কামারপাড়ায় শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কিশোরগঞ্জের ভৈরব ও কুলিয়ারচরের কামারপাড়ায় এখন চলছে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা। ঈদ একেবারে দোরগোড়ায় হওয়ায় নতুন আর কোনো হাতিয়ার বানানোর অর্ডার নেওয়া হচ্ছে না। আগের অর্ডার সরবরাহ করা আর পুরনো হাতিয়ারে শান দেওয়া নিয়েই এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মেশিনের তৈরি চীন বা থাইল্যান্ডের দা, বটি, ছুরি, চাকুর দাপটে আগেকার মতো বছরব্যাপী কামারপাড়ার ব্যস্ততা আর নেই। তাই কামাররা এখন বছর ধরে অপেক্ষায় থাকেন কোরবানির ঈদের জন্য। এই ঈদের সময় পুরনো হাতিয়ার শান দিতে আর নতুন হাতিয়ার বানাতে তাঁদের ডাক পড়ে বলে জানান কুলিয়ারচরের মাধবদীর কামারপাড়ার সুনীল কর্মকার ও অজিত কর্মকার।
ভৈরবের রানীর বাজার এলাকার হরিপদ চন্দ্র কর্মকার বলেন, সারা বছর কোনো মূল্য না থাকলেও কোরবানির ঈদ নিকটে হওয়ায় তাদের এখন বেশ কদর। তাঁদের ঘিরে লোকজন প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছেন কে কার আগে নিজের কাজটি করিয়ে নেবেন। অবশ্য বছরের অন্য সময়েও কৃষি ও নিত্য ব্যবহার্য যন্ত্রপাতি- কোদাল, দা কাঁচি, খন্তি ইত্যাদি বানিয়ে তাঁরা বিক্রি করেন বলে জানান হরিপদ কর্মকার।
হাতে বানানো হাতিয়ার অনেক মজবুত হলেও চাকচিক্যের কারণে ইদানীংকালে মানুষ মেশিনে বানানো হাতিয়ারের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেন আরেক কামার প্রভাত কর্মকার। একদিকে কামারদের চাহিদা কমে গেছে অন্যদিকে নিজেদের হাতিয়ার বানানোর কাঁচামাল লোহা আর কয়লার দাম বছর বছর বাড়ছে, তা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
প্রভাত জানান, কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁদের বানানো জিনিসপত্রের দামও স্বাভবিকভাবেই বেড়ে গেছে। কিন্তু ক্রেতারা আর তাঁদের জিনিস বেশি দামে কিনতে চান না। তবে মেশিনের তৈরি জিনিসপত্র টেকসই না হওয়ায় অনেক ক্রেতা একবার কেনার পর আর মেশিনে বানানো হাতিয়ার না কিনে কামারদের দ্বারস্থ হন বলে জানান তিনি।
এদিকে কামারদের কাঁচামাল বিক্রয়কারী হার্ডওয়ার ব্যবসায়ীরা জানান, সারা বছর তাদের বিক্রি কম থাকলেও কোরবানির ঈদ উপলক্ষে তাদেরও বিক্রি বেড়ে যায়। এবারও যথারীতি তাই হচ্ছে। এই বেচা-কেনা ঈদের আগের রাত পর্যন্ত চলবে বলে জানান, কুলিয়ারচর বাজারের হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী নূর চাঁন মিয়া।
অন্যান্য মওসুমের মতো এবারও তাদের বিক্রি ভালোই হচ্ছে বলে জানান ভৈরব বাজার শাহী মসজিদ রোডের হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী আবুল খায়ের। একই অভিমত চকবাজার এলাকার ফুটপাত ব্যবসায়ী নরেন্দ্র কর্মকার ও লালমোহন কর্মকারের। তবে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি ও চায়নিজ জিনিসপত্রের প্রভাবে নিজেদের ব্যবসায় মন্দার কথা তাঁরাও জানান।
এদিকে কোরবানির পশুর মাংস কাটার আরেকটি অনুষঙ্গ কাঠের গুড়ি। এটি তৈরির কাজ যারা করেন তাঁরাও কোরবানি উপলক্ষে বিক্রি বেড়ে যায় বলে জানান। আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে তাদের দোকানেও চলছে ক্রেতাদের দৌড়-ঝাঁপ।
মাংস কাটার এই কাঠের গুড়ির ব্যাবসায়ী ভৈরব বাজারের কাঠপট্টি এলাকার মুর্শিদ মিয়া জানান, প্রতি বছর ঈদ মৌসুমে একশ থেকে আড়াইশ টাকা দরে প্রায় ৫০০ থেকে ৭০০ কাঠের গুড়ি তিনি বিক্রি করেন তিনি।