‘শরীরটা শহরে থাকলেও আমি গ্রামে’
'ঈদ কাটাতে মায়ের কাছে ফিরছি, যাচ্ছি শিকড়-বাকড় আর মেঠো পথের টানে! আহ, কত দিন পর মা-বাবার মুখ দেখব। আপনজনদের সঙ্গে ঈদ করব। শরীরটা আমার শহরে থাকলেও আমি গ্রামে।'
গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডে বসে কথাগুলো বলছিলেন বৈশাখী চৌধুরী।
বৈশাখী চৌধুরী ঢাকাতে থাকলেও গ্রামের বাড়ি যশোর। পেশায় একজন গণমাধ্যমকর্মী। তিনি বলেন, ‘গত রোজার ঈদে ছুটি পাইনি। বছরের একটি ঈদ বাবা-মায়ের সঙ্গে করার সুযোগ হয়। প্রায় এক বছর পরে যশোর যাচ্ছি। তবে অপেক্ষার কারণেই এই যাত্রা এত মধুর।’
শুধু বৈশাখী নন, প্রচুর ঘরমুখো মানুষ বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডে। কেউ কাউন্টারে আসছেন তো কেউ কাউন্টার ছেড়ে গ্রামের পথে ছুটছেন। ইট-কাঠ আর পাথরের শহর ছাড়তে ব্যস্ত সবাই। উদ্দেশ্য, আপনজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া রুবেল হোসেন যাবেন মাগুরা। তিনি বলেন, 'খুব ভালো লাগছে। ঈদে সবার সঙ্গে দেখা হবে। কোরবানিতে বাড়ি না থাকলে মা যেন কিছুই খেতে পারেন না! কতবার যে ফোন দিয়েছেন মা। এখন কোথায়, বাস কখন ছাড়বে আরো কত কিছু। গত কোরবানিতে বাড়ি যেতে পারিনি বিভিন্ন কারণে। মায়ের সেকি কান্না! যাই হোক, ভালোভাবে ঈদ করে আবার ঢাকায় ফিরবো দ্রুতই।'
এখানকার প্রায় সব বাসের কাউন্টার জুড়ে এতটাই ভিড় যে ভেতরে বসার স্থান না থাকাতে ফুটপাথেই সামিয়ানা টাঙিয়ে চেয়ার সাজিয়ে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। সেখানেও বসার জায়গা না থাকায় অনেকেই দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। স্বজনদের পাশে যাওয়ার আনন্দে সবাই যেন ক্লান্তিহীন। অগ্রিম টিকিটের ঝামেলা সামলে সবাই ফিরছেন নিজ নিজ ঘরে। এরা একেকজন একেক এলাকায় যাচ্ছেন।
এসবের মধ্যেও যাত্রীদের সঙ্গে বাস কর্তৃপক্ষের বাকবিতণ্ডা হচ্ছে। কল্যাণপুরের এন আর ট্রাভেলসের কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায় নজরুল ইসলাম নামের রংপুরের এক যাত্রীর বাকবিতন্ডা হচ্ছে চালকের সহকারীর সঙ্গে। একপর্যায়ে তাতে যোগ দেয় পাশের কাউন্টারের লোকজনও।
নজরুলের অভিযোগ, 'বাসের ভেতরে ফ্যান নেই। রংপুর পর্যন্ত ফ্যান ছাড়া যাব কীভাবে?'
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এন আর কাউন্টারের ম্যানেজার হাফিজ মোল্লা বলেন, নজরুল ইসলামকে বুঝিয়ে বলার পরেও তিনি খারাপ ব্যবহার করতে থাকেন। এরপরে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তবে যারই অন্যায় থাকুক এই পরিস্থিতি কাম্য নয়।
এদিকে সাতক্ষীরাতে যাবেন রবিউল ইসলাম। তিনি এসপি গোল্ডেন লাইন কাউন্টারে বসে আছেন। তিনি বলেন, রাত ১১টার গাড়ি, কিন্তু এখন শুনলাম গাড়ি আসতে ১২টার বেশি বাজবে। কী আর করার দেরি হলেও তো যেতে হবে।
এসপি গোল্ডেন লাইনের ম্যানেজার বাবুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু করার নেই, ফেরিতে জ্যাম। ফেরিতে যত দেরি হবে বাস পেতেও তত দেরি হবে। এখানে তো আমাদের কিছু করার নেই।