রাগীব আলী ও তাঁর ছেলের সাজা বহাল
ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতির করে তারাপুর চা বাগান দখলের মামলায় ব্যবসায়ী রাগীব আলী ও তাঁর ছেলেকে নিম্ন আদালতের দেওয়া ১৪ বছরের সাজা বহাল রেখেছেন সিলেটের বিশেষ দায়রা জজ আদালত।
নিম্ন আদালতের সাজার বিরুদ্ধে আসামিদের করা আপিলের শুনানি শেষে আজ বৃহস্পতিবার বিচারক দিলীপ কুমার ভৌমিক নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন। আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নওশাদ আহমদ চৌধুরী।
আলোচিত এই মামলায় ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামান হিরো পাঁচটি ধারায় রাগীব আলী ও তাঁর ছেলে আব্দুল হাইকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেন।
এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা আপিল করলে আজ নিম্ন আদালতের রায় বহাল রেখে রায় প্রদান করেন বিশেষ জজ আদালতের বিচারক দিলীপ কুমার ভৌমিক।
সিলেটের হাজার কোটি টাকার তারাপুর চা বাগান দেবোত্তর সম্পত্তি। জালিয়াতি ও প্রতারণা করে এই বাগান দখল নেওয়ার অভিযোগ ওঠে রাগীব আলীর বিরুদ্ধে। এ নিয়ে অভিযোগ ওঠার পর ১৯৯৯ সালে ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি রাগীব আলীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। ২০০৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জালিয়াতির অভিযোগে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন তৎকালীন ভূমি কমিশনার (এসিল্যান্ড) এসএম আব্দুল কাদের। এ ছাড়া সরকারের এক হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন তিনি।
মামলায় ৪২২ দশমিক ৯৬ একর জায়গায় গড়ে ওঠা সিলেটের দেবোত্তর সম্পত্তি তারাপুর চা বাগানের জমি আত্মসাতের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জাল করার অভিযোগ আনা হয়ে রাগীব আলী ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে। এই মামলার বিরুদ্ধে রাগীব আলী উচ্চ আদালতে গেলে দীর্ঘদিন পর ২০১৬ সালের শুরুতে তার নিষ্পত্তি হয়। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি রাগীব আলীর বিরুদ্ধে মামলা পুনরায় চালুর নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে তারাপুর চা-বাগান দখল করে গড়ে ওঠা সব স্থাপনা ছয় মাসের মধ্যে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়।
ওই আদেশের পর একই বছরের বছরের ১৫ মে চা-বাগানের বিভিন্ন স্থাপনা ছাড়াও ৩২৩ একর ভূমি সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে বুঝিয়ে দেয় জেলা প্রশাসন। মামলা হওয়ার ১১ বছর পর ২০১৬ সালের ১০ জুলাই পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সিলেটের অতিরিক্ত সুপার সারোয়ার জাহান আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
অভিযোগ অনুযায়ী, ১৯৯০ সালে তারাপুর চা বাগান আত্মসাতের প্রক্রিয়ায় রাগীব আলী ও তাঁর ছেলে আব্দুল হাই ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জাল করেন। এই মামলার দুই আসামিই জেল হাজতে রয়েছেন।
ওই বছরের ১০ আগস্ট গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে রাগীব আলী ও তার একমাত্র ছেলে আবদুল হাই ওই দিনই জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে সপরিবারে ভারতে পালিয়ে যান তিনি। এরপর ১২ নভেম্বর ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরার পথে রাগীব আলীর ছেলে আব্দুল হাইকে গ্রেপ্তার করে জকিগঞ্জ ইমিগ্রেশন পুলিশ। আর ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় ২৪ নভেম্বর ভারতে গ্রেপ্তার হন রাগীব আলী। ওই দিনই সিলেটের সুতারকান্দি সীমান্ত দিয়ে তাকে দেশে এনে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর শুরু হয় বিচার কার্যক্রম।
স্মারক জালিয়াতি মামলা ছাড়াও রাগীব আলী ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে তারাপুর চা বাগানের ভূমি আত্মসাতের আরেকটি মামলায়ও সাজা প্রদান করা হয়।