শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ি নৌরুটে যাত্রীর চাপ নিয়ে শংকা
অসংখ্য ডুবোচর ও তীব্র নাব্যতা সংকটে দেশের ব্যস্ততম শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে ফেরি চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ডুবোচরে ধাক্কা লেগে আক্রান্ত হচ্ছে এ রুটের লঞ্চ ও স্পিডবোট। ঈদ আসন্ন হওয়ায় ভরা বর্ষার মাঝে ফেরির অচলাবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে লঞ্চে যাত্রীর অতিরিক্ত চাপ নিয়ে শংকা দেখা দিয়েছে।
ভরা বর্ষায় লঞ্চে অতিরিক্ত বোঝাই প্রতিরোধে গত কয়েক বছর ফেরি প্রস্তত থাকলেও এবার ফেরিই অচল হয়ে পড়েছে। এর ফলে বেড়েছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তারা আসন্ন ঈদে যাত্রীদের বিকল্প রুট বিবেচনায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
২০১৪ সালের আগস্ট মাসেই পিনাক-৬ লঞ্চ ট্র্যাজিডিতে অর্ধশত যাত্রী নিহত ও বহু মানুষ নিখোঁজ হয়েছিল।
গত কয়েক বছর জুলাই-আগস্টে ভরা বর্ষা মৌসুমে কোরবানির ঈদ পড়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে এ রুটে লঞ্চ ও স্পিডবোটের পাশাপাশি ফেরিতেও যাত্রী পারাপার করা হয়। চলতি বছর রোজার ঈদেও ফেরিতে যাত্রীর ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে তীব্র স্রোতের সঙ্গে বিপুল পলি জমে এ নৌরুটের লৌহজং টার্নিং ও বিকল্প চ্যানেলে অসংখ্য ডুবোচর ও নাব্যতা সংকট সৃষ্টি হয়। ফলে ফেরি চলাচল দফায় দফায় বন্ধ ও স্থায়ীভাবে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
গত ৭ আগস্ট ডুবোচরে ধাক্কা লেগে একটি ফেরির তলা ফেটে ডোবার উপক্রম হলে কোনোমতে চরে ঠেকিয়ে রক্ষা পায়। সাতটি ড্রেজার দিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারায় এ রুটের তিনটি শক্তিশালী রো রো ফেরিসহ চারটি ফেরি পাটুরিয়া স্থানান্তর করা হয়েছে। সীমিত আকারে নদীর তলদেশ ঘেষে হালকা যানবাহন নিয়ে কোনোমতে চলছে পাঁচ-সাতটি কে-টাইপ ফেরি। এ রুটের লঞ্চ ও স্পিডবোটগুলোও ডুবোচরে ধাক্কা লেগে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিএ এ জন্য দায়ী করছে ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেওয়া, পদ্মা সেতুর পাইলিং ও টার্নিং পয়েন্টের উজানে ব্যাপক নদী ভাঙনকে।
এ অবস্থায় দুই-তিনদিনের মধ্যে ঈদে ঘরেফেরা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের পদ্মা পাড়ি দেওয়া নিয়ে চরম শংকা ও ভীতি দেখা দিয়েছে। ফেরি পারাপারে অচলাবস্থা দ্রুত সমাধান না হলে লাখো যাত্রীর চাপ ভরা বর্ষার মাঝে কতটা নিরাপদ থাকবে- এ প্রশ্নই সবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। উত্তাল পদ্মায় বিপুল যাত্রী সামাল দেওয়া এ রুটের ৮৭ লঞ্চে ও দুই শতাধিক স্পিডবোটে কতটা সক্ষম তা এখন দেখার বিষয়।
সংশ্লিষ্টরা তুলে ধরেন ডুবোচরে কারণে লঞ্চ ও স্পিডবোট আক্রান্ত হওয়ার চিত্র। জনপ্রতিনিধিরা এবারের দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের ঈদ যাত্রা নিয়ে শংকিত।
বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক এম এম আজগর আলী জানান, স্রোতের তীব্রতা ও বিপুল পলি পড়ার ভয়াবহতা।
বিআইডব্লিউটিএর কাঁঠালবাড়ি ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী ঘাটের টার্মিনাল পরিদর্শক মো. আক্তার হোসেন ফেরি স্বাভাবিক না হলে এই ভরা বর্ষায় যাত্রীদের বিকল্প রুট ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
মাদারীপুরের শিবচর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)জাকির হোসেন আশ্বাস দেন পদ্মা পার হতে যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করার।
তীব্র স্রোতে উত্তাল পদ্মায় ফেরি অচলাবস্থার অবসান না হলে নৌদুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়বে বলে শংকা দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের।