নবজাতকের মৃত্যু, তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রোগীকে তাড়িয়ে দেওয়ার পর হাসপাতালের বাইরে নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
গত ৯ মে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় ওই ঘটনা ঘটে। অভিযোগ উঠে প্রসূতিকে চিকিৎসাসেবা না দিয়েই বের করে দেন চিকিৎসক ও নার্স। পরে তিনি হাসপাতালের বাইরে সন্তান প্রসব করেন। তবে জন্মের কিছুক্ষণ পরই নবজাতকটি মারা যায়।
আগামী ১ আগস্ট স্বাস্থ্যসচিবকে ওই প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া অভিযুক্ত চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মামুন ও নার্স ছায়া চৌধুরীকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ বুধবার বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরশেদ। অন্যদিকে, লোহাগাড়ার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মামুনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান ও নার্স ছায়া চৌধুরীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. আমিরুল হক।
আইনজীবী মনজিল মোরশেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত ৯ মে প্রসব ব্যথা নিয়ে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামের লোহাগাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান পুঁটিবিলা গৌড়স্থান এলাকার দিনমজুর মহররম মিয়ার স্ত্রী মরিয়ম বেগম। কিন্তু দায়িত্বরত চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুন ও নার্স ছায়া চৌধুরী চিকিৎসা না দিয়ে মরিয়ম বেগমকে বের করে দেন। পরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাইরে সন্তান প্রসব করার কিছুক্ষণের মধ্যেই নবজাতকের মৃত্যু হয়। এরপর ঘটনাটি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়।’
প্রকাশিত ওই সব প্রতিবেদন যুক্ত করে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে রিট করেন আইনজীবী মো. ছারওয়ার আহাদ চৌধুরী।
মনজিল মোরশেদ আরো জানান, ওই ঘটনা তদন্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন প্রতিনিধি, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন, লোহাগাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের একজন অধ্যাপককে নিয়ে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে তাঁদের ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি তদন্তকালে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও নার্সের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু ২৫ জুলাই ওই প্রতিবেদন আদালতে না এলে পুনরায় প্রতিবেদন দাখিলে সময় দেন হাইকোর্ট।
গত ১১ জুন আদালত ওই রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করে ঘটনার ব্যাখ্যা জানতে লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মামুন ও নার্স ছায়া চৌধুরীকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। এর পরিপ্রেক্ষিতে তারা হাজির হয়ে গত ৮ জুলাই আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে ব্যাখ্যা দাখিল করেন।
এ ছাড়া ভুক্তভোগী মরিয়ম বেগমকে চিকিৎসা দিতে হাসপাতালের ব্যর্থতা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি নবজাতকের জীবন রক্ষায় হাসপাতালের ব্যর্থতা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও নার্সদেরকে মৃত নবজাতকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছিল।
আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারি এবং সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট মোট ৯ জনকে এ রুলের জবাব দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।