হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে সাংবাদিকদের ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় সাংবাদিকদের ওপরে হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন কর্মরত সাংবাদিকরা। এ সময় তাঁরা আক্রমণকারী হেলমেটধারীদের আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার আলটিমেটাম দেন।
আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজার সার্ক ফোয়ারায় মানববন্ধন ও ১০ মিনিটের প্রতীকী কর্মবিরতি পালন শেষে সাংবাদিকরা এই আলটিমেটাম দেন।
কয়েক দিন ধরে চলা নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় কর্মরত সাংবাদিকদের ওপর একের পর ক্রমাগত হামলা চালানো হয়। হামলাকারী সন্ত্রাসীরা পুলিশের পাশে দাঁড়িয়েই সাংবাদিক বেছে বেছে এসব হামলা চালায়। স্পষ্ট ভিডিও এবং ছবি থাকার পরও কেন তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না, তা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকরা সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
হামলায় আহত সারাবাংলা ডট নেটের সাংবাদিক উজ্জ্বল জিসান বলেন, ‘নিজে মাইর খাওয়ার পরে বুঝেছি এই হামলা কতটা ভয়াবহ। হামলাকারী এবং শিক্ষার্থীরা গালি দিয়ে বলে, এই মিডিয়ার দরকার নাই। সন্ত্রাসীরা যখন মারছিল, তখন শিক্ষার্থীরাও এগিয়ে আসছিল কেউ কেউ। এভাবে হামলা হতে থাকলে মানসিক ও শারীরিক টর্চারের মধ্যে থাকতে হয়। পরিবারও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। এসবের অবসান জরুরি।’
মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি পারভেজ খান বলেন, ‘সরকারের সদিচ্ছার অভাব আছে। হামলাকারী সবাই চিহ্নিত। সরকার আন্তরিক হলে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব দ্রুতই।’ তিনি বলেন, ‘বিগত দিনে সাংবাদিকদের আন্দোলন থেকে এবারের আন্দোলনটা একেবারেই ভিন্ন। এবার কোনো দলীয় সাংবাদিকদের পক্ষে আন্দোলন হচ্ছে না। সব সময় আমরা এভাবে একই কাতারে দাঁড়াতে পারলে আমাদের আন্দোলনের সফলতা আসবে।’
বাংলাদেশ ফেডারেশন সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএইউজে) কোষাধ্যক্ষ দীপ আজাদ বলেন, ‘প্রশাসন উসকানিদাতার পরিচয় প্রকাশ করছে। কিন্তু সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের ফুটেজ তারা চাইছে। প্রশাসনের ইচ্ছে থাকলে তাদের কাছে যে ফুটেজ আছে, তাই দিয়ে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করতে পারবে ভালোভাবেই।’
দীপ আজাদ আরো বলেন, ‘সাংবাদিকরা আহত হলে সমাজের অন্য সবাই আহত হয়। অন্যদের সংবাদ প্রকাশ বন্ধ থাকে। ফলে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
সাংবাদিক দীপন দেওয়ান বলেন, ‘আমরা ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিচ্ছি সরকার এবং প্রশাসনকে। গুজবকারীদের যেমন শনাক্ত করা হয়েছে, তেমনি সাংবাদিকদের ওপরে কারা হামলা করেছে, তাদেরও খুঁজে বের করুন। ৭২ ঘণ্টার ভেতরে তাদের গ্রেপ্তার না করলে আমরা আরো কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।’
দীপু সারোয়ার বলেন, ‘চলমান আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারী, আন্দোলনবিরোধী এবং পুলিশ তিন পক্ষের কাছ থেকে সাংবাদিকরা হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায়। সাংবাদিকরা কারো প্রতিপক্ষ নয়, তবুও কেন তাদের ওপর এমন হামলা। হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’
মানববন্ধনে উপস্থিত আরো অনেকে জানান, এভাবে চলতে পারে না। এর সমাধান জরুরি। তাঁরা মাঠে শান্তিতে কাজ করতে চান। জীবনের শঙ্কা নিয়ে কাজ করতে চান না। এভাবে সাংবাদিকদের ওপরে আক্রমণ হতে থাকলে গণমাধ্যম আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সাধারণ মানুষ সঠিক তথ্য পাবে না।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান খান, একাত্তর টিভির নাদিয়া সারমিন, লাইজুল ইসলাম।