বাংলাদেশে প্রথম স্বর্ণ জিতলেন শফিকুল ইসলাম
ডাকটিকিট সংগ্রহকে বলা হয় শখের রাজা। আর এই শখের কারণেই বাংলাদেশের জন্য গৌরব বয়ে এনেছেন শেখ শফিকুল ইসলাম। এ বছর ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অনুষ্ঠিত ‘ফোর ন্যাশন ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাম্পস এক্সিবিশনে’ তিনি স্বর্ণপদক অর্জন করেছেন। প্রদর্শনীটি অনুষ্ঠিত হয় ৬ থেকে ৮ আগস্ট। ‘স্টাডি অব ইন্ডিয়ান ফিসকাল স্ট্যাম্পস : ইউজড ইন ইস্ট বেঙ্গল ১৭১২ টু ১৮৯০’ শিরোনামে নিজের সংগ্রহ প্রদর্শন করে আন্তর্জাতিক এই প্রতিযোগিতায় তিনি স্বর্ণপদকটি পান।
শেখ শফিকুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে জানান, রাজস্ব আয় (রেভেনিউ স্ট্যাম্প), বিয়ে, জমি বিক্রি সহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত স্ট্যাম্পের ১২৮টি এক্সিবিট শিট প্রদর্শন করে তিনি জিতে নিয়েছেন বিচারকদের মন। শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি মোগল আমল থেকে রানী ভিক্টোরিয়ার আমল পর্যন্ত ছাপানো স্ট্যাম্পগুলো নানা ভাবে সংগ্রহ করেছি। কোনোটা নিলাম থেকে, কোনটা বিদেশ থেকে। কারো কারো সাথে বিনিময়ও করেছি।’ ২০০৯ সালে কোরিয়ো একটি প্রদর্শনী দেখে ‘ফিসকাল স্ট্যাম্প’ সংগ্রহের আগ্রহ জাগে শফিকুল ইসলামের মনে। তখন থেকেই চলছে এই বিশেষ স্ট্যাম্প সংগ্রহের পালা। সেই সংগ্রহই তাঁর জন্য অর্জন করে এনেছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
প্রায় ৫০ বছর ধরে ডাকটিকিটের নেশায় বুঁদ শেখ শফিকুল ইসলাম ২১টি দেশের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ডাকটিকিট প্রদর্শনী প্রতিযোগিতা থেকে মোট ৩৬টি মেডেল পেয়েছেন। তবে এবারই প্রথম তিনি স্বর্ণপদক পেলেন, যা বাংলাদেশে এর আগে কেউ পাননি। তিনি বলেন, ‘এটা বাংলাদেশের জন্য খুবই গৌরবের ব্যাপার। আমার জন্যও গৌরবের, কারণ ১৯৭১ সালের পর আমিই প্রথম এমন পুরস্কার পেলাম।’ শুধু স্বর্ণপদক নয়, এই প্রদর্শনীতে নিজের দুর্লভ সংগ্রহের জন্য একটি বিশেষ পুরস্কারও পান শফিকুল ইসলাম। যেটি দেওয়া হয় অ্যাসোসিয়েশন অব সিঙ্গাপুর ফিলাটেলিটসের পক্ষ থেকে— একটি কাঠের ফ্রেমের ভেতর মিনিয়েচার স্ট্যাম্পের কালেকশন।
শুধু সংগ্রাহকই নন পেশায় ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম, ডাকটিকিটের ওপর ইংরেজিতে প্রকাশিত একটি বইয়ের লেখকও তিনি। বইটির নাম ‘Post Office Rubberprint Bangladesh on Pakistan Stamps and Postal Stationary 1971 – 1974.’
শখের এই দুনিয়ায় শফিকুল ইসলাম যুক্ত হন ছোটবেলা থেকেই। ষাটের দশকের শেষ ভাগ থেকে তাঁর ডাকটিকিট সংগ্রহ শুরু। এখন সেই সংগ্রহের সংখ্যা কত তা তিনি নিজেও নিশ্চিত করে বলতে পারবেন না। শুধু বললেন, ‘ডাকটিকিট জমাতে জমাতে এখন এমন এক জায়গায় এসেছি, ডাকটিকিট দিয়ে এখন বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই বিশ্বের কাছে। অন্যরা ডাকটিকিট জমানোর শখ ছেড়ে দেন। আমি ছেড়ে দেইনি। ধরে রেখেছি। আজীবন এই শখ আমার থাকবে। আমার কখনো কখনো মনে হয় জন্ম থেকেই আমি ডাকটিকিট জমাচ্ছি।’
বালিতে অনুষ্ঠিত ডাকটিকিট প্রদর্শনীর ওই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের শফিকুল ইসলাম ছাড়াও সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডের দুজন সংগ্রাহকও স্বর্ণপদক অর্জন করেন।