এরশাদও বললেন, ‘ঘরে ফেরো’
এবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাদের ঘরে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেন।
আজ রোববার ফেসবুক দেওয়া এক বিবৃতিতে এরশাদ বলেন, ‘নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি আমি পূর্ণ সমর্থন জানাই। এই দাবি এ দেশের মানুষের প্রাণের দাবি। এই দাবি আদায়ে আমাদের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা রাজপথে নেমে যে প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং শান্তিপূর্ণভাবে রাস্তায় অবস্থান নিয়ে যেভাবে দাবি আদায় করে নিয়েছে, তার জন্য তাদের অভিনন্দন।’
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে কালবিলম্ব না করে যে তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন, তার জন্য প্রধানমন্ত্রীকেও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘এখন শিক্ষার্থীদের আমি অবিলম্বে রাজপথ ছেড়ে ঘরে এবং ক্লাসে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। কারণ, এর পরেও তারা রাজপথে অবস্থান করলে কারো জন্য মঙ্গলকর কিছু হবে না। একই সঙ্গে এই ছাত্র আন্দোলনকে পুঁজি করে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল যেন রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করতে না পারে, তার জন্য সকল মহলকে আমি সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’
সাবেক রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি মনে করি, শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে যা করেছে, তা যথেষ্ট। আমার বিশ্বাস, এই নতুন প্রজন্ম আগামী দিনে দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করে দেশকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারবে।’ তিনি বলেন, ‘এখন দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসের পর আর তাদের রাস্তায় থাকা এবং যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণের কাজ করা ঠিক হবে না। ছাত্রছাত্রীরা অনেক শিক্ষা দিয়েছে। এখন যার যে কাজ তাকেই তা করতে দিতে হবে।’
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, ‘কোনোভাবে এই আন্দোলন রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হলে, মূল আন্দোলনের মাহাত্ম্যটাই বিলীন হবে।’ তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা একটি রাজনৈতিক দলের এক নেতার উসকানিমূলক বক্তব্য শুনেছি, অনেক গুজব শুনেছি। সুতরাং শিক্ষার্থীদের সেইসব উসকানি বা গুজবে কান দিয়ে বিভ্রান্ত হওয়া ঠিক হবে না।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যেকোনো আন্দোলন যখন তার আওতার মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তখন তা হঠকারিতায় রূপ নেয়। সেটা মূল আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।’ তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, আমাদের সন্তানরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে যা করতে পেরেছে, তা একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে এবং এই মাহাত্ম্য বজায় থাকতেই তারা ক্লাসে ফিরে যাবে।’
এরশাদ বলেন, ‘আমি অভিভাবকদের প্রতিও আহ্বান জানাই, আপনারা আপনাদের সন্তানকে ঘরে ফিরিয়ে নিন এবং তাদের ক্লাসে পাঠিয়ে দিন। শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানাই, আপনারা আপনাদের ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসে ফিরিয়ে আনুন। এই ছাত্র আন্দোলনকে অজুহাত করে, যে পরিবহন ধর্মঘট পালন করা হচ্ছে, তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করার জন্যও আমি আহ্বান জানাচ্ছি।’
গত ২৯ জুলাই রাজধানীর কুর্মিটোলার বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের বাসের চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হয়। এ ছাড়া আহত হয় বেশ কয়েকজন। নিহত শিক্ষার্থীরা হলো শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে এরই মধ্যে ২০ লাখ টাকার অনুদান দিয়েছেন। নৌমন্ত্রী শাজাহান খানও নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা। টানা অষ্টম দিনের মতো তারা রাস্তায় নিয়েছে। এর পর থেকে ঢাকার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোয় বাস চলাচল একেবারেই কমে যায়। এমনকি আন্তজেলা বাস চলাচলও বন্ধ করে দেন মালিক ও শ্রমিকরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নয়টি দাবি করেছে। তাদের সব দাবি মেনে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও বলেছেন, শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। এখন তাদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার উচিত বলে জানান তিনি।
এরই মধ্যে গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতির নেতারা বলেছেন, নিরাপদ বোধ না করা পর্যন্ত তাঁরা রাস্তায় বাস নামাবেন না। ফলে অঘোষিত ধর্মঘট চলছে।