পল্লী বিদুৎ-বিএমডিএ দ্বন্দ্ব, বিপাকে কৃষক
নওগাঁর মান্দায় বিদ্যুতের সিস্টেম লসের জরিমানার টাকা পরিশোধ না করায় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) অর্ধশতাধিক গভীর নলকূপের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। মান্দা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্তৃপক্ষ গত দুইদিনে এসব নলকূপের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। এ নিয়ে বিএমডিএ ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দ্বন্দ্বে বন্ধ হয়ে গেছে সেচ আর প্রায় ২০ হাজার বিঘা জমির ফসল নিয়ে বিপাকে পড়েছে কৃষকরা।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, বিএমডিএর নিকট গতবছর বোরো মৌসুমে সিস্টেমলসের জরিমানা হিসাবে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ টাকা পাওনা আছে। একাধিকবার চিঠি দেওয়া হলেও এ টাকা পরিশোধ করেনি বিএমডিএ। এ অবস্থায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সংযোগ বিচ্ছিন্ন শুরু করা হয়।
বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের দাবি, জরিমানা মওকুফের জন্য পল্লী বিদ্যুৎকে একাধিকবার পত্র দেওয়া হলেও আবারও তাগাদা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি উল্লেখ করে বিএমডিএ নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবহিত করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় হঠাৎ করেই এ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা পল্লী বিদ্যুতের হটকারী সিদ্ধান্ত বলে দাবি করেছে বিএমডিএ।
বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় আমাদের ৪৮৩টি গভীর নলকূপ রয়েছে। এসব নলকূপে বিদ্যুতের নির্ধারিত পাওয়ার ফ্যাক্টর মান দশমিক ৯৫ ঠিক রাখতে লাগানো রয়েছে ১০ কিলোভোল্ট অ্যাম্পিয়ার রেজিস্টেন্ট (কেভিএআর) ক্যাপাসিটর। বিদ্যুৎ ব্যবহারকালে নির্ধারিত পাওয়ার ফ্যাক্টর মান দশমিক ৯৫-এর নিচে নামলে তা সিস্টেমলসে নিবে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। ক্ষতির এ টাকা তাদের কাছে মাসুল বা জরিমানা হিসেবে দাবি করা হয়েছে। বর্তমানে ১৬৬টি গভীর নলকূপে ত্রুটিযুক্ত ক্যাপাসিটর রয়েছে উল্লেখ করে পল্লী বিদ্যুৎ ছয় লাখ ৪১ হাজার ৫৯৭ টাকা জরিমানা চাপিয়েছে বিএমডিএর ওপর। অনেক নলকূপ পরিমাপ না করেই মনগড়া প্রতিবেদন তৈরি করে পল্লী বিদ্যুৎ তাদের ওপর এ দায় চাপাচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।
বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী আরো জানান, গত ১৮ আগস্ট এ জরিমানার টাকা পরিশোধের তাগাদা দিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ আবারও চিঠি দিলে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। এরপর কোনো কিছু না জানিয়ে হঠাৎ করেই পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ সংযোগ বিচ্ছিন্ন অভিযান শুরু করেছে। এটি তাদের হঠকারী সিদ্ধান্ত ছাড়া আর কিছুই নয় বলে দাবি করেন তিনি।
মান্দা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী ব্যবস্থাপক (এজিএম) ফজলুর রহমান বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘১৬৬টি গভীর নলকূপে ত্রুটিপূর্ণ ক্যাপাসিটর ব্যবহার করা হয়েছে। এ কারণে ২০১৪ সালের এপ্রিল হতে পরবর্তী আট মাসে এসব নলকূপের মাসুল দাঁড়ায় ছয় লাখ ৪১ হাজার ৫৯৭ টাকা। একাধিকবার তাগাদা দেওয়া হলেও বকেয়া বিল পরিশোধ করেনি বিএমডিএ। তাই বাধ্য হয়েই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সংযোগ বিচ্ছিন্ন অভিযান শুরু করা হয়েছে।’
সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ সুবিধা নেন লাল মোহাম্মদ, আহাদ আলী, অখিল চন্দ্র, আহম্মেদ আলী। তাঁরা জানান, প্রতি মৌসুমে রিচার্জ কার্ডের মাধ্যমে তারা জমিতে সেচ কাজ করে থাকেন। তাদের কাছে কোনো পাওনা নেই সংশ্লিষ্ট এ দুই দপ্তরের। কিন্তু হঠাৎ করেই পল্লী বিদ্যুৎ গভীর নলকূপগুলোর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় তারা চলতি মৌসুমে আমনে সেচ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। কৃষকরা বলছেন, দুই দপ্তরের দ্বন্দ্বের কারণে তারাই এখন বলির পাঠায় পরিণত হয়েছেন। কৃষক ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা এসব গভীর নলকূপে ২০ হাজার বিঘার আমনে সেচ চলছিল।