পায়েলকে নদীতে ফেলার পর মিথ্যা বলেন হানিফের লোকজন
বেসরকারি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র সাইদুর রহমান পায়েলকে নদীতে ফেলে হত্যার পরও তাঁর বন্ধুদের কাছে মিথ্যা কথা বলেন হানিফ এন্টারপ্রাইজের বাসচালক, সুপারভাইজার ও সহকারী (হেলপার)।
পায়েল হত্যা নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম। দুপুর ১টার দিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সভাকক্ষে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
পুলিশ সুপার জানান, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বিবিএর পঞ্চম সেমিস্টারের মেধাবী ছাত্র ছিলেন পায়েল। চট্টগ্রামের বাড়িতে ছুটি কাটিয়ে দুই বন্ধু শান্ত ও আদরের সঙ্গে হানিফ এন্টারপ্রাইজের বাসে চড়ে গত ২১ জুলাই শনিবার রাতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন পায়েল। ভোর ৪টার দিকে গজারিয়ার ভাটের চর ব্রিজের কাছে প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে নামেন পায়েল। তখন বন্ধুরা ঘুমিয়ে ছিলেন। কিছুক্ষণ পর ঘুম ভাঙার পর তাঁরা সুপারভাইজার মো. জনির কাছে পায়েলের কথা জানতে চান। পায়েল পরের বাসে আসবে বলে জানান বাসচালক, হেলপার ও সুপারভাইজার। পায়েলের পরিবারের সদস্যরা পরের দিন সকালে তাঁর সন্ধান না পেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
জায়েদুল আলম জানান, ২৩ জুলাই সোমবার সকালে গজারিয়ার ফুলদি নদীতে পায়েলের মরদেহ ভেসে ওঠে। এই ঘটনায় বাসের চালক জামাল হোসেন, হেলপার ফয়সাল ও সুপারভাইজার জনিকে আটক করা হয়। এর মধ্যে সুপারভাইজার জনি গতকাল মুন্সীগঞ্জের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
বেসরকারি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র সাইদুর রহমান পায়েল। ছবি : সংগৃহীত
জবানবন্দিতে জনি বলেন, ভোর রাত ৪টার দিকে হানিফ পরিবহনের বাসটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গজারিয়ার ভাটের চর ব্রিজের কাছে যানজটে পড়ে। পায়েল তখন প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে বাস থেকে নিচে নামেন। হঠাৎ বাসটি চলা শুরু করলে পায়েল দৌড়ে বাসে উঠতে চান। কিন্তু দরজায় বাড়ি খেয়ে নাক, মুখ ফেটে গিয়ে অচেতন হয়ে বাইরে পড়ে যান। তাঁরা পায়েলকে মৃত ভেবে ব্রিজ থেকে নদীতে ফেলে দেন। এরপর ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।
এদিকে পায়েলের মরদেহ উদ্ধারের পর নাক মুখ থেতলানো ও রক্তের চিহ্ন দেখে পায়েলের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করে পুলিশ। পরে ২৪ জুলাই পুলিশের সহযোগিতায় গজারিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন পায়েলের মামা গোলাম সারোয়ার বিপ্লব।
এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বাসের চালক জামাল হোসেন, হেলপার ফয়সাল ও সুপারভাইজার জনিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বেসরকারি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র সাইদুর রহমান পায়েল হত্যার ঘটনায় মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলমের সংবাদ সম্মেলন। ছবি : সংগৃহীত
পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানান, হানিফ পরিবহনের ঢাকা মেট্রো-ব- ৯৬৮৭ নম্বরের সেই বাসটিকে জব্দ এবং হানিফ পরিবহনের মালিকপক্ষকে পায়েল হত্যা মামলায় জড়িত করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুস্তাফিজুর রহমান, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসফাকুর রহমান, গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশিদসহ পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তা।