শিক্ষার্থীদের ইটপাটকেল, পুলিশের টিয়ার শেল
পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে জিগাতলা ও এর আশপাশের এলাকায়। টিয়ার শেল ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের কারণে এরই মধ্যে সেখানে পুলিশসহ কয়েকজন আহত হয়েছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীর পাশাপাশি সেখানে যুক্ত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীও।
আজ রোববার সকাল থেকেই সায়েন্স ল্যাবরেটরি এবং শাহবাগ এলাকায় শিক্ষার্থীদের অবস্থান লক্ষ করা যাচ্ছিল। সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ের দিকে মূলত ইউনিফর্ম পরা স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অন্যান্য দিনের মতো মূল সড়কে অবস্থান করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল। তবে বড় জমায়েতটি ছিল শাহবাগ এলাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ জড়ো হয় শাহবাগে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে তারা একাত্মতা প্রকাশ করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বাচ্চাদের ওপর নির্যাতন হয়েছে, সেটার জন্য বিচার চাই। আর অবশ্যই নিরাপদ সড়ক চাই।’ আরেকজন বলেন, ‘কালকে (শনিবার) জিগাতলায় যা হলো ছোটদের, বাচ্চাদের ওপর যেভাবে হামলা চলল, তার জন্য আমরা সবাই জাস্টিস চাই।’ আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এটা তো সর্বস্তরের জনগণের দাবি। পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার্থী যারা আছে, সবাই এ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করছে। আমরাও এ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে আন্দোলনে নেমেছি।’
দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ শাহবাগ থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে এলিফ্যান্ট রোড হয়ে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে দিকে যেতে থাকে। একসময় আন্দোলনকারীরা মুখোমুখি হয় পুলিশের। দুপুর ১টা নাগাদ শুরু হয় সংঘর্ষ।
একদিকে শিক্ষার্থীদের ইটপাটকেল নিক্ষেপ, অন্যদিকে পুলিশের টিয়ার শেল নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে চলতে থাকে সংঘর্ষ।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সেখানে উত্তেজনা চলছে এবং সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়, যাদের মধ্যে পুলিশ সদস্যও রয়েছেন।
গত ২৯ জুলাই রাজধানীর কুর্মিটোলার বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের বাসের চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হয়। এ ছাড়া আহত হয় বেশ কয়েকজন। নিহত শিক্ষার্থীরা হলো শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে এরই মধ্যে ২০ লাখ টাকার অনুদান দিয়েছেন। নৌমন্ত্রী শাজাহান খানও নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা। টানা অষ্টম দিনের মতো তারা রাস্তায় নিয়েছে। গতকাল রাজধানীর জিগাতলায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় একদল যুবক।
স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তার অবস্থান নেওয়ার থেকে ঢাকার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোয় বাস চলাচল একেবারেই কমে যায়। এমনকি আন্তজেলা বাস চলাচলও বন্ধ করে দেন মালিক ও শ্রমিকরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নয়টি দাবি করেছে। তাদের সব দাবি মেনে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও বলেছেন, শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। এখন তাদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার উচিত বলে জানান তিনি।
এরই মধ্যে গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতির নেতারা বলেছেন, নিরাপদ বোধ না করা পর্যন্ত তাঁরা রাস্তায় বাস নামাবেন না। ফলে অঘোষিত ধর্মঘট চলছে।