শরীয়তপুর-চাঁদপুর রুটে ফেরি সংকটে তীব্র যানজট
‘গরু মরিয়া যাইবো, এহানি মোখের (মুখ) থেইকা লাড্ডু (ফেনা) বের হইতাছে। কাইল খাওয়াইয়া আনছি। এখন খালি গায়ে পানি দেওন ছাড়া কোনো কিছু দিতে পারি না।’
কথাগুলো বলছিলেন যশোর থেকে আসা ফেরির অপেক্ষায় গরু ব্যবসায়ী মনু মিয়া। মনু মিয়ার মতো একই অবস্থায় পড়েছেন গরু ব্যবসায়ী কানু সরদার, হারুন শেখ ও এখলাছ উদ্দিনসহ অনেকেই ।
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরও শরীয়তপুরের ইব্রাহিমপুর ফেরি ঘাটে চার শতাধিক যানবাহন নদী পারের অপেক্ষায় দীর্ঘ সিরিয়ালে আটকে রয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেল থেকেই দীর্ঘ জট লাগে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে খুলনা, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ২১ জেলার যাত্রীবাহী ও মালবাহী যানবাহন পূর্বাঞ্চলের চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করত। চাঁদপুর-ইব্রাহিমপুর ফেরিঘাট দিয়ে সহস্রাধিক ছোট-বড় ও মাঝারি ধরনের যানবাহন পারাপার হতো।
এমভি কেতকী, এমভি কুসুম কলি, এমভি কস্তুরীসহ চারটি ফেরি দিনরাত গাড়ি পারাপার করত। দীর্ঘদিন ধরে শরীয়তপুরের মনোহর বাজার থেকে প্রায় ৩৪ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার বাদে সব জায়গাতেই বড় বড় গর্ত ছিল। তাই পরিবহন মালিকরা দুর্ঘটনা এড়াতে এই রুটে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেন। গাড়ি কমতে থাকায় এই রুটে একটি ফেরি চালু রাখা হয়। ঈদ উপলক্ষে আরো একটি ফেরি যুক্ত করা হয়। প্রতিদিন দুটি করে ফেরি চলাচল করে আসছিল। তবে অতিরিক্ত যানজটের কারণে আরো একটি ফেরি যোগ করা হয়েছে।
গাড়ি চালকরা বলেন, মনোহর বাজার থেকে আলুর বাজার পর্যন্ত ৩৪ কিলোমিটার রাস্তার বড় গর্তগুলো ইট ও বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। আবার মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ী ঘাট থেকে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া রুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় যানবাহনগুলো শরীয়তপুর-চাঁদপুর রুটে ফেরি পারাপার করে চলছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ইব্রাহিমপুর আটকা পড়েছে তিন শতাধিক গরু ও পণ্যবাহী ট্রাক, ৫০টির মতো যাত্রীবাহী বাস ও ৫০টি ছোট যানবাহন। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে এ রুটে গরু বহনকারী ট্রাকের চাপ বেড়েছে। তাছাড়া ইব্রাহিমপুর-হরিণাঘাট নৌরুটে নদী পারাপারের জন্য মাত্র দুটি ফেরি রয়েছে। পরে আরো একটি যোগ করা হয়েছে। ফলে সঠিক সময়ে যানবাহনগুলো পারাপার করা সম্ভব হচ্ছে না।
যশোর থেকে গরু নিয়ে আসা ব্যবসায়ী হারুন শেখ বলেন, এবার প্রথম এই ঘাট দিয়ে গরু নিয়ে যাচ্ছি। গতকাল বুধবার বিকেলে আসছি, কিন্তু সিরিয়াল পাইনি।
গরু ব্যবসায়ী কানু সরদার বলেন, গরু গাড়িতে তোলার আগে খাবার খাওয়াইছি। এই ঘাটে গরু নিয়ে আসছি গতকাল বিকেলে। নামিয়ে যে গরুরে হাঁটাবো বা খাওয়াবো তার কোনো উপায় নেই। এখন যদি গাড়িতে খাবার খাওয়ানো হয় নিশ্চিত মারা যাবে গরু।
গাড়িচালক হাবিব খান (৪৫) বলেন, গত দুই দিন ধরে এসে বসে আছি। এখনো পার হওয়ার কোনো খবর নেই। কখন হবো বুঝতে পারছি না।
যশোর থেকে আসা গরুবোঝাই ট্রাকের চালক বাচ্চু হক (৪০) বলেন, গতকাল রাত ৮টায় এখানে এসে পৌঁছেছি। কিন্তু এখনো সিরিয়াল পাইনি। পাবো পাবো শুনছি।
ইব্রাহিমপুর ঘাটের বিআইডব্লিউটিসির ব্যবস্থাপক আবদুস সাত্তার এনটিভি অনলাইনকে জানান, ইব্রাহিমপুর-হরিণাঘাটে মাত্র দুটি ফেরি ছিল। ফেরি সংকটের কারণে ঘাটের যানবাহনগুলো ঠিক সময় পারাপার করানো যাচ্ছে না। এজন্য সন্ধ্যা থেকে আরো একটি ফেরি যুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা আশা করছি রাতের মধ্যেই এসব আটকে পড়া যানবাহন পারাপার করা যাবে।