর রশীদ জানান, জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে দেশের প্রধান ঈদ জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ এহ্সানুল হক। বিকল্প ইমাম হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ঢাকার মিরপুরের জামেয়া আরাবিয়া আশরাফিয়ার মুহতামিম মাওলানা সৈয়দ ওয়াহিদুযযামান।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে এবারও পাঁচটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত হবে সকাল ৭টায়। এর পর আরও চারটি জামাত হবে যথাক্রমে সকাল ৮টা, ৯টা, ১০টা ও পৌনে ১১টায়। প্রথম জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মুহিবুল্লাহিল বাকী নদভী, দ্বিতীয় জামাতে তেজগাঁও রেলওয়ে জামে মসজিদের ইমাম ড. মাওলানা মুসতাক আহমাদ, তৃতীয় জামাতে মহাখালী হোছাইনিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. মাওলানা নজরুল ইসলাম আল ফারুক, চতুর্থ জামাতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ এবং পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মাওলানা আব্দুর রব মিয়া ইমামতি করবেন।
জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদুল আজহার জামাতের আয়োজন করা হয়েছে। এখানে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, জাতীয় সংসদের হুইপ, সংসদ সদস্য ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এলাকার মুসল্লিরা জামাতে অংশ নেবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামিআয় ঈদের দু’টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায় এবং দ্বিতীয় জামাত হবে সকাল ৯টায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল মেইন গেইট সংলগ্ন মাঠে সাড়ে ৭টায় ও ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হল লনে সকাল ৮টায় পৃথক দু’টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
এ ছাড়া রাজধানীর আরামবাগে দেওয়ানবাগ শরিফে ঈদের তিনটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথমটি সকাল ৮টা, দ্বিতীয়টি সকাল সাড়ে ৯টা এবং শেষ জামাত সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে।
এ দিকে দিনাজপুর থেকে জানানো হয়েছে, উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ মাঠ দিনাজপুরের গোর এ শহীদ বড় ময়দানের ঈদের নামাজ আদায়ের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এই ঈদগাহ ময়দানে এক সঙ্গে পাঁচ লাখেরও বেশি মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই জামাতে ইমামতি করবেন দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালের ইমাম মাওলানা মুহাম্মদ আবুল কাশেম (কাশেমী)।
জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিমের তত্ত্বাবধানে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে ২১ একর জায়গার উপর এই ঈদগাহ ময়দানটি প্রস্তুত করা হয়েছে। ২০১৭ সালে পাঁচ লক্ষাধিক মুসল্লি এখানে প্রথম ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করে। মুসল্লিরা যাতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নামাজ আদায় করতে পারেন সেজন্য ঈদগাহ ময়দান প্রস্তুত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুশৃঙ্খলভাবে ঈদের জামাত আদায়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ থেকে জানানো হয়েছে, প্রতি বছরের মতো এবারও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের বৃহত্তম ঈদের জামাত সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে। এই জামাতে ইমামতি করবেন শহরের মার্কাস মসজিদের ইমাম মাওলানা হিফজুর রহমান। এটি শোলাকিয়ার ১৯১তম ঈদুল আজহার জামাত।
এরই মধ্যে সেখানেও ঈদ জামাতের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চলছে ঈদ জামাতের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।