‘একে পাপ করে দশে পুইড়া মরে’
নিরাপত্তার দাবি করে রাজধানীসহ সারা দেশে আজও দ্বিতীয় দিনের মতো দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে বাস মালিক ও শ্রমিক সমিতি। এর ফলে রাজধানীর সঙ্গে সারা দেশের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আর এ কারণে দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
শ্রমিকরা বলছেন, তাঁরা মালিকদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ কারণেই আজকে বাস চালাচ্ছে না।
সড়ক পরিবহন আইনের নতুন খসড়ায় দুর্ঘটনায় হত্যার দায়ে চালক ও সহকারীর মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবনের যে প্রস্তাব করা হয়েছে সেটি পুনর্বিবেচনার জন্যও সরকারের কাছে দাবি জানান শ্রমিকরা।
মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে আজ সকালে গিয়ে দেখা যায়, সেখান থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। সেখানে শত শত মানুষ ঢাকার বাইরে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু কোনো বাস সেখান থেকে ছাড়ছে না। পরিবহন শ্রমিকরা বলতে পারছে না, কখন থেকে গাড়ি চলবে। এখান থেকে মূলত ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, জামালপুর, বগুড়ার অঞ্চলের বাস চলাচল করে।
সেখানেই এনটিভির কথা হয় এক চালকের (৫০) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তার অভাবে ভুগছি। গাড়ি মালিকদের। আমরা তো গাড়ি চালাই। তাঁরা চালাইতে বললে, আমরা চালাব। আমাদেরও তো কথা থাকে। আমরা যে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি এর কারণটা তো আপনারাও জানেন।’
‘যে ঘটনাটা ঘটেছে সেটা একটা অদক্ষ ড্রাইভারের হাতে ঘটেছে। যে ড্রাইভারের কোনো লাইসেন্স নাই। গাড়ির ফিটনেস নেই। আপনারা লক্ষ করেন, দূরপাল্লার গাড়িগুলো, দূরপাল্লায় কিন্তু ফিটনেস ছাড়া কোনো গাড়ি নাই। আমাদের লাইসেন্স ছাড়া কোনো ড্রাইভার নাই। প্রত্যেকটা ড্রাইভার দক্ষ ড্রাইভার। কারণ, তাঁরা বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যায়।’
ওই চালক আরো বলেন, ‘দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। দুর্ঘটনার তারতম্য থাকতে পারে। যে ঘটনাটি ঘটেছে আমরাও চাই তার শাস্তি হোক। দেখা গেছে যে, একে পাপ করে দশে পুইড়া মরে। একটা অদক্ষ ড্রাইভার দুর্ঘটনা ঘটাল, এটা কাম্য নয়। কিন্তু তার ঘটনায় আমরাও নির্যাতিত, দায়ভার বহন করতে হয়।’
এই চালক সড়ক পরিবহন আইনের খসড়ায় দুর্ঘটনায় হত্যার দায়ে চালক ও সহকারীর মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবনের যে প্রস্তাব করা হয়েছে সেটি পুনর্বিবেচনার জন্যও সরকারপ্রধানর কাছে দাবি জানান।
এদিকে সকালে রাজধানীর সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে সব বাস কাউন্টার বন্ধ। শত শত যাত্রী সেখানে অপেক্ষা করছেন।
সেখানের পরিবহন শ্রমিকরা জানান, মালিকপক্ষ বৈঠকে বসবে। তারপরই সিদ্ধান্ত আসবে, গাড়ি চরবে নাকি চলবে কি না। রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বের হলে হেনস্থা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এই বাসস্ট্যান্ডে কোনো বাস আসছেও না, যাচ্ছেও না।
এ দিকে রাজধানীর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বাসস্ট্যান্ড গাবতলীতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সকাল ৬টা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন গাড়িতে অভিযান চালাচ্ছেন। রাস্তায় তেমন কোনো গাড়ি না থাকায় সেখানে যানজট অনেকটাই কম।
পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তাঁরা জানতে পেরেছেন, সাভারে শ্রমিকরা কিছু বাস আটকাচ্ছেন। এর ফলে উত্তরবঙ্গ থেকে রাতে ঢাকায় ছেড়ে আসা কিছু গাড়ি ঢুকতে পারছে না।
গত ২৯ জুলাই রাজধানীর কুর্মিটোলার বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের বাসের চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হয়। এ ছাড়া আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন। নিহত শিক্ষার্থীরা হলো শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীব।
এ ঘটনায় নিহত দিয়া খানম মিমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেছেন। মামলা নম্বর ৩৩। এটি একটি হত্যা মামলা।
এরপর গত বুধবার পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নতুন আইন করা হচ্ছে বলে জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। নতুন এ আইনে চালকদের লাইসেন্স, ফিটনেসবিহীন গাড়িসহ নানা নিয়মনীতি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলেও তিনি জানান।
এদিকে খসড়া যে আইনটি প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে ‘দুর্ঘটনার সাজা দণ্ডবিধিতে’ বলা হয়েছে, দুর্ঘটনার জন্য শাস্তি দেওয়া হবে দণ্ডবিধি অনুযায়ী। নরহত্যা হলে ৩০২ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড। হত্যা না হলে ৩০৪ ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে। বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে মৃত্যু ঘটালে ৩০৪(বি) ধারা অনুযায়ী তিন বছরের কারাদণ্ড হবে।