শিশুবান্ধব আদালত কক্ষের উদ্বোধন
শিশুবান্ধব আদালত কক্ষের উদ্বোধন করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। এটি দেশের প্রথম শিশুবান্ধব আদালত।
আজ রোববার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে প্রধান বিচারপতি এ আদালত কক্ষের উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনের সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে শিশু আদালত কক্ষ স্থাপিত হওয়ায় আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। শিশু আদালতের জন্য পৃথক আদালত কক্ষ স্থাপনের কারণে শিশুবান্ধব পরিবেশের মধ্যে বিচারকার্য করা সম্ভব হবে।’
সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, শিশুরাই দেশ ও জাতির কর্ণধার। জাতির ভবিষ্যৎ অগ্রগতিতে নেতৃত্ব দেবে। ফলে তাদের আদর্শ মানুষ ও শিক্ষিত নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও মানসিক বিকাশে আমাদের সচেতন হতে হবে। কোনো শিশুই অপরাধী হয়ে জন্মগ্রহণ করে না। পরিবেশ-পরিস্থিতিই একজন শিশুকে অপরাধী করে তোলে। কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের আশ্রয়ে এরা বিচরণ করে অপরাধ জগতের বিভিন্ন পর্যায়ে। কোনো শিশুই যাতে বিপথগামী না হয় সে ব্যাপারে সজাগ থাকা আমাদের নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব।
প্রধান বিচারপতি বলেন, শিশু, নারী ও অনগ্রসর নাগরিকদের অগ্রগতির জন্য সংবিধানের ২৮ (৪) অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রকে বিশেষ বিধান প্রণয়নের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সেই আলোকে ১৯৭৪ সালে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নাগরিকদের গুরুত্বের কথা উপলব্ধি করে শিশু আইন প্রণয়ন করা হয়। পরবর্তী সময়ে শিশু আইন, ১৯৭৪ বাতিল করে শিশু আইন, ২০১৩ প্রণয়ন করা হয়।
সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত ও আইনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিচার শিশু আদালতে করার বিধান রয়েছে বর্তমান শিশু আইনে। এই আইন অনুসারে প্রত্যেক জেলা সদরে এবং মেট্রোপলিটন এলাকায় একটি করে শিশু আদালত রয়েছে। অতিরিক্ত দায়রা জজ পদমর্যাদার একজন বিচারক এই আদালতের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কোনো জেলায় অতিরিক্ত দায়রা জজ না থাকলে উক্ত জেলার জেলা ও দায়রা জজ তাঁর নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে শিশু আদালতের দায়িত্ব পালন করেন।
প্রত্যেক জেলায় শিশু আদালতের জন্য আলাদা কক্ষ এবং বিচারক নিয়োগ প্রয়োজন মন্তব্য করে প্রধান বিচারপতি বলেন, প্রচলিত আদালতের কাঁঠগড়ায় ও লালসালু ঘেরা আদালত কক্ষের পরিবর্তে একটি সাধারণ কক্ষে এবং প্রচলিত আদালতের দিবস ও সময়ের বাইরে অন্য কোনো দিবস ও সময়ে শিশু আদালতের বিচারকার্য পরিচালনার সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে। কিন্তু আমাদের আলাদা কোনো শিশু আদালত কক্ষ নেই। এমনকি অসংখ্য মামলার ভারে ভারাক্রান্ত অতিরিক্ত দায়রা জজগণকে তাদের দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে শিশু আদালতের দায়িত্বও পালন করতে হয়।
সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, প্রত্যেক জেলায় শিশু আদালতের জন্য আলাদা কক্ষ এবং আলাদা বিচারক নিয়োগসহ শিশুদের জন্য অপেক্ষা কক্ষ স্থাপন করা প্রয়োজন।
শিশু আদালতের মামলার পরিসংখ্যানের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ২০১৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত সারা দেশের শিশু আদালতগুলোতে বিচারাধীন মামলা ২১ হাজার ৫০৩টি। এর মধ্যে ঢাকা জেলায় বিচারাধীন আছে এক হাজার ১২৪টি মামলা। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে শিশু আদালত কক্ষ স্থাপিত হওয়ায় আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। শিশু আদালতের জন্য পৃথক আদালত কক্ষ স্থাপনের কারণে শিশুবান্ধব পরিবেশের মধ্যে বিচারকার্য করা সম্ভব হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্ট স্পেশাল কমিটি ফর চাইল্ড রাইটসের চেয়ারম্যান ও আপিল বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন ইউনিসেফ বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর সীমা সেন গুপ্ত। স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ মো. হেলাল চৌধুরী। ঢাকার আদালতের সব বিচারক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।