‘৫ জানুয়ারি বারবার আসবে না’
বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হতে আর বেশি সময় বাকি নেই। আগামী অক্টোবর মাসে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। কিন্তু এখনও নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো তাদের দাবি আদায় না হলে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে আসছে। এমনকি এখনও তারা বলছে, বিএনপির চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি, সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি আদায় না হলে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে না।
তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা বারবারই বলছেন, বর্তমান সংসদ বহাল রেখে নির্বাচিত প্রতিনিধি দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হবে। এমনকি নির্বাচন নিয়ে বিএনপি বা কারো সঙ্গে কোনো প্রকার সংলাপ করা হবে না। ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, যার ইচ্ছা নির্বাচনে অংশ নেবে। এটা সব রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক অধিকার। কাউকে নির্বাচনে আনা সরকারের দায়িত্ব নয়।
কিন্তু বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল বারবার বলে আসছে, নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। তাঁকে ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। সরকার যদি সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন করতে চায় তাহলে সবার আগে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।
খালেদা জিয়ার মুক্তি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ২০ দলের শরীকদের নির্বাচন ভাবনা নিয়ে এনটিভি অনলাইনের সাথে কথা হয় একাধিক নেতার। তারা বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে তবেই আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে ২০ দল। এর বাইরে কোনো নির্বাচন হবে না।
২০ দলের শরিক ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির সভাপতি ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ২০ দল নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে খালেদা জিয়াকে সঙ্গে নিয়েই নির্বাচনে যাবে। এর বাইরে কোনো ভাবনা ২০ দলের নেই। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। আর সে নির্বাচন হবে সবার অংশ গ্রহণে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। শেখ হাসিনার অধীনে নয়।
আগামী নির্বাচন ৫ জানুয়ারির মতো হলে সে নির্বাচনে ২০ দল অংশ নেবে কিনা জানতে চাইলে ফরহাদ বলেন, ৫ জানুয়ারি বা ৮৮ সাল বারবার আসে না। ওটা একবারই হয়েছে। বাংলাদেশে আর কখনও ৫ জানুয়ারি ফিরে আসবে না। তাই এ নিয়ে চিন্তার কিছু নাই। নির্বাচন হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে।
সংলাপের বিষয়ে ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, সরকার মুখে যত কথাই বলুক না কেন, তারা বাধ্য হবে বিএনপি ও ২০ দলের সঙ্গে সংলাপ করতে। সরকারের সামনে এর কোনো বিকল্প নেই। কারণ দেশের ৮০ ভাগ জনগণ ২০ দলের সঙ্গে। তাহলে সরকার কার সাথে সংলাপ করবে?
খালেদা জিয়ার সাজা ও জামিনের বিষয়ে এনপিপি সভাপতি বলেন, এ মামলাটা তো মিথ্যা মামলা। যে দেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা লুট হয়ে যায়, কয়লা হাওয়া হয়ে যায়, সোনা তামা হয়ে যায় সে দেশে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এ মামলার কথা বলাই উচিত না। কারণ যে টাকা আত্মসাতের মামলায় তাঁকে সাজা দেওয়া হয়েছে সে টাকা এখন বেড়ে তিনগুণ হয়েছে। এ মামলা যদি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা হয় তাহলে এ সরকারের এমন কোনো ব্যক্তি নাই যার বিরুদ্ধে মামলা হবে না। এ মামলার কোনো ভিত্তি নাই। যারা বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা, সোনা ও কয়লা চুরি করে তাদের নামে মামলা হয় না। মামলা হয় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে! এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ভিত্তিহীন মামলা।
২০ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টির কাজী জাফর অংশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবীব লিঙ্কন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘শুধু আমাদের দল নয়, ২০ দলীয় জোটের সবার একটাই সিদ্ধান্ত, খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। আগে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, তারপর নির্বাচন হবে। কারণ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিও বিএনপিকে নির্দিষ্ট কিছু আসন দিতে চেয়েছিলো কিন্তু মানুষের ভোটের অধিকার রক্ষায় বিএনপি ও ২০ দল সে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। সেই একই অবস্থা থাকলে কেন ২০ দল নির্বাচনে যাবে?’
আহসান হাবীব বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্র মেনে, সংবিধান মেনে রাজনীতি করি। তাই মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকার হরণ করা কোনো নির্বাচনে ২০ দল অংশ নেবে না। নির্বাচন হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, সব দলের অংশগ্রহণে। আর খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব ২০ দল সে নির্বাচনে অংশ নিবে। কিন্তু সেই নির্বাচন এমন হতে পারবে না যে আমার ভোটও আওয়ামী লীগ দেবে, জনগণের ভোটও আওয়ামী লীগ দেবে, আওয়ামী লীগের ভোটও আওয়ামী লীগ দেবে, এটা হবে না।’
আহসান হাবীব বলেন, সরকার এবার চাইছে ৪৪টা নিবন্ধিত দলের মধ্যে বেশিরভাগ দলকে নির্বাচনে নিতে, তাদের কিছু সংখ্যক আসন দিয়ে। যে নির্বাচনের টিক মার্ক হবে ঢাকায় আর রিটার্নিং কর্মকর্তা শুধু স্থানীয়ভাবে ফলাফল ঘোষণা করবে, এমন নির্বাচনে তো বিএনপি ও ২০ দল যাবে না। বিএনপি বা জোট কোনো পাতানো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না।
নিরপেক্ষ সরকারের বিষয়ে জাতীয় পার্টির সাবেক এ সাংসদ বলেন, ১৯৯৬ সালে এ নিরপেক্ষ সরকারের জন্য আন্দোলন করেছে আওয়ামী লীগ। তখন একটি নির্বাচন দিয়ে এটি সংবিধানে যুক্ত করা হয়েছে। আজ যখন নিজে ক্ষমতায় আসছেন তখন তিনি সেটি বাতিল করে দিলেন। নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে ছিলো, আমরা চাই এটাকে আবার আগের মতো সংবিধানে সংযুক্ত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।
জোটের শরিক দল জামায়াতে ইসলামীর বিষয়ে জাতীয় পার্টির এ নেতা বলেন, জামায়াতে ইসলামী নিয়ে যদি সবার সমস্যা থাকে তাহলে এ দলটাকে নিষিদ্ধ করে দিলেই চলে। তাহলে সব ঝামেলা শেষ। এটি নিয়ে আর কোনো কথা থাকবে না।
জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে আহসান হাবীব বলেন, কোনো শর্ত দিয়ে আসলে ঐক্য হয় না। বিশেষ করে আসন নিয়ে বিএনপি কারো সঙ্গে ঝামেলা করবে না। কারণ খালেদা জিয়া নিজেই বলেছেন, যদি বিজয়ী হওয়ার মতো প্রার্থী থাকে, তাঁর গ্রহণযোগ্যতা থাকে তাহলে আসন কোনো সমস্যা না। তাহলে ঐক্যের ক্ষেত্রে কখনও আসন ভাগাভাগি বা অন্য কিছু সমস্যা হবে না।