জামিনে মুক্তি পেয়ে ফের সংঘর্ষ, মেন্দিপুর ‘যুদ্ধক্ষেত্র’
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার মেন্দিপুর গ্রামে বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে আবার সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে ১০ থেকে ১২টি বসত বাড়িতে ভাঙচুরসহ লুটপাট চালায় প্রতিপক্ষে। এ সময় ওই সব বাড়িঘরসহ শতাধিক খড়ের গাদায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সব এলাকা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে।
খবর পেয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সংঘর্ষ থামায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। সংঘর্ষ থামার পর আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।
আহতদের মধ্যে আক্কাছ আলী (৪৫), ইয়াকুব (২৮), শহীদ মিয়া (৩০), শাহানা বেগম (৩৫), এলাছ মিয়া (৪২), জাহের মিয়া (৮০) ও মানিক মিয়াকে (৭১) উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠিয়েছেন চিকিৎসক। এঁদের মধ্যে ইয়াকুবের অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছেন ওই সময় জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মো. আমজাদ হোসেন।
এ ছাড়া আহতদের মধ্যে গুলজান বেগম (৪০), মাছুম (৩৫), সাফিউদ্দিন (৭৫), নাসিম (৩৩), আনোয়ার হোসেন (৩৫), জিলান উদ্দিন (৫০) ও রমজান আলীকে (৩৫) ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অন্য আহতদের কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বাজিতপুরের ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ স্থানীয় বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে বলে জানিয়েছে তাদের স্বজনরা।
বর্তমানে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করলেও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকায় ফের সংঘর্ষের আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোখলেছুর রহমান।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানায়, গত ১৩ ও ১৪ জুলাই ভৈরবের সাদেকপুর ইউনিয়নের মেন্দিপুর গ্রামে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া নিয়ে বিবদমান দুইপক্ষ বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান সরকার শাফায়েত উল্লাহর সমর্থক ওই ইউপির বর্তমান প্যানেল-চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান ভোলা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জুল হকের সমর্থক আক্কাছ আলীর লোকজনের মধ্যে দুই দফা সংঘর্ষ হয়। এতে উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়।
এর জেরে ১৫ জুলাই উভয় পক্ষ সংগঠিত হয়ে ফের সংঘর্ষে লিপ্ত হলে আক্কাছ গ্রুপের সমর্থক ছিদ্দিক মিয়া (৪২) নামের এক সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক প্রতিপক্ষের হাতে নিহত হন। তিনি রসুলপুর পূর্বপাড়ার সরকার বাড়ির মুক্তার মিয়ার ছেলে। ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তাঁর ছোট ভাই রইছ মিয়া বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান সরকার শাফায়েত উল্লাহকে প্রধান আসামি করে ৫৬ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলার আসামিরা গত ৬ আগস্ট কিশোরগঞ্জ আদালত থেকে জামিন পান।
আসামিরা জামিন পেয়ে এলাকায় আসার পর থেকেই উভয়পক্ষের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। সেই উত্তেজনার মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তারা বাড়িতে ফিরে যায়। বাড়ি ফেরার পর উত্তেজিত উভয়পক্ষের কয়েকশ লোক দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কাজী ফয়সাল স্যারের নির্দেশে দুপুর ২টার দিকে আমি ঘটনাস্থলে যাই। মেন্দিপুর গ্রামটিকে তখন আমার কাছে যুদ্ধক্ষেত্র মনে হয়। একদিকে উভয়পক্ষের সংঘর্ষ। অপরদিকে ঘরবাড়িসহ খড়ের গাদায় লাগানো আগুনের লেলিহান শিখায় ভয়াবহ দৃশ্যের অবতারণা হয় ওখানে। তখন আমি পুলিশ সদস্যদের সহায়তায় এদের দলনেতাদের সঙ্গে কথা বলে বহু কষ্টে সংঘর্ষ থেকে তাদের লোকজনকে বিরত করি।’
এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, বর্তমানে সেখানে ১৫ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ইউএনও বলেছেন, খুব শিগগিরই বিবদমান দুইপক্ষের লোকদের নিয়ে তিনি শান্তি সভা করবেন। সেখানে ভৈরবের শীর্ষ রাজনীতিবিদসহ জনপ্রতিনিধি ও সমাজ সচেতন বিভিন্ন মহলের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হবে।