দেশি পশুতেই পূরণ হবে কোরবানির চাহিদা, আশা খামারিদের
ঢাকার মাতুয়াইল এলাকার বাসিন্দা শাহ আলম। মধ্যপ্রাচ্যে ১৪ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে ফেরেন বছরচারেক আগে। পশু পালন প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের জমিতে তিনটি গরু দিয়ে দিয়ে গড়ে তোলেন খামার। পরের বছর কোরবানির পশুর হাটে গরু তিনটি বিক্রি করে ভালোই লাভ করেন শাহ আলম। এবার তার খামারে কোরবানির জন্য গরু প্রস্তুত আছে ১৮টি। খামারে গিয়ে চোখে পড়লো নিজ হাতে গুরুর পরিচর্যা করছেন। ১৮টি গরুর মধ্যে সবচেয়ে মোটা ও বড়টির দাম হাঁকালেন দেড় লাখ টাকা আর সবচেয়ে ছোটটির দাম চাইলেন ৮৫ হাজার টাকা।
আলাপচারিতার এক পর্যায়ে শাহ আলম বলেন, ‘দেশে ফিরে কিছু একটা করার জন্য বহু চেষ্টা করি। পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারিনি। একজন কসাইয়ের পরামর্শেই খামার গড়ে তুলি।’
শাহ আলম জানালেন, গোটা মাতুইয়ালসহ ডেমরা, রুপগঞ্জ ও আশেপাশের এলাকায় কয়েকশ খামার রয়েছে। এমনও খামার রয়েছে যেখানে ৩০টিরও বেশি গরু রয়েছে। সব খামারিই কোরবানিকে টার্গেট করে গরু লালন পালন করে। কোরবানির পরপরই এক বছর কিংবা দুই বছর বয়সী বাছুর (গো-ছানা) কিনে নেন তারা। সারা বছর এগুলোকে লালন-পালন ও পরিচর্যা করে কোরবানির পশুর হাটে তোলার জন্য প্রস্তুত করেন।
শাহ আলমের কথা মতো কোনাপাড়া টেংরাপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেলো অনেক পুরোনো বাড়িঘর। একবারেই গ্রামীণ পরিবেশ। পরপর তিনটি খামার। খামারগুলোতে কোরবানিযোগ্য গরুর পাশাপাশি রয়েছে দুধের গাভীও। গরু পালনই এ এলাকার মানুষের আয়ের অন্যতম উপায়। এ এলাকার খামারি জনি সরদার বলেন, ‘পড়ালেখা করে চাকরির জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। এমনিতেই আমাদের ঢাকার স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে পড়ালেখা ও বিধিবদ্ধ চাকরিতে নিয়োজিত হওয়ার রেওয়াজ একেবারেই নেই। তারপরেও একটি চাকরি জন্য কম চেষ্টা করিনি। শেষ পর্যন্ত পৈত্রিক ভিটায় খামার দিয়ে জীবিকা নির্বাহের পথই বেছে নিলাম।’ এবারও কোরবানিতে ১২টি গরু তিনি বিক্রি করবেন বলে জানান। জনি বলেন, ‘আমাদের গরু হাটে নিতে হয় না। এখানেই খরিদদাররা চলে আসেন।’
একই এলাকার খামারি আসলাম শেখ বলেন, ‘মাত্র কয়েক বছর আগেও কোরবানির জন্য আমাদের দেশের মানুষ ভারতের গরুর দিকে তাকিয়ে থাকতো। এখন আর সে অবস্থা নেই। কোরবানিদাতারাও টাকা কিছু বেশি গেলেও ভারতের গরুর চেয়ে দেশীয় গরু কোরবানি দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন।’
হতাশার কথাও বলতে ভুললেন না আসলাম শেখ। গরু পালনে খরচের কথা উল্লেখ করে বললেন, ‘খৈল ও ভূষিসহ পশু খাদ্যের দামও মানুষের খাদ্যের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। তারপরেও এত বছর যাবৎ ভালোই লাভ হয়েছে। এবার শুনছি ভারত ও মিয়ানমার থেকে প্রচুর গুরু আসছে। সীমান্ত নাকি গরু আমাদানির জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। পত্রিকায় দেখলাম মিয়ানমার থেকে গরু এসেছে। ভারত থেকেও বড় ব্যবসায়ীরা কয়েক লাখ গরু আমদানি করেছে। এটা নিয়ন্ত্রণ করা না হলে গরুর দাম কমে যাবে। লাভ হয় বলেই আমরা এখনো পর্যন্ত অন্যান্য পেশায় না গিয়ে গরু পালন করছি। লোকসান হলে তো আর আমরা গরুর খামার চালিয় যেতে পারবো না।’
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এ বছর দেশে কোরবানি উপলক্ষে এক কোটি চার লাখ পশুর চাহিদা রয়েছে। দেশে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া মিলিয়ে এক কোটি ১৬ লাখ গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে। ভারত থেকে গরু আমদানি না হলেও দেশের পশু দিয়ে কোরবানির চাহিদা মিটিয়ে আরো ১২ লাখ পশু উদ্বৃত্ত থাকবে বলে আশা করছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।