গজারিয়ায় প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধীতা করে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে কৃষক ও গ্রামবাসী।
আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গজারিয়া থেকে ট্রলারে করে মুন্সীগঞ্জে এসে এ বিক্ষোভ মিছিল করে এলাকাবাসী।
সম্প্রতি উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নে ৩৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর বিরোধীতা করে বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদে নামে গজারিয়া উপজেলাবাসী।
গজারিয়ার তিন ফসলি জমি রক্ষা কমিটির উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। এটি মুন্সীগঞ্জ শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।
এতে অংশ নেয় গজারিয়ার উপজেলার ষোলআনী, দৌলতপুর, মল্লিকেরচর, বাঘাইকান্দি, কালিপুরা, রসুলপুর ও জাপটা এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দা।
বিক্ষোভ মিছিল শেষে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মহিউদ্দিনের কাছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ না করার জন্য তাঁর সহযোগিতা চেয়ে একটি লিখিত আবেদন করা হয়। পরে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দিলে বিক্ষোভকারীরা সরে যান।
বিক্ষোভে অংশ নেন তিন ফসলি জমি রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক এ এফ এম আবু তাহের, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শফিউল্লাহ দেওয়ান, মো. আবদুল গাফফার মেম্বার, জেলা পরিষদের সদস্য সাইদুর রহমান, সদস্য আলী আজগর সরকার, মনসুর আহম্মেদ খান জিতু, মোহাম্মদ হোসেন দর্জি।
তিন ফসলি জমি রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক কে এইচ এম আবু তাহের বলেন, তিন ফসলি জমিতে কোনোভাবেই কয়লাভিত্তিক তাপ-বিদ্যুৎপ্রকল্প নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না। একটি মহল সরকারকে ভুল বুঝিয়ে কৃষকের জমিগুলো নিতে পায়তারা করছে। এখানে কয়লাভিত্তিক তাপ-বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ হলে পরিবেশের বিপর্যয় দেখা দিবে। শত শত কৃষক বেকার হয়ে যাবে। আমরা উচ্চ মূল্যে জমি কাউকে দিতে চাই না। আমরা আমাদের কৃষি জমি রক্ষা করতে চাই বিদ্যুৎকেন্দ্র চাই না। জান দেব, তবু বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে দেব না।
এ বিষয়ে গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাসমিন জেবীন বিনতে শেখ বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের জন্য এরই মধ্যে ৯০ ভাগ জমি অধিগ্রহণ হয়ে গেছে। এ প্রকল্পের জন্য প্রথমে ৩০০ একর জমি অধিগ্রহণ করার কথা থাকলে স্থানীয়দের আপত্তির মুখে সরকার ১০০ একর বাদ দিয়ে ২০০ একর জমি অধিগ্রহণ করে।
ইউএনও বলেন, স্থানীয় কৃষকদের কথা হচ্ছে এখানে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎপ্রকল্প নির্মাণ করা হলে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটবে। তাদের কথা মেনে নিয়ে সরকার কয়লা বাদ দিয়ে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎপ্রকল্প নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। অনেকে বিষয়টি ভালোভাবে না বুঝেই আন্দোলন করছে। আবার কেউ কেউ জমি অধিগ্রহণের টাকাও তুলে নিয়ে গেছে।
তাসমিন জেবীন আরো বলেন, যারা আন্দোলন, মিছিল করছে তারা কারা? আবার যারা মদদ দিচ্ছে তাঁদের এখানে কোনো জমিও নেই। একটি মহল সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে বাঁধাগ্রস্ত করতে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে দিতে চাচ্ছে না।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়াতে সরকার বেশ কয়েকটি কয়লাভিত্তিক তাপ-বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম ইমামপুর ইউনিয়নের ষোলআনী মৌজায় ৩১৪ একর জমির ওপর ৩৫০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্র । প্রকল্পটির জন্য একনেকে ৫০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়।
গজারিয়ায় কয়লাভিত্তিক তাপ-বিদ্যুৎপ্রকল্প নির্মাণের প্রতিবাদ করে প্রথমে আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলন জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি আলহাজ কলিম উল্লাহ। তিনি মারা গেলে তিন ফসলি জমি রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক কে এইচ এম আবু তাহের এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।