দেশি গরুর বেশি কদর
ঈদুল আজহা উপলক্ষে সিরাজগঞ্জের হাটগুলোতে প্রচুর গরু-ছাগল উঠেছে। গতবারের চেয়ে দাম ভালো পাওয়ায় কৃষক ও খামারিরাও খুশি। তবে ক্রেতারা বলছেন, দাম বেশি হওয়ায় তাঁদের বাজেটে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আর খামারিরা বলছেন, খৈল-ভুসিসহ খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় গরু লালন-পালনে ব্যয় বেশি হওয়ায় দাম একটু বেশি।
তবে খামারিদের আশঙ্কা, অবৈধ পথে ভারতীয় গরু দেশে প্রবেশ করলে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এ জন্য সরকারকে কঠোর হওয়ার দাবি জানান তাঁরা।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, ঈদে লাভের আশায় কৃষকরা কঠোর পরিশ্রম করে গবাদি পশু লালন-পালন করেছেন। এবার জেলায় সাড়ে তিন লাখের বেশি গবাদি পশু কোরবানির উপযোগী করা হয়েছে। কৃষক ও খামারিরা ন্যায্যমূল্য পেলে আগামীতে আরো বেশি গরু লালন-পালনে আগ্রহী হয়ে উঠবেন। ভারতীয় গরু যাতে অবৈধ পথে দেশে আসতে না পারে, সে জন্য মন্ত্রণালয় থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানায় সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
গতকাল শনিবার জেলার সলঙ্গা হাটে গিয়ে দেখা যায়, ছোট-বড় প্রচুর কোরবানির গরু এবার হাটে। ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু হওয়া ঐতিহ্যবাহী সলঙ্গা হাটটিতে সাধারণত প্রতি সোমবার গরু-ছাগল-মহিষ ও ভেড়া বিক্রি হয়। জেলার স্বনামধন্য হাট হওয়ায় এখানে ক্রেতার সংখ্যা বরাবরই বেশি থাকে। এখানে প্রতি হাটের দিন প্রায় সাত থেকে আট হাজার গরু ওঠে বলে জানা যায়।
এবারে কোরবানি উপলক্ষে সর্বনিম্ন ৩৫ হাজার থেকে শুরু করে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন দামের গরু বিক্রি হচ্ছে। তবে ৫০ থেকে ৯০ হাজার দামের গরুর প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ তুলনামূলক বেশি বলে জানা গেছে। ছাগলের চাহিদাও প্রচুর।
হাটে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে সলঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওয়াহেদুজ্জামান বলেন, হাটকে ছিনতাইকারী, অজ্ঞান পার্টি ও দালালমুক্ত করার জন্য পোশাকধারী পুলিশ ছাড়াও সাদা পোশাক ও গোয়েন্দা পুলিশ নিযুক্ত করা হয়েছে। জাল নোট শনাক্ত করতে বসানো হয়েছে মেশিন।
হাট ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতারা কোনো দালালের মাধ্যমে না কিনে, সরাসরি কৃষক ও খামারিদের কাছ থেকে চাহিদা অনুযায়ী কোরবানির পশু কিনছেন। হাটে এখনো ভারতীয় গরু না ওঠায় বিক্রেতারা অনেকটা স্বস্তিতে রয়েছেন।
গরু কিনতে আসা সলঙ্গা থানার মালতি নগর গ্রামের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম হুদা জানান, হাটে প্রচুর পরিমাণে দেশি গরু উঠেছে, তবে গরুর দাম এবারে গতবারের চেয়ে একটু বেশি। অবশ্য তিনি এ কথাও বলেন, ভারতীয় গরু হাটে না ওঠায় এ বছর একটু বেশি দামে গরু ক্রয় করতে হচ্ছে।
থানার পাঁচলিয়া গ্রামের শরিফুল ইসলাম নামের আরেক ক্রেতা বলেন, ‘হাটে দালালদের দৌরাত্ম্য না থাকায় আমরা এই হাট থেকেই গরু কিনে থাকি।’
এদিকে, তাড়াশ উপজেলার মাধবপুর গ্রামের ফজলার রহমান খান, সলঙ্গা থানার সাতকুর্শী গ্রামের জিল্লুর রহমানসহ আরো কয়েকজন বিক্রেতা বলেন, ‘দেশি গরুর চাহিদা এবারে বেশি। তিন মাস আগের সময়ের চেয়ে যেকোনো গরুর দাম বর্তমানে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেশি। তাতে আমাদের লাভ কিছুটা বেশি হচ্ছে।’
এ ছাড়া পাবনার মির্জাপুর উপজেলার চয়ড়া গ্রামের রানা মাসুদ, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার কয়ড়া গ্রামের ইয়াসিন আলীসহ কয়েকজন ছাগল বিক্রেতা জানান, বিভিন্ন জেলার ব্যাপারীরা এ হাট থেকে ছাগল কিনতে আসায় এ বছর ছাগলের দাম একটু বেশি।
হাট কমিটির পক্ষ থেকে ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে উল্লেখ করে ইজারাদার ইকবাল হোসেন জানান, এ পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
খামারে বা বাড়িতে পোষা গরুই ক্রেতাদের চাহিদায় প্রাধান্য পাচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। পশু আমদানির ওপর দাম নির্ভর করলেও এ বছর সব ধরনের পশুর দামই তুলনামূলক একটু বেশি বলে মনে করছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে।
ইজারাদার ইকবাল জানান, এবারের ঈদে বিভিন্ন এলাকার খামার ও গৃহস্থদের বাড়ির গরু তাঁদের হাটে প্রাধান্য পাচ্ছে। অন্য বছরের মতো এবারও স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা খামারের সংখ্যা কম নয়। এ বাদেও গৃহস্থরা অনেকেই বাড়িতেই নিজ উদ্যোগে তিন-চারটি করে দেশি গরু লালন-পালন করেছেন। ওই সব গরু এবারে ক্রেতাদের প্রধান টার্গেট।